মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চক্রান্তের ফাঁদে না পড়ে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণের আহ্বান শায়খ আহমাদুল্লাহর ভোলায় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও স্মরণসভা চরমোনাইর বার্ষিক অগ্রহায়ণ মাহফিল বুধবার, চলছে সর্বশেষ প্রস্তুতি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান আসিফ মাহমুদের অসহায় শীতার্তের পাশে মাওলানা গাজী ইয়াকুবের তাকওয়া ফাউন্ডেশন দেশের তিন জেলায় শিক্ষক নিচ্ছে ‘আলোকিত মক্তব’ বৃদ্ধার দাড়ি টেনে ছিঁড়ে ফেলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবন্ধীদের ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষা দিতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে: ধর্ম উপদেষ্টা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না: মাওলানা আরশাদ মাদানী গওহরডাঙ্গা মাদরাসার ৮৯তম মাহফিল শুরু আগামীকাল

রমজানের শেষ দশকের ফজিলত ও তাৎপর্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আল্লামা শায়খ সাজিদুর রহমান।।

الحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، وعلى آله وصحبه ومن والاه، أما بعد

আমাদের উপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দয়া ও অনুগ্রহ কত অপরিসীম, আমরা এটা কল্পনাও করতে পারি না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কতভাবে যে বান্দার প্রতি মমতা ও ভালোবাসার আচরণ করেন, এসব আমরা ভেবেও শেষ করতে পারবো না।

বছরের বারো মাসের মধ্যে একটি মাস, রমজান মাসকে আল্লাহ বিশেষভাবে মর্যাদাবান করেছেন, অন্যান্য মাসের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তেমনিভাবে রমজানের দুই দশকের তুলনায় শেষ দশকে আল্লাহ তাআ‘লা বিশেষ ফজিলত রেখেছেন। এই দশকে বান্দাদের উপর আল্লাহর দয়া ও করুণা অঝোর ধারায় বর্ষিত হয়ে থাকে।

হাদীসের কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী এই শেষ দশকেই লাইলাতুল কদর, যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে আল্লাহ বলেছেন, এই শেষ দশকেরই কোনো এক রাত হয়ে থাকে। এই জন্য আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দশ দিনের আমলের বিষয়ে অত্যন্ত যত্নবান হতেন।

আয়েশা রাযি. এর বিবরণটি শুনুন, কী চমৎকার অলঙ্কারমণ্ডিত প্রকাশ- عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ‏.‏

রমজানের শেষ দশক যখন শুরু হতো, তখন তিনি (পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে) কোমর বেঁধে আমল-ইবাদতে নিমগ্ন হতেন। রাতভর জেগে জেগে ইবাদত-বন্দেগী করতেন। সে সময় তো তিনি তার পরিবারের লোকদেরকেও নামাজের জন্য, ইবাদতের জন্য জাগিয়ে দিতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৭৪)

বস্তুত রমজানের শেষ দশকের ফযীলত ও উপকার লাভের জন্যই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই উদ্যোগ-আয়োজন। মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আম্মাজান আয়েশা রাযি. এরই বর্ণনা, كانَ رَسولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عليه وسلَّمَ يَجْتَهِدُ في العَشْرِ الأوَاخِرِ، ما لا يَجْتَهِدُ في غيرِهِ.

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ দশকে আমল-ইবাদতের এত সাধ্য-সাধনা করতেন যা রমজানের অন্য দিনগুলোতে করতেন না। সহীহ মুসলিম, হাদীস১১৭৫

আমাদের সবার করণীয়, রমজানের বিশটি দিন তো চলেই গেলো, এখন আমরা যেন রমজানের ফযীলত অর্জনের ব্যাপারে আরো বেশি মনোযোগী হই, আরো বেশি তৎপর হই। যাদের সাধ্য আছে, আমরা ইতিকাফের নিয়ত করে মসজিদে চলে আসি।

শেষ দশকে ইতিকাফের যে সুন্নত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দান করেছেন, তা মূলত এই শেষ দশকের ফায়দা লাভের জন্যই। লাইলাতুল কদর, যে রাতের বিষয়ে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, এই রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এই এক রাতের ইবাদতের ফজিলত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।

লাইলাতুল কদর ঠিক কোন রাত্রি, এটা সুনির্দিষ্ট করে বলা হয় নি। তাহলে তো অনেক মানুষ অন্য কোনো দিনের ইবাদতের বিষয়ে যত্নবান না হয়ে শুধু একটি রাতের বিষয়েই যত্নবান হতে দেখা যেত। এই জন্য এই রাত্রিটিকে কিছুটা অস্পষ্ট রেখে দেওয়া হয়েছে।

কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, কুরআন নাজিল হয়েছে লাইলাতুল কদরে। আবার অন্য এক আয়াতে এসেছে, রমজান হলো কুরআন নাজিলের মাস। তাহলে বোঝা গেলো, লাইলাতুল কদর রমজানেরই কোনো এক রাত হয়ে থাকে।

এদিকে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদীসে ইরশাদ করেন, تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ

তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করো।

অন্য হাদীসে শেষ দশকের বেজোড় রাত্রের কথা আলাদাভাবে উল্লেখিত হয়েছে, عَن عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ "‏‏.‏

কোনো সৌভাগ্যবান বান্দা যদি আল্লাহর তাওফীকে লাইলাতুল কদরের রাত পেয়ে যায়, তাহলে তো সে হাজার মাসের, আশি বছরের বেশি সময়ের সওয়াব অর্জন করতে পারবে।

তো ইতিকাফের সুন্নত এই জন্যই চালু হয়েছে, যেন শবে কদরের অন্বেষণের ক্ষেত্রে বান্দা আলাদাভাবে সচেষ্ট হতে পারে। এই সময় বান্দা দুনিয়ার সব ছেড়ে, সব ভুলে আল্লাহর ঘরে এসে পড়ে থাকবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করবে, বেশি বেশি তিলাওয়াত, যিকির ও নফল নামাজের বিষয়ে যত্নবান হবে, তাওবা-ইস্তিগফারের বিষয়ে, নিজের গুনাহের মার্জনার ব্যাপারে বেশি বেশি আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করবে।

ইতিকাফের বিষয়ে ফিকহে ইসলামীতে আলাদা অধ্যায় রয়েছে। সেখানে এই বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর বিধানগুলো বিস্তৃত আকারে সন্নেবেশিত রয়েছে। একজন মু‘তাকিফ, যিনি ইতিকাফ করতে যাচ্ছেন, তাকে অবশ্যই ইতিকাফের বিধানসমূহ বিস্তারিত জানতে হবে, তাহলেই তার ইতিকাফ সুন্নাহ মোতাবেক হবে, আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার বেশি উপযুক্ত হবে।

লেখক: মুহতামিম, জামিআ দারুল আরকাম আল-ইসলামিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও শায়খুল হাদিস, জামিয়া ইউনুছিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ