মোস্তফা ওয়াদুদ: কবুতরকে বলা হয় শান্তির প্রতীক। আগের যুগে রাজা-বাদশাহরা কবুতরের পায়ে বার্তা বেঁধে দিতেন। বলা যায়, তখন বার্তাবাহক হিসেবে কবুতর ব্যবহার করা হতো। অন্যদিকে, রোগীর পথ্য হিসেবেও কবুতরের মাংসের জুড়ি নেই। শখের বসে অনেক তরুণ কবুতর পালন করেন। কবুতর বিক্রি করে নিজেরা চলেন। পরিবার চালান।
সৌখিন কবুতরপ্রেমী অনেকের সফলতাই বলার মতো। সে রকমই একজন কুমিল্লার সদর দক্ষিণের বাজার চোয়ারা পাঠানকোট এলাকার মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান। রাজধানীর বায়তুস সালাম উত্তরা থেকে ২০১৩ সালে দাওরায়ে হাদিস সমাপণ করেন তিনি।
এরপর তিনবছর কুরআনের খেদমাত করেন মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান। সেসময় থেকেই কবুতরের প্রতি প্রেম জন্মে তার। নিজের মাদরাসার বারান্দায় শুরু করেন কবুতর পালন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে কবুতরের সংখ্যা। এরপর কবুতরের প্রেমে জমে যান তিনি। শখ থেকে পেশায় পরিণত হয় তার।
বর্তমানে ১০০ জোড়া কবুতর রাখার খাচা আছে তার। মাত্র পাঁচ বছর আগে ৯০০ টাকায় এক জোড়া ‘দেশী গোল্লা’ কবুতর দিয়ে শুরু করা শখে কবুতর পালন এখন আর শখে সীমাবদ্ধ নেই, পরিণত হয়েছে পেশায়। খরচ বাদে বর্তমানে তার মাসিক আয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রায় ৩ লাখ টাকার কবুতর রয়েছে তার ফার্মে।
তার কবুতরের মাঝে বিভিন্ন বিডের কবুতর রয়েছে। তন্মধ্যে লাহোরি সিরাজি, লাহোরি ব্লাক, লাহোরি রেড, লাহোরি বারলেস, লাহোরি ডান, লাহোরি হলুদ, এরাবিয়ান ককা, আমেরিকান সেইন্ট, বোখারা, জার্মান শিল্ড, বোম্বাই, বোম্বাই রেড, বোম্বাই হোয়াইট, কিং, জার্মানি মডেনা, ফ্রিলব্যাক, জার্মানি আউল ও ফেঞ্চি।
ফেঞ্চি কবুতর পালন করার কারণ হিসেবে তিনি জানান, ‘ফেঞ্চি কবুতরের চাহিদা বেশি, এরা খুব ভালো মানের ডিম দেয় ও বাচ্চা ফোটায়। ২ মাসে এদের বাচ্চা বিক্রি করার উপযোগী হয়। অবশ্য অনেকে এক মাসের বাচ্চাও বিক্রি করে। এছাড়া তার কাছে ইন্ডিয়ান ফান্টেল, তুরিবাজ লাল, ইন্ডিয়ান নোটন, দেশি লোটন, আমেরিকান সো কিং ইত্যাদি প্রজাতির কবুতর রয়েছে। তিনি থাকার ঘরের পাশে আলাদা একটি বড় ঘরে খাঁচায় কবুতর পালন করেন।
মাওলানা মোস্তাফিজ হতে পারেন হাজার হাজার কওমি তারুণ্যের সফল আইডল। তাকে দেখে হতে পারেন সফল উদ্যোক্তা। পালতে পারেন শখের কবুতর।
কিন্তু নতুন কেউ কবুতর কিভাবে পালন করবেন? জানতে চাইলে মাওলানা মোস্তাফিজ জানান, ঢাকা শহরে অসংখ্য ছাদ ফাঁকা পড়ে আছে। এসব ছাদে ঘর তুলে যে কেউ অনায়াসে কবুতর পালন করতে পারে। গ্রামেও ঘর তুলে করা যেতে পারে এর পালন। তার মতে মাদরাসার শিক্ষকরা শিক্ষকতার পাশাপাশি করতে পারেন কবুতর পালন। এতে করে সময়ও কেটে যাব, আবার হালাল রিজিকের ব্যবস্থাও হয়ে যাবে। তারা প্রথমে দু-এক জোড়া কবুতর দিয়ে শুরু করতে পারেন। কবুতর বিনোদনের অন্যতম উৎস। এরা খুব শান্ত ও মায়াবী পাখি। মানুষের সহচার্য খুব পছন্দ করে।
তিনি জানান, বাণিজ্যিকভাবে এই কবুতর পালন করা সম্ভব। বেকার যুবকরা কবুতর পালন করে স্বর্নিভর হতে পারে। তবে এজন্য একটু জেনেশুনে নেওয়া ভালো। ভালো কোয়ালিটির লাহোর বা ফান্টেল কবুতর বেশ লাভজনক। সব সময় এসব প্রজাতির চাহিদা থাকে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আমাদের দেশের কবুতরের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই সরকারি সহযোগিতা পেলে কবুতর রফতানি করে বছরে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কবুতরের অসুখ হলে তিনি নিজেই চিকিৎসা করেন। এছাড়া কবুতরের রিংও তৈরি করেন তিনি। যা কবুতর জন্মের মাত্র আট-নয়দিনের মাথায় পায়ে লাগিয়ে দিতে হয়। এরপর আর সেটা খোলা যায় না। তাছাড়া খাদ্য আমদানিসহ নানান রকমের অনলাইন বিজনেস করে সময় পার হয় এ কওমি তরুণের। মাওলানা মোস্তাফিজের মা ও বড় বোন তাকে কবুতর পালনের কাজে সহায়তা করে।
মোস্তাফিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো, বিশ্বের সকল জাতের কবুতর পালন করবে সে। একদিন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করবে কবুতর। সচল করবে দেশের অর্থনীতির চাকা। মাওলানা মোস্তাফিজ জানান, তার সকল ব্যবসায়িক কার্যক্রম ফেসবুক আইডি ‘মোস্তাফিজুর রহমান’ দিয়েই করেন তিনি।
এমডব্লিউ/