শায়খ মাহমুদুল হাসান।।
সায়ীদ বিন মুসাইয়াবের সঙ্গে হযরত আবু হুরাইরা রা.-এর একবার দেখা হলো। আবু হুরাইরা রা. বললেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, তিনি যেন আমাদেরকে জান্নাতের বাজারে সমবেত করেন।
হযরত সায়ীদ রহ. বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, জান্নাতেও কি আবার বাজার হবে? হ্যাঁ। আমাকে রাসুলুল্লহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়েছেন, জান্নাতবাসীরা যখন তাদের আমলের কল্যাণে জান্নাতে প্রবেশ করবে, দুনিয়ার গণনা হিসাবে, জুমার দিন তাদের মাঝে একটি ঘোষণা প্রচারিত হবে।
তখন সকলে আল্লাহর সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বের হবে। আল্লাহর সুমহান সিংহাসন প্রকাশিত হবে। জান্নাতের কোনো এক উদ্যানে আল্লাহ জান্নাতবাসীর সম্মুখে হাজির হবেন, তাদেরকে দেখা দিবেন। আর জান্নাতবাসীর জন্য সেখানে মিম্বরের মতো আসন তৈরি করা হবে। কোনো আসন হবে নূরের, কোনো আসন হবে মুক্তার, কোনো আসন হবে হীরার। আবার কোনোটি আসন হবে পান্নার, কোনোটি হবে স্বর্ণের, কোনোটি হবে রূপার। তাদের সর্ব নিম্ম স্তরের ব্যক্তিটি বসবে মিশক ও কাফূরের সৌরভমাখা আসনে। তবে কেউই নিজেদের আসনের চেয়ে অন্য কারো আসনকে উন্নত মনে করবে না। প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে। (কারণ নিজেদেরকে অন্যের চেয়ে ছোট পদের অধিকারী মনে হলে কষ্ট অনুভব হয়। অথচ জান্নাতে কোনো কষ্টেরই স্পর্শ নেই।)
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, -আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি আমাদের রাব্বকে দেখতে পাবো?
জবাবে তিনি বললেন, -সূর্য-দর্শন এবং পূর্ণিমার রাতে চন্দ্র-দর্শন সম্পর্কে কি তোমরা সন্দেহ পোষণ কর?
-না।
-অনুরূপ তোমাদের রাব্বের দর্শন সম্পর্কেও তোমাদের কোনো সন্দেহ হবে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতবাসীদের সে সমাবেশ সম্পর্কে আরো বলেন, সে সমাবেশে প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গেই মহান রাব্ব সরাসরি কথা বলবেন। কোনো এক ব্যক্তিকে তিনি বলবেন :
-ওহে, তোমার কি মনে পড়ে তুমি একদিন এ এ কাজ করেছিলে? তিনি তাকে তার বিভিন্ন অপরাধের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন।
লোকটি উত্তরে বলবে, রাব্বী, আপনি কি তা ক্ষমা করে দেননি?
আল্লাহ বলবেন, হ্যাঁ, তা তো বটেই! আমার ক্ষমার কারণেই তো তুমি আজ এ স্থানে পৌঁছেছ। তারা সকলে এ ধরনের আলাপচারিতায় থাকবে, এমন মুহূর্তে এক খন্ড মেঘ তাদের ঘিরে ধরবে। যা তাদের ওপর সুগন্ধি বর্ষণ করবে। এমন সুঘ্রাণ তারা আগে কখনো পায়নি।
তারপর আল্লাহ বলবেন, যাও, তোমাদের সম্মানে যা প্রস্তুত করেছি সেখানে যাও এবং সেখান থেকে যা ইচ্ছা নিয়ে যাও। তখন আমরা একটা বাজারে যাব, যেটি ফেরেশতারা ঘিরে রেখেছে। সেটি এমন বাজার; কোনো চোখ তা দেখেনি, কোনো কান তার বিবরণ শুনেনি এবং কোনো মন তার কল্পনাও করতে পারেনি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সেখানে আমাদের চাহিদা মতে যা যা লাগে আমাদেরকে দেয়া হবে। কোনো বেচাকেনা থাকবে না সেখানে। সে বাজারে জান্নাতবাসীদের পরস্পর দেখা হবে। জান্নাতের উঁচু শ্রেণীর লোকদেরকে যখন সাধারণ শ্রেণীর জান্নাবাসীরা দেখবে, তাদের উন্নত চকচকে লেবাস-পোষাক দেখে তারা হতবাক হয়ে যাবে। তবে তাদের কথা শেষ হবার আগেই সাধারণ শ্রেণীর জান্নাতবাসীর কাছে মনে হবে, তার নিজের পোষাক অন্যের পোষাক থেকে বহু গুণ উন্নত। কারণ, জান্নাতে কোন দুঃখ বা হতাশা নেই। তারপর আমরা যার যার বাড়ি-ঘরে ফিরে যাব। আমাদের ঘরের সৌন্দর্য, অপূর্ব সব সুন্দরী রমণীরা এগিয়ে এসে বলবে, স্বাগতম! আপনি ঘর থেকে যেভাবে বের হয়েছেন তার চেয়েও অধিক সৌন্দর্য ও সুঘ্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছেন।
আমরা জবাবে বলব, আজ আমাদের রাব্বের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম। কাজেই এ পরিবর্তন নিয়ে ঘরে ফেরা স্বাভাবিক। তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ
লেখক: বৃটেন প্রবাসী ইসলামি স্কলার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ইমাম ও খতিব যুক্তরাজ্য
-এটি