মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


অপরাধ প্রবণতা দূর হোক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি হাফেজ আহসান শরিফ।।

হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। [সুরা বাকারা : ১৮৩]

প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ, সবল, জ্ঞানসম্পন্ন, মুসাফির নয়, রমজানের চাঁদ ওঠার ব্যাপারে অবগত হতে সক্ষম এমন সব নারী পুরুষের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে। কেবল উম্মতে মুহাম্মদির ওপর রোজা ফরজ এমনটি নয়, বরং এটি আগেকার উম্মতের ওপরও ফরজ ছিল। কুরআনে কারিম বিষয়টিকে স্পষ্ট করে দিয়েছে। হাদিসে এর বিস্তারিত বিবরণ এসেছে।

হজরত মুসা আলাইহিসসালাম তুর পাহাড়ে অবস্থানকালে ৪০ দিন রোজা রেখেছিলেন। এ সুবাধে বণি ইসরাইলের ওপর চল্লিশ দিন রোজা ফরজ হয়।

হজরত ঈসা আলাইহিসসালাম ময়দানে অবস্থানকালে চল্লিশ দিন রোজা রেখেছিলেন। হজরত ইয়াহইয়া আলাইহিসসালাম রোজা রাখতেন। তার উম্মতও রোজা রাখত। যুগে যুগে যারাই আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে, মহান আল্লাহকে প্রভু হিসেবে মেনেছে, সবাই রোজা রাখত। এমনকি হিন্দুধর্মেও উপবাস থাকার প্রচলন রয়েছে।

রোজার কী উদ্দেশ্য? অনাহারে রেখে, পিপাশিত রেখে, বৈধ যৌবনিক চাহিদা মেটাতে নিষেধ করে মানুষকে কষ্ট দেয়াই কি রোজার উদ্দেশ্য? না, মানুষকে কষ্ট দেয়া, ক্ষতিগ্রস্ত করা বা বিপদে ফেলা আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়। হতে পারে না। তিনি রহমান। দয়াময়। দয়াপরবশ। মানুষের কল্যাণের জন্যই রোজার বিধান রেখেছেন। মানুষের ভেতরকার লিপ্সা, অভদ্রতা, হিংস্রতা, নিয়ন্ত্রণহিনতা, অপরাধপ্রবণতা ও পশুত্বশুলভ আচরণ দূর করে, পরোপকার, মানবদরদী, গরিবদরদী ও মানবিক গুণ সৃষ্টি করা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধি করাই আল্লাহর উদ্দেশ্য। সর্বোপরি মানুষের ভেতরে খোদাভিতি ও তাকওয়া অর্জনই রোজার মূল উদ্দেশ্য। কুপ্রবৃত্তি যেন মানুষের ওপর প্রাধান্য বিস্তার না করে, বরং মানুষই যেন কুপ্রবৃত্তির ওপর প্রাধান্য লাভ করে। কুপ্রবৃত্তি দমন করতে সক্ষম হয়। এতে একজন মানুষ হবে আদর্শ মানুষ। সৎ। মহৎ ও সৃষ্টির সেরা জীব।

রোজার ফজিলত সম্পর্কে হজরত সাহল ইবনে সাদ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জান্নাতের একটি দরজার নাম ‘রাইয়্যান’ অর্থাৎ পরিতৃপ্ত। কেয়ামতের দিন কেবল রোজাদাররাই সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [দুনিয়াতে রোজা রেখে খানা পানাহান না করে যে অতৃপ্ত ছিল, তার বদলা হিসেবে জান্নাতে গিয়ে তৃপ্ত হবে] তাদের সঙ্গে আর কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেখানে তাদের ডাকা হবে, ঐসব বান্দারা কোথায়, যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছে। তখন রোজাদাররা দৌড়ে প্রবেশ করবে। রোজাদারদের প্রবেশ শেষে ঐ দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। [বুখারি, মুসলিম]

আফসোস, সামার্থ থাকা স্বত্বেও, রোজা ফরজ এমন নর-নারীর অনেকে রোজা রাখে না। এমনকি কেউ কেউ তো প্রকাশ্যে, মানুষের সামনে ঊদ্ধতঃ আচরণ করে। নির্লজ্জ আচরণ করে। আল্লাহর সঙ্গে নাফরমানি করে। যেভাবে আল্লাহর আজাব আসছে, করোনায় মানুষের মৃত্যুর যে আধিক্যতা, ঘরে ঘরে কোলহ, মানুষ খুন হওয়া, সাংসারিক অশান্তি, এখনই সাবধান হওয়া দরকার। আল্লাহর অনুগত হওয়া দরকার। ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া দরকার। রমজানের অপার কল্যাণে নিজেকে সংশোধন করা দরকার। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়ে বলেছেন, যে রমজান পেল, অথচ নিজের গুনাহ ক্ষমা করাতে পারলো না, সে ধ্বংশ হোক। নাউযুবিল্লাহ।

মালিক, রমজানের রহমতের দশকে আজ দ্বিতীয় দিন। আমরা বড় অসহায়। দুর্বল। জানি না, তোমার কল্যাণ অর্জন করতে পারি কিনা। রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফিরাত লাভে ধন্য হতে পারি কিনা। তুমি তো রহমান। দয়াময়। তোমার রহমতও অসীম। তোমার করুণার কোন সীমা নেই। আমাদেরকে তোমার প্রিয় বান্দাদের সঙ্গে মিলিয়ে নাও। কারীম, অপরাধপ্রবণতা ছেড়ে তোমার ইবাদতে অভ্যস্ত হতে সাহায্য করো !

লেখক: প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতুল বালাগ ঢাকা ঝাউচর বাজার, পশ্চিম হাজারীবাগ, ঢাকা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ