আওয়ার ইসলাম: জীবন কোন সহজ সমীকরণ নয় যে, তাতে কোন ঘাত-প্রতিঘাত আসবে না বা আসে না। জীবন মানে যুদ্ধ। যুদ্ধক্ষেত্রের এক সঙ্গীর নাম স্ত্রী। তাই স্ত্রী হতে হবে সেই জীবনের সহযোদ্ধা। বাস্তবে অনেকে ব্যক্তিগত লোভ লালসার জন্য জীবন সঙ্গিনী চয়নে এমন একজন সাথী বাছাই করে, যে দাওয়াতের ক্ষেত্রে সহায়ক হয় না। এটা সুখের চেয়ে দুঃখই বেশি বয়ে আনে। কর্মজীবনে প্রবেশ করে সে বিরাট হোঁচট খায়। তারা শেষ পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রেই ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দূরে সরে যায়। জীবন প্রবাহের গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে দেয়।
দা’য়ির সমাজ যেহেতু জাহেলিয়াতের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয় তাই সে কখনো প্রচলিত সমাজের রীতিনীতির কারণে বিরাট বিপাকে পড়ে যায়। যেমন বিবাহ । প্রচলিত ধারায় তাকে তার পিতামাতা আত্মীয় স্বজন সমাজ তাকে বিবাহে উদ্বুদ্ধ করে। এর ভিত্তিতে সে বিবাহ করে ঘরে স্ত্রী নিয়ে আসে। স্ত্রী মানুষের জীবনে অর্ধাংশ দখল করে রাখে। একারণেই তাকে বলা হয় অর্ধাঙ্গনী। সেই স্ত্রীই যেমন নেয়ামতের উৎস হতে পারে, হতে পারে আবার দুর্ভাগ্যের উৎস। দায়ির দাওয়াতের ক্ষেত্রেও এই দুই ধরণেরই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যায়। অনেক দায়ির বিবাহোত্তর জীবনে আরো সুন্দরভাবে ইসলাম প্রভাব ফেলে। তারা ইসলামের সঠিক পথে অগ্রসর হয়েছে। তাদের ইসলামের খেদমত আরো বেগবান হয়েছে। আবার অনেকেরই বিবাহত্তোর জীবনে চরিত্র বিনষ্ট হয়েছে। ইসলামের প্রতি আগ্রহ উদ্দীপনা কমেছে। এমনকি অনেকে দাওয়াতের পথ থেকে সরে গেছেন।
একটি উদাহরণ দিই, ভারতের এক ইমাম সাহেব স্ত্রীর দাবীর কারণে দাড়ি ছাটিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাস করা হলো এমনটি কেন করলেন। জবাবে ইমাম সাহেব বললেন- তা না করলে যে আমার স্ত্রী ঘরে থাকে না। একারণে দায়িদের এই চিন্তা ভাবনা করতে হবে যে- আমি যাকে গ্রহণ করবো তার ইসলামের বিধি বিধানের প্রতি আগ্রহ আছে কিনা। সে ইসলাম বুঝে কিনা। সে কোন ধরনের পরিবারে বেড়ে ওঠেছে। এসব যাচাই বাচাই করে তারপর জীবন সঙ্গিনী নিতে হবে। অন্যথায় দায়ির জীবন হয়ে উঠবে দুঃখভরা।
তাই ইসলাম এমন জীবন সম্পর্কে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। যথা- বিবাহের উদ্দেশ্য নির্রাধণ
ইসলাম তার স্বভাবজাত চাহিদা মাফিস অন্যান্য বিষয়ের মতো বিবাহের ক্ষেত্রেও দ্বীনি বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছে এবং বিবাহকে দ্বীনের পূর্ণতা হিসাবে গণ্য করেছে।
হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তিকে আল্লাহ সৎ স্ত্রী দান করলেন তাকে অবশ্যই দ্বীনের অর্ধেক রক্ষা করায় সহায়তা করলেন। সুতরাং সে যেন বাকি অর্ধেককে রক্ষা করার জন্য আল্লাহকে ভয় করে চলে।
বায়হাকীর অপর বর্ণনায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যখন বান্দা বিবাহ করে তখন তার দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণতা পায়, সুতরাং সে যেন বাকী অর্ধেক পূরণ করার জন্য আল্লাহকে ভয় করে চলে।
ইসলাম বিবাহ ব্যবস্থাকে নফসকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এবং একে আল্লাহর আনুগত্যের পথে চরিত্র নিষ্কলুষ রাখার জন্য এক বিশেষ কার্যকারণ হিসেবে গণ্য করেছে। হযরত আব্দুল্লাাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- হে যুব স¤প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ রয়েছে, তারা যেন বিয়ে করে। আর বিয়ে করার সামর্থ না থাকলে যেন রোযা রাখে। কেননা এটাই তার জন্য ঢাল স্বরূপ। বিশিষ্ট দার্শনিক প্লেটো বলেন- মানুষ সর্বদা ভীতি, অতৃপ্তির রোগে ভুগে, যেনো তার মাঝে একটি অংশ নেই। যখন তার বিবাহ দেওয়া হয় তখন সে তার হারানো অংশটি ফিরে পায় এবং তার মধ্য পূর্ণতা, তৃপ্তি এবং স্থিরতা ফিরে আসে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তিন প্রকার লোককে সাহায্য করা আল্লাহর উপর আবশ্যকীয় হয়ে যায়। আল্লাহর পথে যুদ্ধরত যোদ্ধা, চুক্তিবদ্ধ গোলাম, যে স্বাধীন হতে চায় এবং যে ব্যক্তি চরিত্র নিষ্কলুষ রাখার জন্য বিবাহ করতে চায়।
ইসলামে বিবাহের একটি বিশেষ লক্ষ্য হল- নিরাপদ পারিবারিক বন্ধন গড়ে তোলা, আর এ ক্ষেত্রে প্রথম ভিত্তি হচ্ছে- বিবাহ। এই ভিত্তি যদি সঠিক হয় তাহলে এই ভবনও সঠিক হবে বলে আশা করা যায়। এ বিষয়টি প্রতি লক্ষ্য করে মুমিনদের মনের আকুতি মিনুতিকে কুরআন মাজীদে এভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যারা বলে হে আমাদের প্রভু, আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি দান করুন- যারা আমাদের চক্ষু জুড়াবে আর আমাদেরকে মুত্তাকিদের নেতা বানিয়ে দিন। (সূরা আল-ফুরকান ৭৪)
কিন্তু যদি তার বিপরীত শুধুমাত্র যৌনতা বা যৌন চাহিদা মিটানোই হয় তাহলে তাদের কাছে যৌনতা ছাড়া দয়া, মায়া, মহব্বত, ভালবাসা ও স্নেহের কিছুই আশা করা যায় না। এমন দম্পতি দিয়ে ভালো কিছুর চিন্তা করা যায় না। উভয়ের জীবন হয়ে ওঠে বিষণ্ণ।
ইসলাম সঠিক সাথী নির্বাচনের জন্য বিশেষভাবে তাগাদা দিয়েছে। যদি মহিলার মধ্যে পাওয়া যায়- ভালো মন ও মানসিকতা, তাহলে সেতো সবচেয়ে ভালো মহিলা। রাসূলুল্লাাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী মোতাবেক “মহিলাদের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে সেই মহিলা, যার দিকে তার স্বামী দৃষ্টি দিলে সে আনন্দিত হবে আর যদি তাকে কোন কাজের আদেশ দেয়, তাহলে সে তার আনুগত্য করবে এবং যখন সে তার থেকে অনুপস্থিত থাকবে তখন সে তার ধন-সম্পদ, নিজের নফস এবং টাকা-পয়সার হেফাযত করবে”।
সুতরাং ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের প্রতি – ইসলাম কিভাবে শয়তান থেকে বাঁচার ব্যাপারে আমাদেরকে পথের নির্দেশনা দিয়েছে? টাকার-পয়সার পূর্বে স্বভাব-চরিত্রকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং মহান আল্লাহর আহবানে সাড়া দিতে হবে। তিনি বলেন, “তোমরা তোমাদের অবিবাহিতদেরকে এবং তোমাদের সৎ দাস-দাসীদেরকে বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা কর। যদি তারা দরিদ্রও হয়, আল্লাহ তাদেরকে তার করুণা দিয়ে সম্পদশালী করে দিবেন”।
হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ বাণীকেও সামনে রাখতে হবে, তিনি বলেছেন- কেউ যদি কোন মহিলাকে সম্মান প্রতিপত্তি লাভের জন্য বিয়ে করে, তাহলে আল্লাহ তার অপমান বাড়িয়ে দিবেন আর কোন মহিলাকে যদি টাকা পয়সার লোভে বিয়ে করে, আল্লাহ তাকে অধিকতর দরিদ্র করে দিবেন এবং কেউ যদি আভিজাত্য লাভের জন্য বিয়ে করে কোন মহিলাকে তাহলে সে আরো বেশি লাঞ্চিত হবে। পক্ষান্তরে কেউ যদি নিজের চক্ষুকে সংযত করতে, লজ্জাস্থান হেফাযত করতে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বিয়ে করে তাহলে আল্লাহ তাদের উভয়ের মধ্যে কল্যাণ ও বরকত দান করবেন। আমাদের বিবাহিত জীবন হোক আলোকিত আলোকধারা।
-কেএল