মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
অদ্ভুত এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে জনগণের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত ওলামায়ে কেরাম প্রতিষ্ঠিত কওমি মাদরাসাগুলো। এই সঙ্কট নজিরবিহীন। পূর্ব প্রস্তুতি বা বিকল্প না থাকার সাথে সাথে জনগণের আর্থিক অবস্থাও খারাপ হয়ে পড়ায় কওমি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাদরাসা-ছাত্রাবাস ছাড়তে হয়েছে। শিক্ষকদের নূন্যতম খরচ বহনে অসমর্থ হয়ে পড়ায় অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার আশংকায় পড়ে গিয়েছে।
বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে কওমি মাদরাসার সংখ্যা প্রায় ৪০০০০। অন্যদিকে সংসদে দেয়া তথ্যানুযায়ী সংখ্যা ১৪ হাজার ৩৯৭টি। শিক্ষার্থী প্রায় ১৮ লক্ষ। বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী ২৫ লক্ষ। ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ধারার মাদরাসাসমূহ কখনোই সরকারী অনুদানের মূখাপেক্ষী ছিল না। জনগণের অনুদানেই পরিচালিত হয়ে আসছিলো এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ।
অধিকাংশ মাদরাসার সারা বৎসরের পরিচালনা ব্যয়ের মূল অংশটুকুই আসতো রমজান মাসে। বিগত কয়েক বছরই কুরবানীর সময়ের আয়ের বিরাট অংশ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল সরকারী বিভিন্ন সিদ্ধান্তহীনতায়। তবুও মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষারথীদের চাহিদা লালসার চাহিদা না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষতার সাথে ই পরিচালিত হচ্ছিলো।
কিন্তু বর্তমানে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অনির্দিষ্ট কালের জন্য মাদরাসাগুলো বন্ধ থাকায় রমজানের সময়ের সংগৃহিত অনুদান পাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা, কর্মহীনতাসহ নানাবিধ কারণে বহু মানুষ অনুদান দেয়ার সামর্থ্যও হারিয়েছেন। আর মানুষ নিজেরাই যখন সমস্যায় থাকবে তখন সহযোগিতা করবে কিভাবে?
সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবস্থা ইতিহাসের করুণতম অবস্থায় পৌছুবে। এহেন অবস্থায় করুণতম অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সংশ্লিষ্টদের জীবন প্রতিনিয়তই জটিলতম বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি সরকার বিষয়গুলো জানেন এবং সম্যক উপলব্ধি করছেন। বিষয়গুলো যথাসময়ে সঠিক চিন্তা ও বাস্তবতার আওতায় না আনতে পারলে সামনে ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে।
সাথে সাথে মাদরাসা যারা পরিচালনা করেছেন তাদের প্রতিও অনুরোধ, সরকার কি করবেন তার অপেক্ষায় না থেকে নতুন চিন্তায় অগ্রসর হোন।
লেখক: চেয়ারপার্সন, হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন।
-এটি