মুফতি নাজমুল হাসান।।
রোজিনা বেগম। একটি সরকারী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা৷ প্রতিদিন সকালেই ছুটতে হয় স্কুলে। তার দুই বছর বয়সী বাচ্চাটা প্রতিদিনই মা যাওয়ার সময় সাথে যেতে কান্না জুড়ে দেয়৷ তো কী আর করা! যাওয়ার সময় সে তার বাচ্চার হাতে একটি স্মার্ট ফোন তুলে দিতেন। বাচ্চা সে ফোনের ভিডিও দেখে শান্ত হতো। রোজিনা বেগম মনে করলেন, বাচ্চাকে শান্ত করার জন্য এটা একটি ভাল পদ্ধতি। এরপর নিজেই বাচ্চার জন্য একটি ট্যাব কিনে আনলেন। বাচ্চা এখন দিন রাত সেই ট্যাবে ভিডিও দেখে৷ ঘুমুতে গেলেও ট্যাব, খেতে গেলেও ট্যাব। ট্যাবেই যেন তার নিত্য সঙ্গী।
খালেদা বেগমের দু'টি জমজ সন্তান। ওরা উভয়েই খুব দুষ্টু৷ একেবারেই খেতে চায়না। খাওয়াতে বসালেই নানা বায়না। প্রতিবেশীদের দেখা দেখি খালেদা বেগম খাওয়ানোর সময় বাচ্চাদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিলেন৷ তারা ইউটিউবে কার্টুন দেখতে দেখতে খায়। খালেদা বেগম নিশ্চিন্ত হলেন- যাই হোক, বিনা ঝামেলায় বাচ্চারা এখন পেটপুরে খায়।
জামিলা ভাবী খুব খুশী। প্রতিবেশি ভাবীদের সঙ্গে গল্প করে বলেন, আমার ছেলেটা মোবাইলে খুব পাকা। নিজে নিজে ইন্টারনেট থেকে নানা ধরনের অ্যাপস ডাউনলোড করা, এটা ওটা বের করা সব পারে। ভাবীরা উৎসাহ দেয়- বাহ! মেধাবী ছেলে আপনার। জামিলা ভাবী আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন।
এভাবেই আমাদের বাবা-মায়েরা সন্তানকে শান্ত রাখতে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন নানা ধরণের স্মার্ট ফোন৷ এতে একদিকে যেমন বাবা মায়েরা নিশ্চিন্ত হচ্ছে অন্যদিকে তেমনি তারা এটাকে আভিজাত্যের অংশ মনে করছে।
অথচ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই স্মার্টফোনের টাচস্ক্রিন ব্যবহার মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে আপনার শিশুর ওপর। এমনকি, ভবিষ্যতে তার পেন বা পেনসিল ধরতেও সমস্যা হতে পারে। অক্ষম হয়ে যেতে পারে আঙুলও।
নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডা. প্রাণ গোলাপ দত্ত জানান, মোবাইল ফোন শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রশ্মি শিশুদের দৃষ্টিশক্তির ভীষণ ক্ষতি করে। যেসব শিশু দৈনিক পাঁচ-ছয় ঘন্টা মোবাইল ফোনে ভিডিও গেম খেলে, খুব অল্প বয়সে তারা চোখের সমস্যায় পড়বে।
ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত দাবি করেন, সেদিন খুব বেশী দূরে নয় যেদিন মোবাইল ফোনকে সিগারেটের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
লেখক: মুখপাত্র, কুমিল্লা জেলা যুব উলামা পরিষদ, কুমিল্লা।
-এটি