মুফ্তি হেলাল উদ্দীন হাবিবী।।
সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্যে রাতের শেষাংশে জাগ্রত হয়ে খাবার গ্রহণ করাকে সাহরী বলা হয়। সাহরী একটি বরকতময় আমল, মহানবী (সা.) এর সুন্নাত এবং পবিত্র মাহে রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত; যার মাধ্যমে সাধনা পিয়াসী মুমিন বান্দাগণ রোজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন।
মহানবী (সা.) নিজে সাহরী খেতেন এবং সকলকে সাহরী খাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করতেন। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা সাহরী খাও, নিশ্চয় সাহরীতে বরকত রয়েছে। (বুখারী, মুসলিম)
হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহরীর সময় আমাকে ডেকে বললেন, হে আনাস! আমি রোজা রাখার ইচ্ছা করেছি, আমার সামনে কিছু খাবার পরিবেশন কর। আমি তাঁর সামনে শুকনো খেজুরের একটি পাত্র এবং পানি পরিবেশন করলাম। অতঃপর তিনি হযরত বেলাল (রা.) এর (তাহাজ্জুদের) আযানের পর সাহরী গ্রহণ করলেন। (সুনানে নাসায়ী)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, সাহরী একটি বরকতময় খাবার। তাই তোমরা কখনো একে বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা এবং তাঁর ফেরেশ্তাগণ সাহরী গ্রহণকারীদের প্রতি রহমত নাযিল করেন। (মুসনাদে আহমদ)
আরামের নিদ্রা বর্জন করে রাতের শেষ সময়ে জাগ্রত হয়ে সাহরী খাওয়া এক প্রকার সাধনা ও ইবাদত। এর দ্বারা শেষ রাতে জাগ্রত হওয়ার অভ্যাস হয় এবং তাহাজ্জুদের মাধ্যমে ¯্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়। রাতের শেষাংশে দেরি করে সাহরী খাওয়া সুন্নাত। মহানবী (সা.) সর্বদা রাতের শেষ সময়ে সাহরী খেতেন; এতে রোজা রাখা অধিকতর সহজ হয়, শরীর ও মন সতেজ থাকে, সারাদিন ইবাদত-বন্দেগী করার সক্ষমতা ঠিক থাকে এবং ফজরের নামাযের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় না।
প্রিয় পাঠক! মহান আল্লাহ তা’আলা রোজা ফরজ করেছেন বান্দাকে কষ্ট দিতে নয়; বরং সিয়াম সাধনার মাধ্যমে কলুষিত অন্তর আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা এবং আত্মিক উন্নতি দানের মাধ্যমে আদরের বান্দাকে জান্নাতের উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা মহান ¯্রষ্টার উদ্দেশ্য। তাই তিনি সাহরী ও ইফতারীর স্বতন্ত্র ফজিলত ঘোষণা করেছেন। অবহেলা বা অলসতাবশতঃ এই বরকতময় আমল থেকে আমরা কেউ যাতে বি ত না হই, সে ব্যাপারে সবার সচেতন থাকা একান্ত কাম্য।
প্রিয় পাঠক! সিয়াম সাধনার সুবিধার্থে সাহরী সংক্রান্ত কয়েকটি জরুরী মাসআলা আপনাদের খেদমতে উপস্থাপন করছি। ১. সাহরী খাওয়া সুন্নাত। ক্ষুধা না থাকলে একটি খেজুর বা এক গ্লাস পানি দ্বারা হলেও সাহরী করা উত্তম। ২. রাতের শেষ লগ্নে সাহরী খাওয়া সুন্নাত। তবে এতো দেরি করা ঠিক নয় যে, রোজার সহিহ্ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয়।
৩. সাহরীর সময় জাগ্রত হতে না পারলে, না খেয়েই রোজা রাখতে হবে। ৪. কেউ যদি সময় আছে ভেবে সাহরী খায়, অতঃপর জানতে পারে সাহরীর সময় ছিল না। তবে এ রোজা কাযা করতে হবে, কাফ্ফারা দিতে হবে না। ৫. সাহরীর শেষ সময় হল সুবহে সাদিক। সুতরাং সুবহে সাদিকের পর পানাহার করা জায়েয নেই। চাই আযান হোক বা না হোক।
মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের প্রতিটি আমলকে প্রিয়নবী (সা.) এর সুন্নাত অনুযায়ী বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন।
লেখক: মুফাস্সিরে কুরআন ও ইসলামী গবেষক, খতিব, মাসজিদুল কুরআন জামে মসজিদ, কাজলা(ভাঙ্গাপ্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা। প্রিন্সিপাল, মারকাযুল উলূম আজিজিয়া মাদরাসা কাজলা(ভাঙ্গাপ্রেস),যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
-এটি