মাওলানা যুবায়ের আহমাদ।।
কলামিস্ট, খতিব ও ইসলামী আলোচক>
মূর্তি আর ভাস্কর্য এক নয়, এমন দাবীকারী এক ভাইকে প্রশ্ন করলাম, ভাস্কর অর্থ কী? তিনি বললেন যিনি মূর্তি বানান তাকে মানে মূর্তি নির্মাতাকে ভাস্কর বলা হয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মূর্তি নির্মাতা যদি ভাস্কর হয়, তাহলে ভাস্কর্য হলো ওই জিনিস যা ভাস্কর বানায় তাহলে মূর্তি আর ভার্সর্যে তফাত কোথায়? তিনি আর কোনো উত্তর দিলেন না।
ভাস্কর্যবিরোধী গণমানুষের একটি বিক্ষোভ হয়েছে। বিশেষ কোনো ব্যক্তির নয়, সার্বিকভাবে মূর্তির বিরুদ্ধে কথা বলছে জনগণ। মূর্তি যারই হোক, ধর্মপ্রাণ মুসলমান তার বিরুদ্ধে। কেন করব না, এ মূর্তিতে কি বঙ্গবন্ধুর বা যার জন্য মূর্তি নির্মাণ করা হয় তার কোনো ফায়দা হয়? বাংলাদেশে যদি বঙ্গবন্ধুর নামে এক কোটি মূর্তিও বানানো হয়, কেও কি বলতে পারবেন এ মূর্তির কারণে পরলৌকিক জীবনে বঙ্গবন্ধুর কোনো উপকার হবে? বরং কোনো ব্যক্তির স্মরণে তার অনুসারীরা মূর্তি বানালে পরলৌকিক জীবনে তার অপকার হবে, এমনটিই কোরআন-হাদিস ও ইসলামিক স্কলারগণ বলেন। তাহলে পরলৌকিক জীবনে বঙ্গবন্ধু অপকার হোক, তা কখনোই বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের শুভাকাঙক্ষী বা অনুসারীরা তা মেনে নিতে পারে না।
মানুষ মারা গেলে তার জন্য কিছু করতে হলে করতে হয় তার ধর্মীয় নিয়মে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। ইসলামের খেদমতে তার অনেক অবদান রয়েছে। তার ভাষা-বক্তব্যে থাকত ইসলামী পরিভাষার ব্যবহার। তার জন্য কিছু করতে হলে উচিত হবে তার ধর্মবিশ্বাস ইসলামের ভিত্তিতেই করা। সরকারের কাছে দাবি, এদেশে বঙ্গবন্ধুর নামে কতকিছু আছে, ঢাকা শহর একটি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জামে মসজিদ, নেই। নেই ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জামিয়া ইসলামিয়া’।
এককোটি মূর্তি বানালেও তার কোনো ফায়দা হবে না, তাতে জনগণেরও কোনো ফায়দা হবে না, কিন্তু তার স্থলে মসজিদ-মাদ্রাসা বানালে কবরে থেকে তিনিও উপকৃত হবেন, জনগণেরও উপকার হবে। আমি ২ বছর আগে আমাদের এলাকার এক মরহুম আওয়ামী লীগ নেতাকে নেতাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলাম। তিনি রাজিও হযেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরই তিনি ইন্তিকাল করেন।
বাংলাদেশে চলমান ভাস্কর্যবিরোধী আন্দালনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যারা, তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, মাঠে বক্তব্যের আগে একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন ছিল। গবেষণা, দলিল, যক্তি ও দরদ দিয়ে এটা বোঝানো প্রয়োজন ছিল, ভাস্কর্য মানেই মূর্তি। এতে মরহুম বঙ্গবন্ধুর কোনো ফয়দা নেই। এজন্য প্রয়োজনে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞদের শক্তিশালী একটি টিম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বোঝানো দরকার। এটিই হবে দাওয়াতের প্রথম মাধ্যম।
দ্বিতীয়ত, সরকারের উচিত ছিল বঙ্গবন্ধুর নামে ভাস্কর্য না বানিয়ে বঙ্গবন্ধুর ধর্ম অনুমোদন করে এমন বিষয়ে মনোনিবেশন করা। সরকার তা করেনি। আমরাই তা করে দেখাতে পারি। মুফতি শাখাওয়াত সাহেব ‘মুজিব মিনার’ নির্মাণের কথা বলেছেন।
আমার অনুরোধ, মূর্তিবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি তরুণ আলেমদের উদ্যোগে রাজধানী ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর নামে একটি মসজিদ ও একটি কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হোক! বাংলাদেশ আমাদের, যুক্তফ্রন্ট থেকে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান-সত্তরের নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা আমাদের। আমরা লাল-সবুজের পতাকাকে বুকে লালন করি। আমরা ইসলামের কথা বলি বাংলাদেশে। দাওয়াতী কাজ করি বাংলাদেশে। আল্লাহকে সিজদা দিই বাংলার মাটিতে। সেই বংলাদেশের জন্য অবদান রেখে কবরে যাওয়া ভাসানী, তর্কবাগিস ও বঙ্গবন্ধুকে বাদ আমরা দিই না। বঙ্গবন্ধুও আমাদের। তাদের স্মরণ করি। মুসলিম এ নেতাদের স্মরণের অংশ হিসেবেই ইসলামী মনীষীদের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু-ভাসানীর নামে মসজিদ নির্মাণও হতে পারে মূর্তিবিরোধী আন্দোলনের একটি কৌশল।
-এটি