কাউসার লাবীব: নাম মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নাম ছাড়া মানুষের পরিচয় হতে পারে না। জীবনের প্রয়োজনে নাম রাখা হয়। মানুষের চিরজীবনের সঙ্গী হয় এ নাম। তবে কোনো কোনো সময় একজন মানুষকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয় অযাচিত অর্থের নাম। যা বেশির ভাগ সময়ই মাবাবা বা অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের অসর্তকতার ফলে হয়। ওরকম অযাচিত অর্থের দুটি নামের সঙ্গে আজ আমরা পরিচিত হবো।
এক- অনেক মানুষ সন্তানের নাম রাখেন, মাহীন। এর অর্থ- হীন, তুচ্ছ, লাঞ্ছিত। সম্ভবত কুরআনে কারীমের ‘মাহীন’ শব্দ শুনেছে, ব্যস, এর অর্থ বা এটি নাম হতে পারে কি না- এসব জানা ছাড়াই সন্তানের নাম রেখে দিয়েছে। মাহীন শব্দটি কুরআনে কারীমের কয়েক জায়গায় এসেছে। উদাহরণ স্বরূপ দু-একটি উল্লেখ করা হল :
সূরা সাজদার ৮ নং আয়াত- ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهٗ مِنْ سُلٰلَةٍ مِّنْ مَّآءٍ مَّهِیْنٍ. (তিনি কাদা হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।) অতঃপর তিনি তার বংশ উৎপন্ন করেন ‘তুচ্ছ’ তরল পদার্থের নির্যাস হতে। এখানে মাহীন অথর্, ‘তুচ্ছ’। সূরা কলাম-এর ১০ নং আয়াত- وَ لَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَّهِیْنٍ. এবং অনুসরণ করো না তার, যে কথায় কথায় শপথ করে, যে ‘লাঞ্ছিত’। এখানে মাহীন অর্থ, ‘লাঞ্ছিত’। এখন বলুন, নাম রাখার আগে যদি কেউ এ বিষয়টি জানত, সে কি নিজ সন্তানের নাম ‘মাহীন’ রাখত!
আর কোনো শব্দ কুরআনে থাকার অর্থই এ নয় যে, তা দ্বারা কারো নাম রাখা যাবে। দেখতে হবে, শব্দটি কোন্ প্রসঙ্গে এসেছে, কী তার অর্থ। ফিরাউন, হামান, কারূন-নামগুলোও তো ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গে কুরআনে এসেছে। আমরা কি এগুলো দ্বারা কারো নাম রাখি?
দুই- এক ব্যক্তির নাম শোনা গেল, জাফী। জাফী শব্দের অর্থ হল, রুক্ষ ও কঠোর স্বভাব-প্রকৃতির ব্যক্তি। এখন ভেবে দেখি, কেউ কি নিজ সন্তানের এমন নাম রাখতে পারে?
আজকাল আনকমন নাম খুঁজতে গিয়ে মানুষ সন্তানের এধরনের নাম রেখে ফেলেন। পরে আফসোস করতে হয়। যখন নাম রাখেন তখন কেবল আনকমন এবং নিজের কাছে শুনতে ভালো লাগছে- এর ভিত্তিতে রেখে দেন, পরে অর্থ খোঁজ করেন। অর্থ জানার পর তিনি নামটি পরিবর্তন করতে চান। এতদিনে তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের মাঝে নামটি প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে। ফলে পেরেশান হতে হয়। নাম পরিবর্তন করা হয় ঠিকই; কিন্তু মানুষ আগের নামেই ডাকতে থাকে। তাই নাম রাখার সময়ই অর্থ জেনে নাম রাখা চাই; যাতে পরে সমস্যা না হয়।
-সূত্র মাসিক আলকাউসার