খাদিজা ইসলাম ।।
অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে তিলে তিলে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে শিশুদের জীবন। প্রযুক্তির এ যুগে অনেক অভিভাবকের ধারণা স্মার্টফোন ব্যবহারে শিশুরাও স্মার্ট হয়। শুধু তাই নয় স্মার্ট ফোন ব্যবহার করাকে শিশুদের বুদ্ধিবিকাশ ও মনে করে। ফলস্বরূপ দেখা যায় তার উল্টো পরিণাম।
মহাখালির স্থায়ী বাসিন্দা গৃহিণী লিজা বলেন- আমার মেয়ের বয়স ৭ বছর। দুই বছর বয়স থেকে তার হাতে মোবাইল দিয়ে তাকে খাইয়ে দিতাম।সে অভ্যাসটা এখনো রয়ে গেছে। মানুষ সাথে মিশতে চায় না। গেইম খেলে, টম এন্ড জেরি, মটু পাটলু এগুলা দেখে। সবমিলিয়ে করোনার এই সময়ে ঘরে থাকে এটাই অনেক কিছু। মেয়ের শারীরিক মানসিক যে ক্ষতি হচ্ছে তার কোনো তোয়াক্কা করছেন না তিনি।
সাততলা বস্তিতে ৫ বছর যাবৎ থাকেন রাজিয়া বেগম। পেটের তাগিদে গ্রাম থেকো ছুটেছেন শহরে। আশ্রয় নিয়েছেন বস্তিতে। তিন সন্তানাদিসহ পাঁচ জনের সংসার। ছোট বাচ্চা টাকে মোবাইল হাতে দিয়ে লেগে পড়েন বাসাবাড়ির কাজে। এইদিকে ৭/৮ ঘন্টা তিন বছরের এই শিশু মোবাইল নিয়ে থেকে থেকে প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে। চোখ বাকা হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ে। রাজিয়া বেগম বলেন আমার মেয়ের জীবন অভাব আর আমি নষ্ট করে দিয়েছি। এই কথা বলতেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এমন হাজারো পরিবারে শিশুদের এই অবস্থা। সবই থেকে যায় ঘটনার অন্তরালে।মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে শিশুরা সার্বিক দিক থেকে ক্ষতি হয়।গবেষণায় দেখা গেছে-
১.শিশুরা অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে, মোবাইল ফোন হতে নির্গত রশ্মি শিশুদের দৃষ্টি শক্তিকে মারাত্বক ভাবে ক্ষতি করে।
২.শিশুরা একটানা মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে তাদের মৃগী রোগ ও হাপানির ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩.যুক্তরাষ্ট্রের গবেষনায় দেখা গেছে, শিশুরা এক মিনিটে মোবাইলে কথা বললে মস্তিষ্কে যে কম্পন সৃষ্টি হয় তা স্থির হতে সময় লাগে দু ঘন্টা।
৪.মস্তিষ্কে ক্রিয়াকলাপের সমস্যা - অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে শিশুদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, আচরণগত দিকের পরিবর্তন হয়,নতুন কিছু শেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
৫.একাডেমিক পড়াশোনার মনোনিবেশ করতে পারেনা।
৬.শিশুরা মোবাইল ব্যবহার করার ফলে মস্তিষ্ক ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবণা রয়েছে
৭.কলকাতার অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ বলেন-হাতের কবজি ও আঙ্গুলের এক জটিল যোগসূত্র রয়েছে।বাচ্চাদের সঠিক ভাবে পেনসিল ধরার জন্য আঙ্গুল ও কবজির পেশিগুচ্ছের জোর দরকার হয়। যা মূলত শিশুরা মোবাইলের টাচস্ক্রীন ব্যবহারের ফলে কমে যাচ্ছে।ফলশ্রুতিতে শিশুদের আঙ্গুল অসার হয়ে পড়েছে দিনকে দিন।
৮.মানসিক ভারসাম্য হীন হয়ে পড়ছে।
৯.সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, কম্পিউটার অথবা মোবাইল ফোনের সংস্পর্শে আসা শিশুরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুকিঁতে রয়েছে।
১০.অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে বুদ্ধিভিত্তিক মেধা ও বিকল হয়ে যাচ্ছে।
মোবাইল ব্যবহারের ফলে শিশুদের কোনো উপকার হচ্ছে না বরং শারীরিক, মানসিক, নানা রোগ ব্যাধি জন্ম নিচ্ছে।বিশিষ্ট জনদের মতামত এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে, মোবাইলের পরিবর্তে খেলনা,রকমারি মজার বই,মুক্ত পরিবেশে খেলার পর্যাপ্ত সুযোগ করে দেয়া উচিত।পরিবারের সদস্যগণ শিশুদের সময় দেয়া উচিত।
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারী তিতুমীর কলেজ, বাংলা,সম্মান ২য় বর্ষ।
-এটি