মোহাম্মদ বিন আহসান: বাইতুল্লাহ প্রাঙ্গণে শীতল সমীরণের আবাস পেয়ে জীবিত সাহাবী ও বড় বড় তাবেঈদের অনেকেই তাওয়াফ শুরু করে দিলেন। তারা হেরেমের পরিবেশ আলোড়িত করে দিলেন তাকবীর ও তাহলীলে। পুণ্যভূমির পরিবেশকে সুরভিত করে দিলেন উত্তম উত্তম দোয়ায়।
সারাদিনের প্রখর তাপে তেতে ওঠা কা'বা অঙ্গনের ভাপ কমে যাওয়ায় এখন অন্যরাও দলে দলে হালকা বন্দি হয়ে পবিত্র কাবার আশ পাশে বসে পড়লো। এ পবিত্র ঘরের মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যকে বুকে নিয়ে তারা আসন গ্রহণ করলো বিভিন্ন স্থানে। তারা বাইতুল্লাহর অপরূপ সৌন্দর্য মাখা দীপ্তি চোখ ভরে উপভোগ করেছিল। পরস্পরের মাঝে করছিল আলোচনা পর্যালোচনা; যার মাঝে ছিলনা কোন অযাচিত ও অর্থহীন কথা।
কা'বা শরীফের অন্যতম খুঁটি রুকনে ইয়ামানীর কাছে বসেছিলো সুবাসিত পোশাক পরা ও উচ্চ বংশীয় চার তরুণ। উজ্জ্বল চেহারার এই চার তরুণের পোশাকের মিল আর হৃদয়ের ঘনিষ্ঠতা দেখে মানে হচ্ছিলো, ওরা যেন এই মসজিদের উড়ে বেড়ানো কতগুলো পায়রা। সেই চারজনের নাম আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর, মুস'আব ইবনে যুবাইর, উরওয়াহ ইবনে যুবাইর এবং আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান।
পুণ্যপথের যাএী সেই চার তরুণের মাঝে আলোচানা ধীরে ধীরে এগিয়ে চললো। তাদের একজন হঠাৎ প্রস্তাব করে বসলো।
চলো আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাই। এভাবে তাদের নিষ্পাপ কল্পনাগুলো অদৃশ্যের বিশাল ভুবনে ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে লাগলো। তাদের স্বপ্নগুলো আকাঙ্ক্ষার সবুজ উদ্যানে পাখা মেলে ভাসতে লাগলো।
আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের বলেন - ‘আমার আকাঙ্ক্ষা হল হিজাজের কর্তৃত্ব লাভ করা। খেলাফতের গৌরব অর্জন করা।’
তার সহোদর মুস'আব বলেন - ‘কিন্তু আমার আকাঙ্ক্ষা দুই ইরাক। (কুফা বসরার) আমি চাই এ দুই অঞ্চলে যেন আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী জন্ম নিতে না পারে।’
আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান বলেন - ‘ঠিক আছে তোমাদের আকাঙ্খাগুলো যথাযর্থ। তবে আমি কিন্তু সমগ্র অঞ্চলের খলিফা না হওয়া পর্যন্ত থামবো না। মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের পর খেলাফতের মসনদ আমি লাভ করতে চাই।’
উরওয়াহ ইবনে যুবায়ের নিরব হয়ে রইলেন। কিছুই বললেন না। সবাই তার দিকে তাকালো। হে উরওয়াহ তোমার আকাঙ্ক্ষার কথা তো কিছুই বললে না?
তিনি বললেন- ‘তোমাদের পার্থিব আকাঙ্খায় আল্লাহ তাহলে বরকত দান করুন। কিন্তু আমার চাওয়া ভিন্ন। আমি এমন একজন দ্বীনদার আলেম হতে চাই; যার থেকে মানুষ আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের সুন্নাহ গ্রহণ করবে, দিনের আহকাম শিখবে। আমার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো : আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত প্রাপ্তির মাধ্যমে আখেরাতের জীবনকে সফলকাম করা।’
-কেএল