১. সর্বপ্রথম নিজের ঈমান আমলকে সংশোধন করা। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
وَمَا کَانَ رَبُّکَ لِیُهْلِکَ الْقُرٰی بِظُلْمٍ وَّ اَهْلُهَا مُصْلِحُوْنَ ﴿۱۱۷﴾
অর্থ: আর আপনার রব এমন নন যে, তিনি জনপদসমূহকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেবেন অথচ তার অধিবাসীরা সৎকর্মে লিপ্ত রয়েছে। (সূরা হুদ:১১৭)
২. দুই নম্বর কাজ হলো-আকীদা সহীহ করা। পবিত্র কুরআনে কারীমে মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
قُلْ لَّنْ یُّصِیْبَنَاۤ اِلَّا مَا کَتَبَ اللهُ لَنَا ۚ هُوَ مَوْلٰىنَا ۚ وَعَلَی اللهِ فَلْیَتَوَکَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ ﴿۵۱﴾
অর্থ: হে নবী! আপনি বলে দিন! আল্লাহ আমাদের জন্য (তাকদীরে) যা লিখে রেখেছেন তা ছাড়া অন্য কোনো কষ্ট আমাদেরকে কিছুতেই স্পর্শ করবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপর মুমিনদের ভরসা করা উচিত। (সূরা তাওবা; আয়াত ৫১)
কাজেই যে কোনো বালা-মুসীবত ও মহামারিতে মুমিন বান্দার প্রথম কাজ হলো নিজের আকীদা বিশ্বাস দৃঢ় করা যে, আল্লাহ তা‘আলা যদি আমার তাকদীরে লিখে রাখেন, তবে তা কোনভাবেই আটকানো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলাই আমাকে সুস্থতা দান করবেন, মারা গেলে ‘শহীদ’ এর মর্যাদা তথা বিনা হিসেবে জান্নাত দান করবেন। আর যদি আমার তাকদীরে এ রোগ না লিখে থাকেন, তবে এ রোগ আমার কক্ষনো হবে না।
এর পাশাপাশি এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, করোনা ভাইরাস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। বরং আল্লাহ তা‘আলা তাকদীরে রেখেছেন-এ জন্য হয়েছে। হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছে-নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ولا عدوى، অর্থাৎ ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই!’ এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন যে, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা একটি খুজলিযুক্ত বকরী অন্যান্য (সুস্থ) বকরীর মাঝে রেখে দিলে সেগুলোও তো খুজলি রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়! নবীজী বললেন, ‘ فمن أعدى الأول ‘তাহলে প্রথম বকরীটি কী কারণে আক্রান্ত হলো?’ অর্থাৎ প্রথম বকরীটি যেভাবে আল্লাহর হুকুমে আক্রান্ত হয়েছে, তেমনি অন্যগুলোও আল্লাহর হুকুমে আক্রান্ত হয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ৩০৩১)
৩. তিন নম্বর কাজ হলো- বেশি বেশি ইস্তেগফার করা তথা আল্লাহর কাছে নিজ গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
وَمَا کَانَ اللهُ لِیُعَذِّبَهُمْ وَاَنْتَ فِیْهِمْ ؕ وَمَا کَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ یَسْتَغْفِرُوْنَ ﴿۳۳﴾
অর্থ : এবং (হে নবী!) আল্লাহ এমন নন যে, আপনি তাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তিনি এমনও নন যে, তারা ইস্তিগফারে রত থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল:৩৩)
৪. এ দু‘আটি বেশি বেশি পাঠ করা-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ °
অর্থ: (হে আল্লাহ!) আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অপরাধী। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭)
৫. বাদ ফযর ও বাদ মাগরিব তিন তিনবার নিম্নোক্ত দু‘আ দুটি পড়া-
بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِى الْاَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
অর্থ: আল্লাহর নামে, যার নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো বস্তু ক্ষতিসাধন করতে পারে না। আর তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী! (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ৪৪৬)
اَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে তার পরিপূর্ণ ‘কালেমা’র মাধ্যমে সকল সৃষ্টিজীবের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ৭৮৯৮)
৬. নিম্নোক্ত দু‘আটি বেশি বেশি পাঠ করা-
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ، وَالْجُنُوْنِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الْاَسْقَامِ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি শ্বেত রোগ, উম্মাদনা, কুষ্ঠ রোগ এবং সকল প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ১৩০০৪)
৭. দিনে যে কোনো সময়ে সূরা ফাতিহা তিনবার, সূরা ইখলাস তিনবার, এবং নিম্নোক্ত দুআটি ৩১৩ বার পড়া-
حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ
অর্থ: আল্লাহ তাআলাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আর তিনি অতি উত্তম অভিভাবক। (সূরা আলে ইমরান; আয়াত ১৭৩)
৮. দিনে যে কোনো সময়ে নিজ পরিবারে সম্মিলিতভাবে সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবের তা‘লীম করা। এটা একটা পরীক্ষিত আমল। নিকট অতীতে হিন্দুস্তানে একবার এক মহামারি দেখা দেয়। তখন হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এ মহামারি থেকে বাঁচার জন্য ‘নাশরুত তীব’ নামে সীরাতগ্রন্থ লেখা শুরু করেন। এ সীরাতের বরকতে আল্লাহ তা‘আলা মহামারি উঠিয়ে নেন!
নির্ভরযোগ্য সীরাতের কিতাব যেমন সাইয়্যেদ আবুল হাসান নদবী রহ. রচিত কিতাব ‘নবীয়ে রহমাত’ (বাংলা), মুফতী শফী রহ.কৃত ‘সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া সা. (বাংলা)।
আতঙ্ক নয়, সতর্ক হই, সচেতন হই, গুনাহ বর্জন করি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করেন, আমীন।
-কেএল