শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলাম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা সাইফুল ইসলাম ফরিদপুরী।।

আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য সৃষ্টি জীবের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম সৃষ্টিজীব হল মানব সম্প্রদায়। আর মানব জীবনে আল্লাহ তায়ালার অন্যতম নেয়ামত হল স্বাস্থ্য এ স্বাস্থ্যের নেয়ামতের বিষয়ে অসতর্কতা ও অবহেলা সম্পর্কে সতর্ক করে রাসূলে কারীম (সাঃ) বলেন "দুটি নিয়ামতের বিষয়ে অধিকাংশ মানুষই অসতর্ক ও প্রতারিতঃ সুস্থতা ও অবসরতা" (বুখারী)

ইসলামী জীবন ব্যবস্থা আমাদেরকে এমন একটি জীবন পদ্ধতি শিক্ষা দেয় যদি কোন মানুষ ইসলামের এ শিক্ষাকে ন্যূনতমভাবেও মেনে চলে তাহলে সে সুস্বাস্থ্য লাভ করবে। মানব জীননে খাদ্য ও পানীয় মানুষের সুস্থতা ও অসুস্থতার অন্যতম উপাদান। আর ইসলাম এ বিষয়ে মধ্যপন্হা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছে, ক্ষতিকারক খাদ্য খেতে নিষেধ করেছে অতিরিক্ত পানাহার নিরুৎসাহিত করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন " তোমরা খাও এবং পান কর এবং অপচয় করো না নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না "। ইসলামে পবিত্র ও উপকারী খাদ্য হালাল করা হয়েছে এবং সকল ক্ষতি কারক ও নোংরা খাদ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, জীবনের জন্য খাদ্য, খাদ্যের জন্য জীবন নয়।

প্রিয় পাঠক পানাহারের পাশাপাশি নিয়মিত পরিশ্রম ও বিশ্রাম সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। ইসলামী জীবনপন্থায় এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ইসলামে অলসতা কে অত্যন্ত ঘৃণা করা হয়েছে রাসূলে কারীম (সাঃ) সর্বদা অলসতা থেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চাইতেন। ইসলামী জীবন বিধান অনুসরণ করলে অলসতার কোন সুযোগ নেই ইসলামের নিয়মিত ইবাদত, বিশেষত পাচ ওয়াক্ত নামাজ অন্যান্য নফল নামাজ তাহাজ্জুদ নামাজ মানুষের পরিশ্রমের প্রাথমিক চাহিদা পূরণ করে এবং অলসতার পথ বন্ধ করে দেয়। এছাড়া ইসলাম ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে নিজের সকল কর্ম নিজে করতে উৎসাহ দিয়েছে রাসূলে কারীম (সাঃ) শরীরচর্চা মূলক খলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ, সাতার ইত্যাদিতে বিশেষ উৎসাহ দিয়েছেন।

নিয়মিত পরিশ্রমের পাশাপাশি তিনি নিয়মিত বিশ্রাম ও ঘুমের জন্য বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন। ইবাদতের আগ্রহে বা অন্য কোনো অগ্রহে যেন কেউ বিশ্রাম ও ঘুমের ক্ষেত্রে দেহের ন্যূনতম চাহিদা অবহেলা না করে সে বিষয়ে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূলে কারীম (সাঃ) বলেন তোমার উপরে তোমার চক্ষুর অধিকার রয়েছে তোমার দেহের অধিকার রয়েছে তোমার স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার রয়েছে তোমার মেহমানের অধিকার রয়েছে তোমার বন্ধুর অধিকার রয়েছে। (বুখারী)

মানুষের স্বাস্থ্য নষ্ট হওয়ার আরেকটি কারন অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন। বস্তুত একজন মুমিনের পক্ষে অনিয়ন্ত্রিত জীবন কোনোমতেই সম্ভব নয়। নামাজ,রোজা,খাওয়া,ঘুম,বিশ্রাম,পরিশ্রম, পারিবারিক জীবন ইত্যাদির মাধ্যমে ইসলামে মুমিনের জন্য এমন একটি রুটীন নির্ধারন করে দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত জীবন বা জীবনের প্রতি স্বেচ্ছাচারিতার কোনো সুযোগ নেই।

অসুস্থতার অন্যতম কারন অপরিচ্ছন্নতা, যা ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংশ। ইসতিনজা,মেসওয়াক, ওযূ,গোসল, পোশাক-পরিচ্ছদের পবিত্রতা ইত্যাদি বিষয় যদি মুমিন সঠিকভাবে সুন্নত নির্দেশিত পদ্ধতিতে আদায় করেন তবে তিনি সহজেই অপরিচ্ছন্নতা জনিত রোগব্যাধি থেকে সাধারণভাবে নিরাপদ থাকতে পারবেন। পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক ইসলাম নির্দেশিত আরেকটি কর্ম খাতনা করা। আধুনিক বিজ্ঞান নিশ্চিতরুপে প্রমান করেছে যে,খাতনা শিশু,কিশোর ও বয়স্ক সকলকেই এইডস সহ অনেক মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করে।

অসুস্থতার আরো একটি অন্যতম কারন অশ্লীলতা। আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতায় অশ্লীলতার পথ খোলা রেখে অশ্লীলতা প্রসূত রোগব্যাধিগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়।এ হলো নৌকার ছিদ্র খোলা রেখে পানি তুলে ফেলে নৌকা বাচানোর চেষ্টার মতই অবাস্তব কর্ম। হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে কোনো সমাজের অশ্লীলতার প্রসার ঘটলে সে সমাজে আল্লাহ তায়ালা শাস্তি হিসেবে নতুন নতুন মারাত্মক রোগব্যাধি প্রসার ঘটে।

প্রিয় পাঠক দৈহিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতা মানুষের জন্য অপরিহার্য। বরং মানসিক সুস্থতা দৈহিক সুস্থতার পূর্বশর্ত। প্রকৃতিপক্ষে মনই মানুষের দেহ নিয়ন্ত্রণ করে। মানসিক প্রশান্তি, স্থিরতা, উৎফুল্লতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সুস্থতা অর্জনের জন্য দেহের অভ্যন্তরীণ মেকানিজমকে আগ্রহী করে তোলে। পক্ষান্তরে মানসিক উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা দেহের অসুস্থতা ত্বরান্বিত করে।

অসুস্থতার আরেকটি কারন স্বাস্থ্য বিষয়ক অসতর্কতা। বিভিন্ন হাদীসে মুমিনদেরকে স্বাস্থ্য বিষয়ে সতর্কতা অবলম্ব করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।যেমন খাদ্য ও পানীয় আবৃত করে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষত রাত্রিকালে খাদ্য বা পানীয় অনাবৃত করে রাখতে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে। খাদ্য বা পানীয়ের মধ্যে শ্বাস প্রশ্বাস ফেলতে বা ফুঁক দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কঠিন রৌদ্রতাপ থেকে সাধ্যমত আত্মরক্ষা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ময়লা হাত পানিতে প্রবেশ করাতে নিষেধ করা হয়েছে। কুকুরের ঝুটা পাত্র মাটি ও পানি দিয়ে ৭ বা ৮ বার ধৌত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডান হাতকে খাওয়া দাওয়া ও বাম হাতকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত জানা মুমিনের প্রয়োজন।

লেখক: যুগ্ম সম্পাদক হেফাযতে ইসলাম ফরিদপুর জেলা শাখা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ