শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘সৌদিআরবে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা দেশে ফিরতে চায়’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাহফুজ আহমাদ।।

সৌদি আরবের আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্কলারশীপ নিয়ে পড়াশোনা করছে প্রায় পাঁচশত বাংলাদেশী মেধাবী শিক্ষার্থী।

মাদীনা বিশ্ববিদ্যালয়, উম্মুল কোরা, কিং সাউদ, কিং আব্দুল আজিজ,দাম্মাম ইউনিভার্সিটি সহ প্রায় ১১টি শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছে।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশী শিক্ষার্থী রয়েছে মাদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বিশ্বের একশত নব্বইটি দেশের বিশ হাজার ছাত্র পড়াশোনা করছে। যার মধ্যে বাংলাদেশি ছাত্রের সংখ্যা প্রায় তিনশো। সৌদিআরব বিশ্বের একমাত্র দেশ; যেখানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি মুল্যায়ন করা হয়। সম্পুর্ণ ফুল-ফ্রি স্কলারশীপের আওতায় ছাত্রদের থাকা খাওয়া, ভাতা ও রেজাল্ট ভিত্তিক আকর্ষণীয় বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা সহ প্রতিবছর দেশে একবার আসা যাওয়ার সুবিধা দিয়ে থাকে সৌদি সরকার।

গত মার্চে সৌদি আরবে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে থেমে যায়নি ইউনিভার্সিটিগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম। অনলাইন জুম এপ, ব্লাকবোর্ডসহ বিভিন্ন এপের মাধ্যমে ক্লাস অব্যাহত রাখা হয়। লকডাউনের ভেতর দিয়ে অনলাইনেই এসাইনমেন্ট, থিসিসসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ পরিচালনা করেছে।

সর্বশেষ গত ২৮ এপ্রিল থেকে নিয়ে ১২ মে ২০২০ পর্যন্ত সকল বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অনলাইন এপ দ্বারা সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয় অথোরিটি।

সৌদি আরবের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত রমজান মাসসহ প্রায় চারমাস গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকে ; তাই এই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক ছুটি কাটাতে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ দেশে ভ্রমণ করে ।

এবছর বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে রমজানের আগেই লকডাউন চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের দেশের ছাত্রদের ফিরিয়ে নেয়। বিশেষত ইউরোপীয়ান দেশগুলো, কানাডা, ফ্রান্স, লন্ডন ও আমেরিকা এবং রাশিয়াসহ বেশ কিছু দেশের ছাত্ররা গত রমজানের আগেই তাদের নিজ দেশে চলে যায়।

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর একে একে প্রায় দেশের ছাত্ররাই তাদের দেশে চলে গেছে ও যাচ্ছে। ছুটিতে শিক্ষার্থীরা নিজ দেশে যাতায়াতের জন্য যে খরচ হয় তা কিন্তু সৌদি সরকারই বহন করে ; তাই তারা তাদের রাষ্ট্রায়ত্ত সৌদি এয়ারলাইন্সের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদেরকে তাঁদের নিজ দেশে পৌঁছে দেয়।

গত দুই সপ্তাহ আগেও মাদীনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতীয় ছাত্রদের নিয়ে একটি ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

কিন্তু আটকে পড়ে আছে শুধু বাংলাদেশী মেধাবী শিক্ষার্থীরা। তাদের দেশে যাওয়ার ব্যপারে একটি স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনার ব্যপারে মান্যবর রাষ্ট্রদূতসহ বাংলাদেশ এম্বাসিতে চাকরিরত ব্যক্তিবর্গের সাথে বিভিন্নসময় যোগাযোগ করা হলেও তারা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্বারোপ করেননি। তারা বরং শিক্ষার্থীদেরকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

বারংবার নক করা হলে দুতাবাসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয়। যা মাদীনা ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশী ছাত্র প্রতিনিধি জাকারিয়া আব্দুল জলীলের মাধ্যমে দেয়াও হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও কোনো ধরণের দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।

বাংলাদেশ সরকার হয়তো সাধারণ প্রবাসীদের সাথে স্টুডেন্ট এর বিষয়টিকে গুলিয়ে ফেলেছে। অথচ ছাত্রদের সাথে রেমিট্যান্স বিষয়ের নুন্যতম কোনো সম্পর্ক নেই।

তাছাড়া নির্ধারিত ছুটির সময়ে শিক্ষার্থীরা দেশে ফিরতে না পারলে ছুটি শেষে ফিরতেও পারবে না। আগস্টের পর থেকে নিয়মিত একাডেমিক কার্যক্রম আবার শুরু হবে।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা দেশে আসতে চায় তাদের সবার খুরুজ আওদা (আসা যাওয়া) মাস খানেক আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এয়ার ফ্লাইট চলার অনুমতি না থাকায় শিক্ষার্থীদেরকে এয়ার টিকেট দিতে পারছেনা ভার্সিটি কতৃপক্ষ।

এমতাবস্থায় শুধুমাত্র বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন লেটার পাঠালে সৌদি সরকার তাদের নিজেদের ব্যায়ে এয়ার ফ্লাইটে ছাত্রদেরকে দেশে পৌঁছে দিতে পারে।

শুধুমাত্র একটি অনুমোদন না পাওয়ায় ছাত্ররা দেশে যেতে পারছেনা বলে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সৌদিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী ছাত্রদের এখন একটাই প্রশ্ন; আমাদেরকে সরকার মুল্যায়ন করছেনা কেন? আমরা কি এদেশের সন্তান নই?
নাকি শুধুমাত্র সৌদিতে পড়াশোনা করার কারণে আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি?

অথচ আমরা জানি কিছুদিন আগে কানাডায় অধ্যয়নরত স্টুডেন্টদের নিয়ে বাংলাদেশে একটি বিশেষ ফ্লাইট দেশে এসেছে। এছাড়া আরো কয়েকটি দেশের স্টুডেন্টদের আসার সংবাদও আমরা মিডিয়ায় পেয়েছি।

শিক্ষার্থীদের বক্তব্য: ভার্সিটির ক্যম্পাসে সেফ কোয়ারেইন্টানে থাকা এখন আর আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে ছুটির সময়টুকু নিজের পরিবার থেকে দূরে থাকায় তা কাটানো আমাদের জন্য দিন দিন দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।

আমাদের অনেকের দেশে পরিবার পরিজন আছে। এছাড়া প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো ব্যক্তিগত কাজ রয়েছে। তাছাড়া ২০১৯ সালের শেষে গ্রাজুয়েশন সম্পন্নকারী ও চলতি বছরের মে মাসে যারা গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন তারা স্কলারশিপের আওতাভুক্ত সুবিধা না পাওয়ায় নিজেদের খরচ বহন করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

তাই ছাত্রদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি এবং দায়িত্বশীলদের প্রতি জোর দাবী আমাদেরকে যেনো খুব শীগ্রই দেশে আসার পারমিট দেওয়া হয়। আমরা দ্রুত দেশে ফিরতে চাই। যেহেতু আন্তর্জাতিক বিশেষ ফ্লাইট চালু রয়েছে, তাই আমরা বিশেষ ফ্লাইটের আওতায় দেশে ফিরতে চাই।

এছাড়া সৌদিতে আমাদের দেশের অনেক রেমিট্যান্স যোদ্ধা, অসহায় মানুষজন ও অসুস্থ ব্যক্তিরা টাকার অভাবে চিকিৎসা পাচ্ছে না। তাদেরকেও দ্রুত নিজ মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।

মাদীনা ইউনিভার্সিটির তরুন মেধাবী সদ্য শিক্ষা সমাপনকারী গ্রাজুয়েট মো: ফুয়াদ হাসান, ফয়সাল আহমাদ শাকিল, শামসুল আরেফীন প্রমুখ জানান ;আমরা এ বছর শিক্ষা সমাপন করেছি, ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আমাদের ভিসাও দিয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের জাস্ট একটি অনুমোদন না পাওয়ার কারনে আমরা দেশে ফিরতে পারছি না। আমরা যেকোনো উপায়ে দেশে ফিরতে চাচ্ছি। বর্তমানে প্রবাসে বেকার জীবন কাটানো আমাদের জন্য অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দাম্মাম ইউনিভার্সিটি থেকে মুফতী আব্দুল্লাহ আল ফারুক জানান; আমাদের ইউনিভার্সিটিতে আজ থেকে একমাস পুর্বে পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আমাদের জন্য ভিসাও দিয়ে রেখেছে।

এমনকি বিভিন্ন দেশের ছাত্ররা দেশে চলেও গেছে। ভার্সিটি ফাঁকা হয়ে আছে। এভাবে একাকী জীবন যাপন আমাদেরকে মানসিকভাবে দূর্বল করে দিচ্ছে। তাই সরকারের কাছে জোর দাবী জানাই; আমাদেরকে যেকোনো মুল্যে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা হোক।

মাজমা ইউনিভার্সিটি থেকে সালমান আহমদ জোয়ারদার জানান; আমাদের ইউনিভার্সিটির প্রায় সবদেশের ছাত্ররা তাদের দেশে চলে গেছে। আমরা ভিসা পাওয়ার পরও দেশে ফিরতে পারছি না; তা সত্যিই দুঃখজনক। আমরা সরকারের দায়িত্বশীল মহলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ; আমাদেরকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা হোক। আমাদের ছুটির সময় হয়ে গেলে নিকটতম সময়ে আর ছুটি পাবো না। তখন পরবর্তী একবছর পর আবার দেশে যাওয়ার সুযোগ পাবো ।

মাদীনা ইউনিভার্সিটির তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে নাজিউর রহমান, হাফিজুর রহমান, আহমাদ মুয়াজ, মো: উবায়দুর রহমান মোহাম্মদ হাসানাইন ও মিজানুর রহমান জানান; আমাদের ভার্সিটির একাডেমিক কার্যক্রম আজ প্রায় একমাস আগেই শেষ হয়ে গেছে। ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আমাদের জন্য ভিসাও দিয়ে রেখেছে, কিন্ত জাস্ট বাংলাদেশ সরকারের একটি অনুমোদন না থাকায় আমাদের দেশে ফেরা হচ্ছে না। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি, আমাদেরকে দেশে ফেরার জন্য অনুমোদন পত্র প্রদান করা হোক। আমরা অবিলম্বে দেশে ফিরতে চাই।

লেখক: আল-হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মাদীনা মুনাওয়ারা সৌদিআরব।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ