মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


রমজানের আগেই নিন রমজানের প্রস্তুতি!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইসমাঈল হাবীব।

রমজান সুন্দরভাবে পালনের জন্য দুই মাস আগ থেকেই এর প্রস্তুতিপর্ব শুরু হয়ে যায়।রজব ও শাবান এই দুই মাস রমজানের প্রস্তুতির মাস। রমজান যতই ঘনিয়ে আসতো, রমজানকে ঘিরে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্তুতি ততই বেড়ে যেত এবং তিনি সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহুমকেও রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিতেন।

শবে বরাত অর্থাৎ 'নিছফে শাবান' থেকে সাহাবায়ে কেরামের কাজকর্ম ও আমলে রমজানের পূর্ণ আমেজ এসে যেত।

নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের দুই মাস আগ থেকেই রমজানের প্রাপ্তি লাভের আশায় এই উল্লেখিত দুআ' মুখে জপতে থাকতেন। (আল্লাহুমা বারিক লানা ফী রজবা ও শা'বান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান) হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রজব মাস আসত, তখন থেকে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোল্লিখ দুআ পড়তেন।

শা'বান মাস রমজানের বার্তা নিয়ে আগমণ করে। কাজেই এ মাসে রমজানের সর্বোচ্চ প্রস্তুতির মাস হিসেবে কাজে লাগানোর সময়।রমজানের কখন কবে থেকে শুরু হচ্ছে তা বোঝার জন্য শা'বান মাসের হিসাব রাখার কোন বিকল্প নেই। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এ মাসে খুব সর্তকতার সাথে চাঁদের হিসাব রাখতেন। এ মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসের এভাবে হিসাব রাখতেন না, অন্যদেরকেও এ ব্যপারে উৎসাহিত করতেন।

আরেক হাদীসে আছে, হযরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসের খুব হিসাব করতেন। এ ছাড়া অন্য কোনো মাস এত বেশি হিসাব করতেন না। অতঃপর রমজানের চাঁদ দেখতেন, তখন রোযা রাখতেন। আকাশ মেঘলার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে শাবান মাস ত্রিশ দিনে গণনা করতেন, অতঃপর রোযা রাখতেন।
(সুনানে আবু দাউদ— হাদীস নং ২৩২৭)

রমজান সম্পর্কে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদকে খুব হিসাব করো।এবং তিনি রমজান মাসের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান থেকেই খুব পরিমাণে রোযা রাখতেন হযরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাগাতার রোযা রাখতেন, আমরা বলতাম, তিনি আর রোযা ছাড়বেন না।আবার তিনি এভাবে রোযা ছাড়তেন, আমরা বলতাম, তিনি আর রোযা রাখবে না। আমি রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান ছাড়া কোনো পুরো মাসের রোযা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে কোনো মাসে বেশি রোযা পালন করতে দেখিনি। (বুখারি—হাদীস নং১৮৬৮; ও মুসলিম শরীফ —হাদীস নং ২৭৭৭)

রমজানের দুই—একদিন আগে রোযা না রাখা;— রমজানের প্রস্তুতির মধ্যে এটিও একটি বিষয় যে, রমজানের মর্যাদা রক্ষায় তার দুই একদিন আগে রোযা না রাখা। কেননা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের দুই একদিন আগে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। তবে যদি কেউ আগে থেকে সব মাসের শেষের দুই একদিন রোযা রাখতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে তার ব্যাপারটি আলাদা।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; তোমাদের কেউ যেন রমজানের একদিন কিংবা দুইদিন আগে অবশ্যই রোযা না রাখে। তবে হ্যাঁ কারও (আগে থেকেই) এদিনে রোযা রাখার নিয়ম চলে এসে থাকলে সে ওই দিনেও রোযা রাখতে পারে।তাতে কোনো সমস্যা নেই (বুখারি— হাদীস নং ১৮১৫; মুসলিম হাদীস নং ২৫৭০)

এমনকি ইয়ামুক শাক তথা সন্দেহের দিনও রোযা রাখা যাবে না। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার দরুন শাবানের ২৯ তারিক রাতে চাঁদ দেখা না গেলে পরের দিনকে 'ইয়াওমুক শাক' বা সন্দেহের দিন বলা হয়। কারণ, সেদিন শাবান মাসের ৩০ তারিখ বা রমজানের ১ তারিখ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। হাদীসের ভাষ্যমতে সন্দেহর দিন রোযা রাখা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাফরমানির শামিল।

রমজানের মাসের জন্য ব্যক্তিগত প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা: রমজান একটি বরকতপূর্ণ মাস। একজন মুমিনের চাওয়া-পাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো রমজান।জীবনে আমূল পরিবর্তনের এক বিরাট সুযোগ হিসেবেই প্রতিবার রমজানের আগমণ ঘটে। সুতরাং কেউ যদি গতানুগতিক অন্যান্য মাসের ন্যায় এই মাসকে কাটিয়ে দেয়, তাহলে তার মতো বোকামি কাজ আর হতে পারে না।
কাজেই আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্যের মাঝে রমজানের যাপিত দিনরাত কাটিয়ে দেয়া একজন মুমিনের অবশ্য কর্তব্য। অন্যান্য মাসের মতো হেলায় খেলায় কাটিয়ে দেওয়া সমীচীন নয়।

এ মাসে অন্যায়—বেহুদা কাজকর্মে ডুবে না থেকে মসজিদ কিংবা ইবাদতে বেশি বেশি সময় কাটানো।সেজন্য আমাদের উচিত ইবাদত সংক্রান্ত বিষয়াবলি রমজান আসার পূর্বেই আলেমদের থেকে জেনে নেয়া। সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ইরশাদ করেন ; 'সুতরাং যদি তোমরা (দ্বীনের হুকুম আহকাম) সঠিকভাবে না জেনে থাকো, তাহলে জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞেস করো'
(সূরা আম্বিয়া, আয়াত—৭)

রমজানের প্রস্তুতি নিজে নেয়ার সাথে সাথে পরিবারকেও এ ব্যাপারে আদেশ করা। রমজান মাস কুরআন নাজিলের মাস, পরিবারের কেউ যদি কুরআন ও ইসলামি হুকুম সম্পর্কে না জেনে থাকে, তাহলে তাদেরকে কুরআন ও দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় শেখানো। এবং নিজে অশ্লীল কর্ম থেকে বাঁচার সাথে সাথে তাদেরকেও অনুরূপ করতে বলা।আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে পবিত্র মাহে রমজান আসার পূর্বে তার সকল প্রস্তুতি নেওয়ার তাওফীক দান করুন—আমীন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ