মহিউদ্দিন ফারুকী: আমার মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল থিসিস ‘বেফাক’ নিয়ে। বেফাকের সার্বিক শিক্ষা ও বিশেষত আরবি ভাষা শিক্ষার সমস্যা ও সমাধান নিয়ে। কেউ না বললেও বেফাক আমার। তাই বেফাক নিয়ে লিখেছিলাম। সম্ভবত এই থিসিসটি দেশের বাইরে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বেফাক নিয়ে লেখা প্রথম থিসিস। আমার জানা মতে। মহাসচিব সাহেব রহ. ও এমনটিই বলেছিলেন।
মহাসচিব সাহেব রহ. আমাকে অনেক স্নেহ করে বিভিন্ন তথ্য, বই, সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। স্রোতের বিপরীতে এই একজন একনিষ্ঠ খাদেমের রাত দিনের মেহনত মুজাহাদা দেখেছি। তিনি আমাকে অনেক মুহাব্বতের সাথে কাজ এগিয়ে নিতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন।
থিসিসের প্রয়োজনে অনেকদিন বেফাক নিয়ে পড়েছিলাম। কাছে থেকে অনেক অযোগ্য ও অথর্বদের দেখেছি। মহাসচিবের পাশের রুমে তিনিই যখন আমাকে পাঠালেন কিছু তথ্য ও কিছু সিলেবাস এবং কাগজপত্র নিতে তখন সেই দায়িত্বশীলের অযাচিত, মূর্খ অসৌজন্যতা দেখেছি।
যেহেতু আরবি ভাষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক আলোচনা থিসিসে বেশি ছিল, তাই এই দুই অঙ্গনে ঘাপটি মেরে থাকা মূর্খদের পন্ডিতি ও অসদাচরণ দেখেছি। মহাসচিব সাহেব যখন বললেন, আমাদের পরিবর্তি রমজানের শিক্ষক প্রশিক্ষণের পরিকল্পনাটি আপনি করে দেন তখন সেই দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির অসুন্দর বাক্য ও আচরণ দেখেছি।
আরও অনেক কিছু। কিন্তু আমিকি বেফাক নিয়ে বলতে পারবো? থাক ভালোবাসি বলে সেই পুরোনো কিছু লিখতে চাই না।
তবে এখন যাদের বিভিন্ন কীর্তি ফাঁস হচ্ছে তারা মুরুব্বি হিসেবেই ভালো ছিলেন। তারা কখনোই প্রশাসনিক দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত ছিলেন না। তারা বোর্ডের দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্য ছিলেন না। এবং সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বোর্ডের দায়িত্ব নিতে পারেন না।
বোর্ড পরিচালনার যোগ্যতার জন্য কিছু শিখতে হয়। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। সেগুলোও তারা শেখার কোনো সময় সুযোগ করতে পারেননি কখনো। জেনারেল লাইনে এমন পদে থাকারা বুড়ো হলেও দেশে এবং বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে যায়। কিন্তু আমরাতো সব জানি তাই!
এদিকে সময়ের পরিবর্তনে এখলাস ও তাকওয়ার যেই বিষয়গুলো ছিল সেগুলোও বিলুপ্ত হতে চলেছে। লোভ লালসা এখন অনেক বেশি। তাই গোপনে নিলক্ষেতের কাজও এখন দায়িত্বশীলরাই করতে চায় এবং করে দেয়। সীল থেকে প্যাড এমনকি সার্টিফিকেট তারা বানিয়ে দেয়।
একটি ক্লাস বাদ দিয়ে আরেকটি ক্লাসের পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি যখন তারা গোপনেই দিতে পারেন। তখন সেসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মেশকাত কোথায় পড়েছেন জিজ্ঞেস করা অপরাধের কিছু নয়। তাই আমি আমার আদব বিভাগে কয়েকটি মাদরাসার ছাত্রকে তার কয়েক জামাতের পড়ার খবর নেই। কারণ মেশকাত না পড়ে এখন দাওরা চলে।
সার্বিকভাবে এজাতীয় ব্যক্তিরা এমন কার্যকলাপ করে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া, কোনো মিটিং ডাকার অধিকার হারিয়েছেন। তারা নিজেরা মিটিংয়ে বসারও অধিকার হারিয়েছেন। তারা অপরাধী হিসেবে সিদ্ধান্ত শোনার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন। তবে সদস্য হিসেবে বসতে পারেন না।
তারপরও আমাদের পোড়াকপাল বলে একটা বিষয় রয়েছে। সেটা আমাদের জন্যই। দেখা যাবে তারাই সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। তারাই সব করছেন। কোনো জবাবদিহিতা তাদের থাকবে না। এমনকি ইতিমধ্যে গোপনে মিটিং ডাকা ও বড়দের কাছে লোক পাঠানোর সংবাদও শোনা যাচ্ছে।
যদিও মহাসচিব রহ. ইন্তেকাল করায় বেফাক নিয়ে করা আমার থিসিসটি কেউ দেখারও প্রয়োজন মনে করেননি। বেফাকের আরবি ভাষা শিক্ষা ও সিলেবাস উন্নয়নে পরামর্শগুলো শুনতে চায় নি। শিক্ষক প্রশিক্ষণের পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করেনি। তারপরও যেহেতু ভালোবাসা থেকে বেফাক নিয়ে থিসিস করেছি। দেশের বাইরে বেফাককে পরিচয় করাতে চেয়েছি তাই কিছু বিষয় বলা দরকার।
- বেফাককে ঢেলে সাজাতে হবে। দায়িত্বশীল পরিবর্তন করতে হবে। দায়িত্বশীল নির্ধারণ ও নিয়োগের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
- বয়সের একটা সীমারেখা দিতে হবে। এরপর বাধ্যতামূলক অবসর। আরে ভাই মুহাদ্দিসীনদের নিকট হাদিস গ্রহণ বর্জনে বয়সের একটি বিষয় রয়েছে। তাহলে আমরা কোন হনু?
- শিক্ষাবীদদের দায়িত্ব দিতে হবে। বিশেষত উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছেন এমন ব্যক্তিদের প্রধান্য দিয়ে দায়িত্ব দেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
- এখানে বুজুর্গ হলেই দায়িত্ব পাবেন এমনটি যেমন নয়। তেমনি বক্তা, ওয়ায়েজ হলেই তারা বড় হয়ে যাবেন এমনটিও নয়। বক্তা ও রাজনীতিবিদদের দূরে রাখতে হবে। কিন্তু এখানে বক্তা মানেই সব। বড় মানেই সব।
- প্রশাসনিক যোগ্যতা রয়েছে, পরিচালনার দক্ষতা রয়েছে, দেশ বিদেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি, বিভিন্ন দেশের বোর্ড পরিচালনা বিষয়ে ধারণা রয়েছে, আমানতদার এমন ব্যক্তিসহ যারা কোনো মাদরাসার মুহতামিম, নাজেম নয় তাদেরকেই দায়িত্ব দেওয়া অধিক যুক্তিযুক্ত।
জেনারেল লাইনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের দায়িত্বশীলরা কিন্তু কোনো স্কুল বা কলেজের প্রধান নয়। তাই নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে প্রথম বানানোর ইচ্ছা তাদের দেখা যায় না।
- অন্যদিকে কোনো সম্পর্কের ভিত্তিতে এবং সন্তান সন্ততি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। তাদেরকে দূরে রাখতে হবে। তবে যোগ্য হলে অবশ্যই আহলান সাহলান। বরং তারা অগ্রাধিকার রাখেন।
সকলকেই উদ্যোগি হয়ে সকলের এই পরিচয়কে রক্ষা করতে হবে। আমাদের বেঁচে থাকতে হলে আমাদেরকেই বাঁচাতে হবে। নয়তো পরিচয় সঙ্কটে ভুগতে হবে এখানে, সেখানে এবং সবখানে।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ
-এএ