মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


নেক আমলের অভ্যাস গড়ে তুলুন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি আহসান শরিফ

বিরত থাকার নাম সিয়াম। কেবল খানা পানাহার, কিংবা স্ত্রি সহবাস থেকে বিরত থাকাই সিয়ামের যতার্থ অর্থ বহন করে না। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে খানা, পান করা, স্ত্রি সহবাস, মিথ্যা কথা, কাজ, অপ্রয়োজনীয় কথা, কাজ, গীবত, পরচর্চা এবং সব রকম গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার নামই তো সিয়াম। একজন রোজাদার এগুলো থেকে যেমন বেঁচে থাকবে তেমনই ঝগড়া বিবাদ, হারাম, সুদ, ঘুষ, অপচয় ও অপরাধমূলক কাজ থেকে বেঁচে থাকবে। কেউ গালি দিলেও তাকে গালি দেবে না। কেউ ঝগড়ায় ঝড়াতে চাইলে বিরত থাকবে। মারলেও তাকে মারবে না। পরিস্কার জানিয়ে দেবে; ভাই, আমি রোজাদার। কোনরকম ঝগড়া, গালিগালাজ কিংবা অপরাধমূলক কাজ আমি করতে চাই না, দয়া করে বিরত থাকুন।

এভাবে পূর্ণ একটি মাস রোজাদার ব্যক্তির জন্য আল্লাহর বিধানকে প্রাধান্য দিয়ে; খাহেশ, মনচায় যিন্দেগী এবং শয়তানের প্ররোচনা ও ইচ্ছেকে পরাভুত করার অভ্যাস গড়ে তোলাই রোজার দাবি এবং একান্ত আবেদন।

মহান আল্লাহর স্মরণে পুরো সময় কাটাবে রোজাদার। দুনিয়ার সব কিছু থেকে আল্লাহর বিধানকে বড় করে দেখার অভ্যাস গড়ে তুলবে। আল্লাহর বিধান পালনে অভ্যস্ত হবে। দুনিয়ার কোন কিছু প্রাপ্তির আকাঙ্খা ছাড়াই অনাহার এবং পিপাশার্ত থাকবে। বৈধ যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকবে। নির্ঘুম থাকবে বরকতময় রাতে সাহরির অপেক্ষায়। আল্লাহর ভয়ে চোখ, কান, হাত, পা গুনাহ মুক্ত রাখবে। জান্নাত প্রাপ্তির তীব্র আশায় প্রহর গুনবে। তখন নিশ্চিত ঐ রোজাদার মানুষটির ভেতরের মন্দ স্বভাবগুলো দূর হবে। তার হৃদয়ে আল্লাহর অকৃত্রিম ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। যে ভালোবাসা ভালো মন্দ, হালাল হারাম, জায়েজ নাজায়েজ পার্থক্য করে চলতে বাধ্য করবে।

এই অভ্যাস প্রতিনিয়ত আচরণজাত স্বভাবে পরিণত হবে কেবল পানাহার বর্জনের মাধ্যমে নয়, বরং হালাল উপার্জন, হালাল খাবার এবং হাত, পা, চোখ কানের সবরকম গুনাহ বর্জন ও পরিত্যাগের মাধ্যমে। হজরত আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেবল পানাহার বর্জন করাকেই সিয়াম বলে না, বরং অপ্রয়োজনীয় কথা, কাজ এবং সবরকম গুনাহ থেকে বিরত থাকাকেই সিয়াম বলে।

ঝগড়া বিবাদে না জড়ানোর ব্যাপারে তিরমিজি শরিফে একটি হাদিস রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের সিয়াম পালনকারীর উচিৎ গুনাহ এবং অজ্ঞতার কাজ থেকে বিরত থাকা। কেউ তাকে গালি দিলে কিংবা তার সঙ্গে ঝগড়ায় জড়াতে চাইলে তার উচিৎ বলে দেয়া, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার। এসব আমার সঙ্গে করবে না বা আমি এর সঙ্গে জড়াতে পারবো না। প্লীজ। প্লীজ আমাকে বিরক্ত করবেন না।

মিথ্যাবাদীকে তিরস্কার করেছেন নবীজী। বুখারি শরিফে একটি হাদিস রয়েছে। হজরত আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা বলা বা তার ওপর আমল করা ছাড়ল না, আল্লাহ তায়ালার জন্য ঐ ব্যক্তির পানাহার বর্জন করার কোন প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ সে কোন সওয়াব পাবে না।

অন্য হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বহু রোজাদার এমন আছে রোজায় যাদের কেবল অনাহার এবং পিপাশার্তই থাকা হয়। বহু রাত জেগে ইবাদতকারী এমন রয়েছে, যাদের কেবল রাত জাগাই হয়। অর্থাৎ রোজা এবং কিয়ামুল লাইলের কোন সওয়াব অর্জন হয় না।

এরকম বহু হাদিস রয়েছে। মূলত রোজার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে পাপ বর্জন করে নেকি অর্জনের অভ্যাস গড়ে তোলা। দীর্ঘ এক মাস এভাবে অভ্যাস করলে মুসলমানের পুরো জীবন ভালভাবে কাটানো সম্ভব হবে। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমোদিত হালাল খাবারই সে গ্রহণ করবে এবং হালাল পানীয়ই পান করবে। হারাম খাবার বা পানীয় কোনভাবেই সে গ্রহণ করবে না। চোখ, কান, ভাষা আল্লাহর পক্ষ থেকে ব্যবহারের নির্দেশনা অনুযায়ী তা ব্যবহার হবে। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

লেখক: প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল বালাগ ঢাকা ঝাউচর বাজার, পশ্চিম হাজারীবাগ, ঢাকা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ