কাউসার লাবীব।।
সাব-এডিটর
যদি আপনি চান আপনার আগামী প্রজন্ম ইসলামের আলোয়ে আলোকিত হোক। তারা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিক ইলমের আলো। তাহলে প্রথমে আপনার সন্তানদের ব্যাপারে আপনাকে সচেতন হতে হবে। তাদেরকে তেমনভাবে গড়ে তোলতে হবে, যেমন দেখতে চান আগামীর মুসলিম বিশ্ব। কিন্তু আপনি যদি সারাজীবন অর্থ-বৈভবের পেছনে ছুটে আগামীর আলোকিত মুসলিম বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখেন তাহলে আপনার স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে যাবে। বংশ সূত্রে আপনার পূর্বপুরুষ থেকে পাওয়া ইমানের আলো আর বেশি দূর ছড়াবে না।
এ নিয়ে আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথা বলা যেতে পারে- আমার সর্বপ্রথম আমেরিকা যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল তার ১৯৭৮ সালে।একটি ইসলামিক কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম সেখানে। আমাকে একটি ইসলামিক সংগঠন সে প্রগ্রামে দাওয়াত দিয়েছিল। কনফারেন্সের সময় ছিল বিকেলে। তো আমি যখন বিকেলে সেখানে উপস্থিত হলাম তখন উপস্থিত শ্রোতাদের দেখে তো আমি রীতিমতো হতাশ। অনুমানে বুঝলাম উপস্থিত লোকজনের সবাই মুসলমান। কিন্তু তাদের মধ্যে ইসলামের কোনো চিহ্নও নেই। নেই ধর্মের বিধি-বিধানের কোনো তাজিম। যুবক, যুবতী, বৃদ্ধ ও বণিতা সবাই ছোটছোট পোশাক পরে একসঙ্গে গাদাগাদি করে বসে আছে।অবস্থা দেখে বুঝলাম এতে তারা বিন্দুমাত্রা সঙ্কোচবোধ করছে না।
কনফারেন্স যখন খাবার-দাবারের পর্ব এলো তখন সেখানে ঘোষণা করা হলো যদি কেউ হালাল খাবার খেতে চান তাহলে মাছ খেতে হবে। তার মানে তাদের হালাল খাবার গ্রহণের ব্যাপারেও সচেতনতা নেই।
আমি তখনো আমেরিকার সামাজিক অবস্থার ব্যাপারে তেমন ওয়াকিবহাল ছিলাম না। তাই উপস্থিত জনতা এবং ব্যবস্থাপনার এমন অবস্থা দেখে আমি সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারিনি। আমার দায়িত্ব শেষ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখান থেকে সরে পড়ি। এরপর কিছুটা একাকী হওয়ার পর আমি কনফারেন্সের আয়োজক কমিটির প্রধানকে জিজ্ঞেস করলাম, একটি ইসলামিক প্রোগ্রামের এমন অবস্থা কেন? এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন তারা তো মনে হচ্ছে মুসলমান। কিন্তু তাদের এ অবস্থা কেন? তাদের তো দেখছি ধর্ম ও ধর্মের বিধানের প্রতি তেমন আগ্রহ নেই।আপনারা যদি সাধারন মানুষের ধর্মের এতটুকু ছোঁয়া না দিতে পারেন তাহলে এত বড় একটি ইসলামিক কনফারেন্স করার কী মানে? কেন আপনারা এই কনফারেন্সের আয়োজন করলেন?
কনফারেন্সের আয়োজক কমিটির প্রধান লেবাননী। তিনি আমার কথাগুলো শোনে তিনি কেঁদে কেঁদে আমাকে বলতে লাগলেন, ‘হযরতজী! আপনার কথা সঠিক। কিন্তু আপনার সামনে যে শ্রোতারা বসেছিল আমাদের অনুষ্ঠানের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, তারা যেন অন্তত জানে যে, তাদের পূর্ব পুরুষগণ মুসলমান ছিলেন এবং তারাও মুসলমান। সেই সূত্রে তারা যেন কমপক্ষে নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করে।যদি আমরা এতটুকুও পাই, তবুও আমরা সফল।তা না হলে তো তারা ইসলামকে চিনবে না। ইসলাম কী জিনিস সে বিষয়ের প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ তৈরি হবে না।
তাদের মুসলমান বাপ-দাদারা আমেরিকায় এসেছিল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। সেই স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে তারা নিজের ধর্মানুসরণের বিষয়টি প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। খানাপিনা আর অর্থ বৈভবের পেছনে তারা এমনভাবে পড়েছিল যে নিজের ছেলেমেয়েদের ক দ্বীন ধর্মের শিক্ষা দেয়ারও সুযোগ পায়নি। সেই লোকদের এসব গাফলতির কারণে আজ এ প্রজন্মের এমন অবস্থা। তারা ভুলেই গেছে তারা কোন ধর্মের। কী তাদের পরিচয়। নিজেদের যে মুসলমান বলে পরিচয় দিতে হবে সেটিও তারা জানে না।’
তবে এখন সময় এবং অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।আল্লাহতালার অশেষ রহমতে এবং জীবন বাজি রাখা কিছু মুসলমান দায়ীর অসিলায় আজ আমেরিকা ও আমেরিকার মুসলমানদের অবস্থা অনেক পাল্টে গেছে। তারা এখন ধর্মকে চিনতে শিখেছে। ইসলামকে আপন করে নিতে শিখেছে। কোরআনকে চুমু খেতে শিখেছে। কোরআনের রঙে নিজেকে রাঙাতে শিখেছে। সেখানে তৈরি হয়েছে অনেক দ্বীনি মার্কাজ ও ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার। তৈরি হচ্ছে ইসলামের জন্য হাজারো নিবেদিত প্রাণ।জীবন বাজী রাখা সেই দায়ীদের পরিশ্রম আল্লাহ তায়ালা বৃথা যেতে দেননি। তবে আশানুরূপ ফল এখনো পাওয়া যায়নি। দায়ীদেরকে সাধারণ মুসলমানদের পেছনে আরও পরিশ্রম করতে হবে। তাদেরকে দ্বীন বোঝানোর জন্য নিজেদের আরো নিবেদিত করে দিতে হবে। পথভোলা মুসলমানদেরকে আরো কাছে টেনে নিতে হবে। দেখাতে হবে ইসলামের নির্মল আলোর পথ।
-কেএল