আবদুল্লাহ তামিম।।
পাকিস্তানের সাবেক বিচারপতি, মিজান ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা, আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমি (ওআইসির একটি শাখা সংস্থা) এর স্থায়ী সদস্য, দারুল উলুম করাচির নায়েব মুহতামিম, আল্লামা মুফতি তাকি উসমানি হাফি. করোনার এ কঠিন পরিরস্থিতিতে মসজিদ-মাদরাসা-মাহফিলসহ সর্বত্র মাস্ক ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ৪ ডিসেম্বর দারুল উলুম করাচির এক মাহফিল থেকে তিনি এ আহ্বান জানান।
ভিডিও বক্তব্যে তিনি বলেন, পুরো বিশ্বে করোনা ভাইরাসের মাহমারী চলছে বেশ কয়েকমাস যাবত। এ ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এখন আরো কঠিন আকার ধারণ করেছে। ডক্তারদের বক্তব্য, এ ভাইরাস আগের থেকে আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে। আমাদের জানা শোনা মাদরাসার দায়িত্বশীল অনেকই, আবার মসজিদে আগত মুসল্লিদের অনেকেই করোনার এ মহামারীতে আক্রান্ত, আবার অনেকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণও করেছেন।
এ সময়ে আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ডাক্তার, বাকায়ি হাসপাতালের অনেক বড় দায়িত্বশীল, ডাক্তার মুহসিন। যিনি দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে দাওরায়ে হাদিসও শেষ করেছেন। তাবলিগের অনেক বড় জিম্মাদার। ডায়বেটিক রোগেরও প্রসিদ্ধ একজন ডাক্তার তিনি।
যখন করোনার বিষয়টি শুরু হয়, তখন তিনি মসজিদের বিষয়ে বলেছিলেন, এ সময় করোনা পরিস্থিতি কঠিন হচ্ছে, অবস্থা এমন যে, কোনো হাসপাতালে জায়গা খালি নেই। যে নতুন রোগী আসছে তারা বাইরে পরে আছে, তিনি আমাকে অনেোধ করেন, আমি যেনো এ বিষয়ে প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে বলি। স্বাস্থবিধিসহ সতর্কতায় যেনো ত্রুটি না করি এ বিষয়ে গুরুত্বারূপ করি। আমাদের পরিচিত মাওলানা আসেম জাকি রহ. বিন্নুরি টাউন মাদরাসার অনেক বড় মুহাদ্দিস তিনি এ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই ইন্তেকাল করেছেন। আমাদের আরেকজন আলেম মাওলানা মাজহার সাহেবও করোনায় আক্রান্ত আছেন। এছাড়াও আরো অনেক আলেম উলামা করোনায় আক্রান্ত হয়ে আছেন।
সুতরাং কঠিন এ মহামারীর অবস্থায় আমাদের মাস্ক পরিধানে কেনো এত অবহেলা? বিশেষ করে আমরা যখন জমায়েত হবো অবশ্যই মাস্ক পরিধান করবো। মসজিদ মাদরাসা মাহফিলসহ সর্বত্র মাস্ক পরিধান করতে হবে। আমাদের কারণে যদি এ মহামারী আরো বেড় যায়, তাহলে আমরা গুনাহগা হবো।
জামিয়াতুর রশীদের মুহতামিম মুফতি আবদুর রহীম আমাকে জানান, তাবলিগের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত, তাদের অনেকেরই অবস্থা আশংকাজনক। এজন্য সবসময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
এটাও আমাদের জানতে হবে, অসুস্থতার তিনটি প্রর্যায় হতে পারে। এক. শুধু কাশি ইত্যাদী থাকে, কোনো কষ্ট থাকে না। আল্লাহর দয়ায়, এটা খুবই তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যান। দ্বিতীয়ত শ্বাস কষ্ট বেড়ে যায়, এটা খুবই কষ্টকর বিষয়। এটার জন্য অনেকে প্রথম পর্যায় অক্সিজেন ব্যবহার করে। আর এটার শেষ পর্যায় হলো ভেন্টিলেটর ব্যবহার, ভেন্টিলেটর এটা কেমন আপনারা জানেন। এটা অনেক কষ্টকর একটি চিকিৎসা, আল্লাহ চাইলে অনেকে সে অবস্থা থেকে বের হয়ে আসেন। আর অনেকই মৃত্যু বরণ করেন। যারা জীবিত থাকেন, তারাও অনেক কষ্টকর পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে যেতে হয়।
সুতরাং আমরা যদি এ পরিস্থিতির মধ্যেই বলি, মহামারী বলতে কিছু নেই, তাহলে ভুল হবে। আবার এটাও যদি বলি, মহামারী মসজিদ মাদরসায় নেই। এটাও ভুল ধারণা। মুফতি আবদুর রহিম বলেন, আমরা ৭০ জন ছাত্রকে এ পর্যন্ত করোনার কারণে মাদরাসা থেকে তাদের বাড়িতে পাঠিয়েছি।
এজন্য আল্লাহ তায়ালা আমাদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন। আমরা অবশ্যই ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহর সাহায্য কামনা করবো। সতর্কতা অবলম্বন করবো।
এ পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে, মসজিদে যারা আসবে তারা অবশ্যই মাস্ক পরিধান করে আসা উচিত। মাস্ক ছাড়া মসজিদ ও মাহফিলে আসবে না। করাচিতেও করোনার পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।
এজন্য আমি সবার কাছে করজোড়ে আবেদন করবো, আমরা এ করোনায় সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করবো। সব সময় মাস্ক পরিধান করবো। মাস্ক না পরে কখনো কোনো গণ জমায়েতে যাবো না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এ মহামহারী থেকে হেফাজত করুন। বিশেষ করে যারা বয়স্ক আছেন, তারা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে মাস্ক পরিধান করবেন। সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
এ মহামারী আমাদের গুনাহের কারণেই এসেছে, এর থেকে আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করে আমাদের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করুন। এ কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পরিপূর্ণ সুস্থতার সঙ্গে এ করোনা নামক মহামারী খেকে মুক্তি দান করুন। সব নামাজের পরে আমারা আল্লাহর কাছে দোয়া করবো, যেনো আল্লাহ তায়ালা আমাদের থেকে এ মহামারী দূর করেদেন। আমাদের ক্ষমা করে দেন। আমিন। সূত্র: ইউটিউব
-এটি