বেলায়েত হুসাইন।।
আল্লাহর ভালবাসা
একজন প্রকৃত মুমিন মুসলমানের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হলো-আল্লাহর ভালবাসা পাওয়া এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মহান আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দা হওয়া। আর অনেক চেষ্টা-সাধনা ও কষ্ট-মেহনতের পর তিনি আল্লাহর পরম ভালবাসা লাভে ধন্য হন। এজন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর সকল আদেশ-নিষেধ জীবনে প্রতিফলিত করার পর তাকে উত্তম চরিত্র ও গুণাবলির অধিকারী হয়। মুমিন যখন সৎ আমল করে তাঁর রবের চাহিদা মতো জীবন পরিচালিত করতে শেখে, তখন মহান আল্লাহ তাকে অফুরান সম্মান দান করেন, তার উপর সন্তুষ্ট হন এবং তাকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে,‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর, তোমরা নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ কর না, তোমরা সৎকাজ কর, নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৫) একই সুরার ২২২ নাম্বার আয়াতে আরো বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।’
বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালবাসার নিদর্শন
বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালবাসার একাধিক নিদর্শন রয়েছে। আল্লাহর বিধি-নিষেধ মান্য করার পরও বান্দা আরো এমন অনেক কিছু করবে, যার মাধ্যমেই বোধগম্য হবে যে, তিনি আল্লাহর প্রিয়। কারণ, সেসব কাজ মহান আল্লাহ এমন বান্দাকে দিয়ে করান যাকে তিনি ভালবাসেন।
এক, রাসুল (সা.)-এর পূর্ণ অনুসরণ এবং ইসলামী শরিয়তের চাহিদামতো জীবনযাপন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আপনি মুসলমানদের বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন ও তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)
দুই, বেশি বেশি নফল আদায়। কেননা, অধিক পরিমাণে নফল ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়। নফল ইবাদতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-দান-সদকা করা, নফল নামাজ আদায় ও রোজা পালন এবং সমর্থ হলে হজ ও ওমরাহ করা। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘বান্দা যতো বেশি নফল ইবাদত করবে সে আমার নিকট ততো প্রিয় হবে’। (সিলসিলাতুস সহিহাহ, হাদিস নং ১৬৪০)
তিন, সর্বাবস্থায় আল্লাহর ফায়সালা মেনে নেওয়া। যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর বন্টননীতিতে সন্তুষ্ট থাকা, চাই সুখ-সমৃদ্ধি প্রাপ্তিতে হোক কিংবা বালা-মুসিবতে পতিত হওয়ার সময় হোক। সুখ-শান্তির আল্লাহর নেয়ামত আর বিপদ-আপদ তাঁর পরিক্ষা। তিনি তাঁর প্রিয় বান্দারেই পরিক্ষা নিয়ে থাকেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যে জাতিকে ভালবাসেন তাদের পরিক্ষা নেন। যে এ অবস্থায় তাঁর উপর সন্তুষ্টি বজায় রাখে তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হন আর যে তাঁর পরিক্ষা মেনে নেয়না তিনি তার উপর ক্রোধান্বিত হন। (রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস নং ৪৩)
চার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। কেননা, মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসুল (সা.) আত্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্কের উপদেশ দিয়েছেন এবং যারা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে তাদের কঠিন আজাবের প্রতি সতর্ক করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর বন্দেগী বা দাসত্ব কর। কোন কিছুকে তাঁর সঙ্গে শরীক করবে না। বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন, এতিম বা দরিদ্র নিকট ও দূরের প্রতিবেশী সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভূক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৬)
পাঁচ, মাতা-পিতার সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। ইসলাম পিতা-মাতার সঙ্গে উত্তম আচরণের প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। পবিত্র কোরআনে কারিমেও এ ব্যাপারে বারবার উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকে ইসলামে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং অধিক প্রিয় আমল আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের উপর কষ্টের সাথে গর্ভে ধারণ করেছেন।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত: ১৫)
ছয়, বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা এবং তার অর্থের প্রতি খেয়াল করে করে পড়া। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি তারতিলের সহিত কোরআন তিলাওয়াত করুন’। (সুরা মুজাম্মিল, আয়াত: ৪)
সাত, সর্বদা আল্লাহর স্মরণ করা। আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, তাহলে আমি তোমাদের স্মরণ করবো’। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫২)
আট, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা। মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়ের অশেষ সওয়াব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত একা পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ ঊর্ধ্বে’। (বুখারি ও মুসলিম)
নয়, মুমিন-মুসলমান ও সৎ লোকদের সঙ্গে ওঠাবসা করা এবং অসৎ লোকদের থেকে দূরে থাকা। ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘ব্যক্তি তার বন্ধুর দ্বীনের মাধ্যমেই পরিচিত। তাই কাকে বন্ধু গ্রহণ করছ তা দেখা চাই’। (আবু দাউদ ও তিরমিজি)।
দশ, সৎ কাজের আদেশ এবং কল্যাণকর কাজে তাদের সহায়তা করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই সর্বোৎকৃষ্ট উম্মত। তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানবজাতির জন্য। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজে নিষেধ করো এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করো’।(সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ১১০)
এগারো, গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং অসৎ কর্ম না করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সেই মহান সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা অবশ্যই অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। অন্যথায় আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর অবশ্যই আজাব নাযিল করবেন। এরপর তোমরা যখন আল্লাহকে ডাকবে তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন না। (মিশকাত শরীফ)
আল্লাহর ভালবাসা প্রাপ্তির ফলাফল
বান্দা যখন আল্লাহর ভালবাসা লাভে ধন্য হবে, তখন তিনি তাকে সব রকমের পরিস্থিতিতে কল্যাণ দান করবেন। যেমন:
এক, মন্দ ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবেন। ‘আল্লাহ বলেন, অনুরূপভাবে আমি তার থেকে খারাপ ও মন্দ বিষয়কে দূরে রাখবো। কেননা, সে আমার নেক বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত’। (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ২৪)
দুই, দুনিয়ায় বান্দার সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করবেন এবং আখেরাতে তাকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন।
তিন, মানুষ ওই বান্দাকে ভালবাসবে এবং সব জায়গায় সে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। ‘সে মুমিনদের কাছে বিনয়ী হবে’। (সুরা মায়েদা: আয়াত: ৫৪)
চার, তার দোয়া কবুল হবে। আল্লাহর কাছে সে যা চাবে তিনি তাকে তা দান করবেন।
পাঁচ, সবশেষ সমস্ত বালা-মুসিবত থেকে আল্লাহ তাকে হেফাজত করবেন। দুনিয়ার কোন শক্তিই তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
সূত্র: আল মাউদু
-এটি