মুফতী মাহমুদ হাসান।।
সম্প্রতি গোটা বিশ্বে মুসলিম জাতি কোনো-না-কোনোভাবে নির্যাতিত। তাদের অপরাধ একটাই তারা মুসলিম। অথচ কোরআন, হাদীস এবং ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ পাক মুসলমান জাতিকে শ্রেষ্ঠতম জাতি হিসেবে প্রতিপন্ন করেছেন। আল্লাহ পাক বলেন তোমরা শ্রেষ্ঠ, জাতি তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। সেই মহান স্রষ্ঠা আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবকে প্রেরণ করেছেন একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলাম ও ধর্ম গ্রন্থ কোরআন দিয়ে, সারাবিশ্বে ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য আর বাকি সকল ধর্মকে পরাজয় করে মিটিয়ে দেয়ার জন্য।(সুরা ফাতা 28)
মহানবী সা. এর যামানায় মদিনার দশ বছর ইসলাম ছিল সারা বিশ্বের মধ্যে বিজয়ী শক্তি, খোলাফায়ে রাশেদীনের ঊনত্রিশ বছর ইসলাম দুনিয়ার বুকে ছিল বিজয়ী শক্তি, আব্বাসিয়া জামানায়ও ইসলাম ছিল বিজয়ী শক্তি। কিন্তু বর্তমান যামানায় ইসলাম চরম পরাজিত শক্তি।
এক হাজার বছরের ব্যবধানে এই যামানায় মুসলমানরা কেন পরাজিত শক্তি? সারা বিশ্বের যেখানেই মুসলমান সেখানে নির্যাতন-নিপীড়ন। অথচ হযরত ওমর রা. হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয রহমতুল্লাহ, হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রঃ) প্রমূখদের জামানায় কোন কাফেরের পক্ষে মুসলমানদের দিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সম্ভব ছিল না।
আব্বাসীয়া খলীফা হযরত আবু জাফর আল-মানসুরের যামানায় কোন কাফের ইহুদী-নাছারার পক্ষে মুসলমানদের শরীরে টোকা মারা অসম্ভব ছিল। আর যদি সালাউদ্দিন আইয়ুবীর মতো মর্দে মুজাহিদ’ বেঁচে থাকত তাহলে কোন কাফেরের পক্ষে মুসলমানদের এভাবে নির্যাতন করা সম্ভব হতো না। কিন্তু এই যামানায় কাফেররা মুসলমানদের সব সময় কপালে লাথি মারছে।
এখন প্রশ্ন হলো আল্লাহর ঘোষণা করলেন ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম তাহলে আমরা কেন পরাজিত? নিম্নে সংক্ষেপে তার মৌলিকল কারণ ও প্রতিকার তুলে ধরা হলো।
১. বর্তমান যুগে মুসলমানরা কুরআনের উপর আমল, তেলাওয়াত এবং গবেষণার ছেড়ে দিয়েছে। সর্বোপরি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ছেড়ে দিয়েছি।
আল্লামা ইকবাল সুন্দর বলেছেন-
وہ زمانہ میں معزز تھے حامل قرآن ہوکر
اج تم ذلیل و خوار ہو۔ تارک قرآن ہوکر
সাহাবা, তাবিঈন, তাবে তাবেয়ীন ও আয়াম্মায়ে মুজাহিদিনের জামানায় মুসলমানরা কোরআনের ঝান্ডা পতাকাবাহী হবার কারণে সারা দুনিয়ার মানুষ তাদেরকে ইজ্জত করেছে আর এই জামানায় তোমরা কোরআনকে ছেড়ে দিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছো।
অথচ আল্লাহ পাক বলেন- افلا ىتدبرون القران ام على قلوبهم اقفالها الخ
অর্থাৎ তারা কি কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা ও গবেষণা করে না। না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ সূরা মুহাম্মদ ২৪
২. বর্তমানে মুসলমানরা দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত, ঝগড়া আর দলাদলিতে লিপ্ত। তারা পরস্পর ভ্রাতৃত্ব, দয়া, সহানুভূতি মূলক আচরণ প্রদর্শন করে না।
৩. বর্তমান মুসলমানগণ সর্বদা কাফেরদের পদলেহন ও গোলামীতে লিপ্ত। বড় বড় স্কলার, সারা বিশ্বের মুসলমানদের বড় বড় নেতারা কাফেরদের গোলামে করার জন্য প্রস্তুত।
অথবা আল্লাহ তাআলা সুরায়ে ফাতহের ২৮ নং আয়াতে এরশাদ ফরমান: محمد رسول الله والذين معه اشداء على الكفار روحماء بينهم الخ
অর্থাৎ মোহাম্মদ সা: ও সাহাবাগণের আদর্শের আলোকে তোমাদেরকে দুটি গুন অবলম্বন করতে হবে। ১. কাফেরদের মোকাবেলায় তোমাদের হতে হবে প্রাচীরের ন্যায় শক্ত। ২. মুসলমানগণ পরস্পর হতে হবে সদয়-দয়াবান।
উপরোক্ত দুটি গুন অর্জন করতে পারলে এই যামানার মুসলমানগনও বিশ্ব বিজয়ী শক্তিতে পরিণত হবে। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে বর্তমানের মুসলমানগন উপরোক্ত দুটি গুন একেবারে হারিয়ে ফেলেছে। যার ফলে তারা পরাজিত শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
প্রতিকার: আমাদেরকে ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে এবং মনে রাখতে হবে আমরা একটা দাঈয়ী দাওয়াত ও তাবলীগ হলো আমাদের জিম্মাদারী। সারা বিশ্বে কোরআনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। আজ মুসলমানরা দাওয়াত ও তাবলীগ ছেড়ে দিয়েছে। ফলে তারা সংখ্যায় বেশি হওয়া সত্ত্বেও আদর্শিক চেতনার অভাবে স্বাধীন মানুষ ও স্বাধীন জাতির মর্যাদা হতে বঞ্চিত।
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এমন এক যামানা আসবে যে কাফেরের সামনে তোমরা তুফানের বুদবুদের ন্যায় ভেসে যাবে। সাহাবারা প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ সেসময় কি মুসলমানদের সংখ্যা কম হবে? রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বললেন: না! তোমাদের সংখ্যা অধিক হবে কিন্তু তোমাদের অন্তরে ওহান ঢেলে দেয়া হবে।
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ওহান কি? উত্তরে বললেন দুনিয়ার মহব্বত ও মৃত্যুর ভয়।
রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম এর বাণী বর্তমানে অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হচ্ছে। আজ মুসলমানরা দুনিয়ার লোভে পড়ে হানাহানি এবং ঝগড়ায় লিপ্ত হচ্ছে। ইসলামী আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে কাফেরদের মতো দুনিয়ার স্বার্থের পিছনে দৌড়াচ্ছে। সুন্নতী জীবনবাদী বিজাতিদের অনুসরণে আনন্দবোধ করছে যার ফলে আল্লাহর সাহায্য আসছে না। সুবর্ণ সুযোগ মনে করে আল্লাহর দুশমন কাফেররা মুসলমানদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।
তাই বলি মুমিন-মুসলমান ভায়েরা! আমাদেরকে রাসূল সা. এর আদর্শ আঁকড়ে ধরতে হবে, ঈমানী শক্তি বাড়াতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে। তাহলে আবারও মুসলমানরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। সারা দুনিয়ার মানুষ তাদের ইজ্জত করবে, তাদেরকে শ্রদ্ধা ও সমীহ করতে বাধ্য হবে। ইসলাম বিজয়ী শক্তিতে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তা’আলা তাঁর মনোনীত দ্বীনকে বিজয়ী করার কাজে আমাদের সকলকে আত্মনিয়োগ করার তাওফীক দান করুন আমীন।
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, দারুল হক্ব ইসলামিয়া মাদ্রাসা মির্জাপুর,টাঙ্গাইল।
-এটি