মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


দাওয়াতি বিষয়ে সিলেবাস বা শিক্ষা কারিকুলাম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা কালিম সিদ্দিকি।।
অনুবাদক: শরীফ আব্দুল্লাহ

মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানি এর নির্দেশে আমি হায়দারাবাদ আল মাহাদুল উলুমে যাই। তিনি আমার কামরায় আগমন করে বলেন, হায়দারাবাদের কিছু সম্মানিত উলামায়ে কেরাম এসেছেন। তারা আপনার সাক্ষাৎপ্রার্থী।

আমি অধম আরজ করলাম, এই গুনাহগারের জন্য উলামায়ে কেরামের সাক্ষাৎ বড় সৌভাগ্যের বিষয়। সে সময় বিশিষ্ট কিছু আলেম আসেন আমার কাছে। হায়দারাবাদের বড়ই মাকবুল এবং বিশেষ একজন আলেম মাওলানা রেজওয়ানুল কাসেমিও এসেছিলেন। উলামায়ে কেরাম কথা বলার জন্য এই মাওলানাকে দায়িত্ব অর্পন করেন।

তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন, আপনি পাঁচ বছর পূর্বে তিন বছর ধারাবাহিক সফর করে আলেম এবং মাদ্রাসার দায়িত্বশীলদেরকে দ্বীনের দাওয়াতি কাজের দিকে মনোনিবেশ করেছেন। আর তখন আমরা মাদ্রাসা ‘সাবিলুস সালাম ও দারুল উলুম হায়দারাবাদে’ দাওয়াতি শাখার ক্লাশ খোলি। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের নিকট মাদ্রাসায় বিভিন্ন বিষয়ের উপর ডিগ্রী নেওয়ার জন্য বিন্যস্ত সিলেবাস বা শিক্ষা কারিকুলাম আছে।

তাফসির, হাদিস, ফিকাহ, আদব ও ইত্যাদির উপর এমন বিন্যস্ত সিলেবাস বিদ্যমান আছে, যা আমরা পড়িয়ে যাচ্ছি। আপনার বলার কারণে আমরা দাওয়াতি বিভাগ খুলেছি। কিন্তু দাওয়াতি বিষয়ে পড়ানোর জন্য আমাদের কাছে বিন্যস্ত সুন্দর কোন সিলেবাস নেই। তাহলে আমরা কী পড়াবো? আরমোগানে প্রকাশিত সংখ্যায় ধারাবহিক দাওয়াতি বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখাগুলো উৎসাহমূলক কাজ করে থাকে।

কিন্তু সে গুলো তো আর পড়াবার জন্য কোন নেসাবের অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। আপনি বলুন, এখন আমরা কী করতে পারি? ঐ সময় তাৎক্ষণিক একটি কথা আমার মাথায় আসে, তা আমি উলামাদের সামনে পেশ করি যে, দাওয়াতের জন্য আলাদা নেসাবের কী প্রয়োজন? কুরআন এবং সিরাতে নববিই তো দাওয়াতের পূর্ণাঙ্গ নেসাব। সুতরাং কুরআন ও সিরাতকে দাওয়াতি দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে আমরা পড়াবো। উত্তর দিয়ে আমি মনের দিক থেকে প্রশান্তি অনুভব করি যে, কী সুন্দর উত্তর আল্লাহ তায়ালা আমার অন্তরে ঢেলে দিয়েছেন।

কিন্তু যখন রাতে ঘুমুতে যাই, তখন আমার মাথায় এই উত্তরের ত্রæটির বিষয়ে চিন্তা এলো যে, কুরআন আর সিরাতে নববি তো আমাদের সকল দ্বীনি বিষয়ের নেসাব। যদি আমরা তাফসির পড়াই, তাহলে কুরআন এবং সুন্নাহ থেকেই তো পড়াবো। আর যদি হাদিসের তাখাসসুস করাই তাহলে তাহলেও তো কুরআন ও সুন্নাহ থেকেই পড়াবো। ফেকাহ, ফতোয়া এবং তার নিয়ম কানুনও তো কুরআন ও সুন্নাহ থেকেই অনুসন্ধান করেই আমরা পড়াবো। এমনকি আরবি সাহিত্যও আমরা কুরআনের নীতিমালার বাহিরে আমরা আর কোথা থেকে পড়াই?

আমি আমার কর্মস্থলে চলে আসি। তারপর থেকে আজ পর্যবন্ত অন্তরে আর মস্তিস্কে সেই বিষয়টির প্রভাবক্রিয়া কাজ করছে। আমাদের কতো বড় ত্রæটি যে, আমাদের আলেমগণ শাস্ত্র হিসাবে পুরো দ্বীন পড়াচ্ছেন। কিন্তু তাদের নিকট দাওয়াতের লিখিত বিন্যস্ত কোন নেসাব বিদ্যমান নেই। এই বিষয়টি কেমন যেনো এমন হলো যে, একজন কলেজের প্রিন্সিপালের নিকট কলেজে পড়ানোর সিলেবাস বিদ্যমান নেই। মেডিকেল কলেজে মেডিকেল সাইন্স পড়ানোর সিলেবাস তাদের নিকট বিদ্যমান নেই।

অর্থাৎ চিকিৎসকদের নিকট চিকিৎসার সরঞ্জামাদি ও বিষয়বস্তুর কিছুই বিদ্যমান নেই। মোটা জ্ঞানী ব্যক্তিও তো এ কথা বুঝতে পারে যে, এই উম্মতকে খতমে নবুওয়াতের উপহার দিয়ে তাদেরকে নবুওয়াতি দায়িত্বের জায়গা অর্পন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে তাদেরকে সম্মানের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।

আর এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তারা কেয়ামত পর্যন্ত উঁচু মর্যাদার অধিকারী হতে পারে। তো, এই উলামায়ে কেরাম, শিক্ষানবিশ ছাত্র জনতা, যাদের শিক্ষাদানের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর হাজারো বিষয়ের উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু তাদের উপর অর্পিত ফরজ দায়িত্ব পালনের জন্য দাওয়াতের বিন্যস্ত কোন সিলেবাস তৈরির চিন্তা মাথায় আসেনি। তাহলে এই উম্মত শ্রেষ্ঠ নবির শ্রেষ্ঠত্বের আসনে কী বসার অধিকার রাখে?

ইমাম মালেক রহ. এর প্রসিদ্ধ উক্তি হলো, এই উম্মতের পরবর্তী প্রজন্ম সেই পথেই সফলতা পাবে, যে পথে চলে তার পূর্ববর্তীরা সফলতা পেয়েছে।’ পূর্ববর্তী শ্রেষ্ঠ নবির সাহাবাগণ, তারা শুরুর দিকে উট বা বকরি চড়ানো ওয়ালা গ্রাম্য লোক ছিলেন। আর তারাই কুরআনের সঠিক শিক্ষা লাভের কারণে আরব-অনারব, পারস্য-রুমের শাসন করেছেন। তারা তো কুরআনকে দাওয়াতের নেসাব ও হেদায়েতের নেসাব বানিয়ে নিজে শিক্ষালাভ করে অপরের কাছেন পৌঁছে দিয়েছেন।

তাদের মাদ্রাসা তো ছিলো দারে আরকাম, দারে আবি আইয়ুব আন সারি অথবা সুফফায়ে নববি। শুধু পড়ানোর ক্ষেত্রেই তাদের কার্যক্রম কেবল সীমাবদ্ধ ছিলো না, বরং তারা কুরআনের প্রত্যেক শব্দ বা প্রত্যেক লাইনকে উম্মতের হেদায়েত ও দাওয়াতের নেসাব মনে করে পড়াতেন। বরং ঘরের মা বোনেরা নিজেদের বাচ্চাদের দুধ পান করানো বা খাবার খাওয়ানোর সময় এটা ভাবতেন যে, এই খানা দ্বারা সে দ্বীনের ইলম শিখবে। তারপর সে দ্বীনের দায়ি হয়ে আল্লাহর কালিমা বুলন্দির উদ্দেশ্যে মানুষের কাছে দ্বীনের বাণী ছাড়িয়ে দেবার কাজ করবে।

কিন্তু আফসোস! আমাদের এই যুগে শ্রেষ্ঠ উম্মতের শিক্ষক ও দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলগণ নিজেদের ফরজ দায়িত্বকে এই পরিমাণ গুরুত্বের চোখে দেখে থাকে যে, তার আবশ্যিক ফরজ নেসাব বানানোর চিন্তাও তাদের মাথায় আসে না।

হায়! আমরা যদি আমাদের দায়িত্বের ব্যাপারে আরেকটু সচেতনতা অবলম্বন করতে পারতাম, তাহলে কতই না ভালো হতো!

সূত্র: আরমোগান বাংলা

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ