আহমাদ গালিব।।
মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের অনেক গুরুত্ব আছে। হাদিস শরিফে এ বিষয়ে তাগিদ এসেছে। এটি অবশ্যই অনস্বীকার্য। কিন্তু কখনো কখনো মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের বাধ্যবাধকতা রহিত হয়ে যায়। যেমন: প্রবল বর্ষণ, ঘোর অন্ধকার, শত্রুর ভয়, মৃত্যুভয় অর্থাৎ মারা যাওয়ার মতো পরিস্থিতি এবং হিংস্র প্রাণীর ভয় ইত্যাদি।
বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে যে প্রাণঘাতী মহামারি দেখা দিয়েছে এতে সাধারণ গণজামায়েতের মতো মসজিদে নামাজের জামাতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাটিও যৌক্তিকভিত্তিতে ভাবা হচ্ছে। পবিত্র মক্কা নগরীতে সমবেত হওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কুয়েতের মসজিদে মসজিদে আজানের মধ্যে হাইয়া আলাস সালাহ না বলে বলা হচ্ছে- ‘আসসালাতু ফি বুয়ূতিকুম’। এমন অনেকগুলো বিষয়- যা এখানে উল্লেখ করছি না- যেগুলোকে আমাদের অতি আবেগি বন্ধুগণ অবিবেচনায় বলে দেবেন- 'ইহুদী-নাছারার চক্রান্ত।'...
শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো সস্তা আবেগ দিয়ে বিবেককে আচ্ছন্ন করে রাখার নির্বুদ্ধিতা প্রদর্শন আলেমদের ক্ষেত্রে বড্ড বেমানান। এমন ভাব প্রদর্শন অবশ্যই অনুচিত যে বিশ্ব কিছু বোঝে না, যা কিছু বোঝার আমিই তো বুঝি...
আল্লাহ মাফ করুন। মানুষের পাপের কারণে পৃথিবীতে যে দুর্যোগ নেমে এসেছে তা কল্পনা করা যায় না। আমার এই তিন যুগের জীবদ্দশায় আমি তো দেখিইনি- ইতিহাসে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে কিনা তা আমার অজানা। পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ তা আমরা হয়তো উপলব্ধিই করতে পারছি না।
ইতালি ফ্রান্স স্পেনের মতো ইউরোপের সমৃদ্ধ দেশগুলো নাকানি-চুবানি খাচ্ছে। প্রচুর ক্ষমতাধর সমৃদ্ধিশালী এসব দেশে চিকিৎসাব্যবস্থার যথেষ্ট অগ্রগতি থাকা সত্বেও পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাদের বিদগ্ধ ব্যক্তিবর্গের কেউ কেউ এই বলে সরকারের সমালোচনা করছেন যে বিষয়টিকে আরো আগে গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিলো। কিছুটা অবহেলা হয়ে গেছে। আমাদের এই স্বল্প সম্পদের দেশটিতে ভয়ঙ্কর এই ভাইরাসটির মোকাবেলায় কিছুটা অবহেলা অবশ্যই আছে। আশা করবো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ দ্রুতই পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণের সর্বাত্মক প্রয়াস নেবেন...
সচেতন থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা কেনো পালন করা প্রয়োজন তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আমি এখানে করছি না। এই মুহূর্তে একটি দৃষ্টান্ত মনে পড়ছে যা ইনকিলাবে প্রকাশিত হয়েছে। ইনকিলাব পত্রিকা রিপোর্ট করেছে যে, বৃটেনের একটি গোপন নথি ফাঁস হয়ে গেছে। ফাঁস হওয়া সেই নথি থেকে জানা গিয়েছে যে এই মহামারী ব্রিটেনে আগামী ২০২১ সালের বসন্ত পর্যন্ত কার্যকর থাকার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এতে বৃটেনের ৮০% লোক আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে আছে যাদের ৭৯ লক্ষ জন জরুরী চিকিৎসা নিতে হাসপাতালগুলোতে আসবে। তাদেরকে চিকিৎসা প্রদান করতে সরকারকে কঠিন চাপের মধ্যে পড়ে যেতে হবে...
তাদের যদি এই অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয় তাহলে আমরা কি ঐশী কোনো বাণী দ্বারা নিরাপদ আছি যে আমাদের কোনো আশঙ্কা নেই? আমি মূলত এখানে বলতে চাচ্ছি যে আবেগ নয়, বিবেককে জাগ্রত রাখি। জ্ঞান ও শরীয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করি। সেইসঙ্গে পৃথিবীর বাস্তবতা উপলব্ধি করার চেষ্টা করি...
বেফাকের সিদ্ধান্ত আসার আগেই ভাবছি, আমার পরিচালিত মাদরাসাটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এখনই বন্ধ ঘোষণা করবো। আর নিরবে নিভৃতে একান্ত মুনাজাতে রবের কাছেই ফিরে আসবো যেনো আমরা সবাই মুক্ত থাকি ও মুক্তি পেয়ে যাই।
-এএ