মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী।।
সব কিছু ছাপিয়ে এখন পত্রিকায়-আলোচনায় একটাই ইস্যু করোনা ভাইরাস। প্রথম দিকে তেমন সাড়া জাগাতে না পারলেও এখন করোনাই আলোচনার প্রধান বিষয়। লোকের মুখে মুখে আর মিডিয়ার পাতাজুড়ে কোথাও অন্য কোন কিছুর ঠাঁই নেই। করোনা ভাইরাস নিয়ে আমাদের আতংকের মাত্রাটা বেড়েছে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিন জন রোগী সনাক্ত হওয়ার পরপরই। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আক্রান্তরা হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন। এছাড়া কোয়ারেন্টাইনে আছেন আরও দুই জন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজন যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা।
এই মুহূর্তে আমাদের মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের উপর ভরসা করা খুব বেশি জরুরী। পাশাপাশি সতর্কতা হিসেবে আমাদের আচরণগত পরিবর্তনগুলোও খুব জরুরী। হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় মুখটা ঢেকে রাখা, যেখানে-সেখানে থুথু না ফেলা আর প্রতিবার বাইরে থেকে এসে বা খাওয়ার আগে ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ সেকেন্ড ধরে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে রাখার মতো ব্যক্তিগত সু-অভ্যাসগুলোয় অভ্যস্ত হতে হবে এখন থেকেই। ফেস মাস্ক ব্যবহার করা যেতেই পারে। তবে মনে রাখতে হবে এটি কোন আলটিমেট সলিউশন নয়। কাজেই বাজারে বাজারে মাস্কের পিছনে ছুটে মাস্কের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিতে ভূমিকা না রাখাই বোধ করি ভাল।
আল্লাহ মানুষকে নানা বিপদ-আপদ দিয়ে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, "অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করবো ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জীবনের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে ধৈর্যধারণকারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত নং- ১৫৫)।
বস্তুত মানুষের পাপের পরিমাণ যখন ব্যাপক আকার ধারণ করে, তখনই কেবল আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বিভিন্ন মহামারি দিয়ে পরীক্ষা করেন। তাদেরকে পাপের পথ থেকে ফিরে আসার সুযোগ দেন। বিপদের সম্মুখীন হয়ে বান্দা কী আচরণ করে, এটা তিনি দেখতে চান। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, "যেসব বিপদাপদ তোমাদের স্পর্শ করে, সেগুলো তোমাদেরই কৃতকর্মের কারণেই। আর অনেক গুনাহ তিনি (আল্লাহ) ক্ষমা করে দেন।" (সূরা আশ-শুরা, আয়াত নং- ৩০)।
রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, "যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তা ছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।" (সুনানে ইবনে মাজাহ)।
যে কোনো বিপদ-আপদে মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দুই পক্ষ বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির দু’প্রান্তে অবস্থান করে। তৃতীয় পক্ষ মধ্যপন্থা অবলম্বন করে থাকে। একপক্ষ শুধু ভরসা করে কিন্তু বাহ্যিক কোনো উপায় অবলম্বন করে না। আরেক পক্ষ নানাপন্থা অবলম্বন করলেও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে না। যা সম্পূর্ণ বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি পর্যায়ে।
অপরদিকে মধ্যপন্থা অবলম্বনকারীদের বৈশিষ্ট্য হলো, তারা আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখার পাশাপাশি সুরক্ষার নিমিত্তে পূর্ণ সতর্কতা নিয়ে নানা উপায় অবলম্বন করে। আর এটাই ইমানের দাবি।
বাহ্যিক উপায় অবলম্বনে নিজেকে জীবাণুমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। আবর্জনার মাধ্যমে ভাইরাস যেন সংক্রমণ না হতে পারে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সতর্কতামূলক এ সব ব্যবস্থা গ্রহন করা সুন্নাহরই অংশ। তবে সর্বপ্রথম অবশ্যই মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে।
মনে করতে হবে এই মহামারী আমাদের গোনাহের কারণে এসেছে। তাই অবনত মস্তকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাইতে থাকা। বেশি বেশি জিকির করতে হবে এবং গুনাহ একেবারেই বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
নামাজের মাধ্যমে বেশি বেশি মহান আল্লাহর কাছে বিপদ থেকে পরিত্রাণ প্রার্থনা করতে হবে। পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, "আর তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও।" (সূরা আল-বাকারা, আয়াত নং- ৪৫)।
আশা করা যায়, এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভয়াবহ করোনা ভাইরাস থেকে আমাদের হেফাজত করবেন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
-এএ