মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


আত্মবিশ্বাস: অধঃপতন থেকে উত্তরণের অন্যতম এক উপায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শরীফুল ইসলাম নাঈম: যে কোন কাজে সফল হওয়ার জন্য সঠিক পরিকল্পনা যেমন জরুরি, ঠিক তেমনি অবিরাম মেহনতের সাথে সাথে আত্মবিশ্বাসটাও জরুরী। বিজয়ী হওয়ার বাহ্যিক সব উপকরণ থাকার পরও নিজের উপর বিশ্বাস না থাকার কারণে অধিকাংশ মানুষ-ই পরাজয় হয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, েআর তোমরা ভেঙে পড়ো না, দুঃখিত হয়ো না; তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা প্রকৃত বিশ্বাসী হও। (আলে ইমরান:১৩৯)

বর্তমানে বিধর্মীদের কাছে আমাদের পরাজয়ের পিছনে মূল ভূমিকা পালন করছে আমাদেরই মনস্তাত্ত্বিক দৈন্যতা। ওরা জানে যে, মুসলিম জাতিকে শক্তিতে পরাজিত করা সম্ভব না। কারণ, মুসলিমরা বেঁচে থাকার জন্য লড়ে না; বরং লড়ে মরার জন্য। তাই ওদের মধ্যে মৃত্যুর কোন ভয় থাকে না। আর মৃত্যুঞ্জয়ী কোন জাতিকে হারানো সম্ভব নয়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মৃত্যু মুমিনের জন্য উপহার স্বরূপ। (তারগীব তারহীব)

তাই ওরা প্রথমে আমাদের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে নামল। পুরো কুফরী শক্তি একজোট হয়ে গেল আমাদের বিপক্ষে। তখন আমরা রয়ে গেলাম গাফেল আর নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত। উপরন্তু তাদের সাথে কার্যকর সঙ্গ দিল আমাদেরই ভিতরকার কিছু আস্তিনের সাপ! পরিণতিতে আমরা হেরে গেলাম। হয়ে গেলাম ওদের গোলাম, শিক্ষা সংস্কৃতি ও চিন্তা মানসিকতা সব জায়গায়। হাদীসে এসেছে, 'তোমাদের পূর্বসূরীরা অন্তর্দ্বন্দের কারণেই মূলত ধ্বংস হয়েছে'। (সহীহ বুখারী)

আমরা ওদের জালে এমনভাবে আটকে গেছি যে, চাইলেও ওদের সিস্টেমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার দুঃসাহস দেখাতে পারি না। বরং আওয়াজ তোলার চিন্তাটাও ওদের মাথা দিয়েই করি। ওরা এগুলো দেখে দেখে মিটিমিটি হাসে। আর আমরা আত্নতুষ্টিতে ভুগে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি যে, কিছু একটা তো চিন্তা করতে পেরেছি! কিছু একটা তো করতে পেরেছি; হোক তা ত্বাগুতের অধীনে থেকেই!

এতটুকুই বা কয়জন করতে পারে। আজ ওদের বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলে, বলতে গেলে হিকমাহর আশ্রয় নিয়ে বলতে হয়, করতে হয়। সরাসরি কিছু করার, বলার মত মানসিকতা আমাদের নেই। অথচ হিম্মত করে আমরা একজোট হয়ে ওদের উপর হামলে পড়তে পারলে ওরা লেজগুটিয়ে পালানোর পথ পাবে না। কুরআনী ভাষায় ওদের সব কার্যক্রম মাকড়সার জালের মত দূর্বল। আল্লাহ তায়ালা বলেন;

যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করে তাদের উদাহরণ মাকড়সার মতো যে ঘর বানায়। আর সবচেয়ে দূর্বল ঘর হচ্ছে মাকড়সার ঘর। (আনকাবুত: ৪১)

পরিষ্কার করতে কেবল আমাদের ঝাড়ু হাতে নেওয়াটা বাকী। কিন্তু এই ঝাড়ু হাতে নেওয়ার চিন্তাটা আমাদের মাথায়ই আসতে চায় না। কারণ, মাথাটা ওদের কাছে ইজারা দিয়ে রেখেছি।

হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, অচিরেই বিধর্মীরা তোমাদের উপর আক্রমণের জন্য একে অপরকে এমনভাবে আহ্বান করবে যেমনভাবে আহারকারী একে অপরকে দস্তরখানে আহ্বান করে। জিজ্ঞেস করা হল, এমনটা কি আমাদের সংখ্যায় স্বল্প হওয়ার কারণে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তখন সংখ্যায় তোমরা অনেক থাকবে।

কিন্তু তোমরা খড়কুটোর মত (অকেজো)হবে। শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দেওয়া হবে আর তোমাদের অন্তরে দুনিয়ার ভালবাসা আর মৃত্যুর ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)

হাদীসের বাস্তব রুপটাই আমরা দেখতে পাচ্ছি। পরিশেষে কামনা করি, আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে অতিদ্রুত নিজেদের মর্যাদা জানার ও বুঝার তৌফিক দান করুক আমিন।

লেখক: কওমি শিক্ষার্থী, প্রাবন্ধিক

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ