আওয়ার ইসলাম: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে বিজ্ঞানীদের মতে, কোনো পশু থেকে রোগটি মানুষের শরীরে ছড়িয়েছে। এরপর এ সংক্রমণ ছড়িয়েছে মানুষ থেকে মানুষে। আবার অনেকে ধারণা করছেন, কিছু সামুদ্রিক প্রাণী, যেমন বেলুগা জাতীয় তিমি করোনা ভাইরাসের বাহক হতে পারে।
বাংলাদেশে তিনজন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এ সময় আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি।
একইসঙ্গে সংবাদমাধ্যম সিএনএন করোনা আক্রান্ত দেশগুলোকে এ মহামারি ঠেকাতে ১০ সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
১. সরকারকে সঠিক তথ্য জানানো: কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে সরকারকে সব সময় সঠিক আক্রান্তের সংখ্যা জানাতে হবে। জনগণকে রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে আগে থেকে জানালে রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে। জনগণ এবং অভ্যন্তরীণভাবে সরকারকে কঠিন সত্যগুলো জানালে ভুল পদক্ষেপ নেয়া এড়ানো যায়।
২. সামাজিক দূরত্ব তৈরি: শারীরিক সংস্পর্শ থেকে করোনা ছড়ায়। এক্ষেত্রে সরকার বা জনগণকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে পদক্ষেপটি নিতে হবে সেটি হলো সামাজিক দূরত্ব তৈরি করা। অর্থাৎ নিজের এবং অন্যের মধ্যে দূরত্ব রাখা এবং যেখানে গেলে অনেক লোকের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা রয়েছে সেরকম পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা।
৩. আগে থেকে প্রস্তুতি: কোয়ারেন্টাইন সেন্টার বানানো, আগাম অতিরিক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিসহ আন্তবিভাগীয় সরকারি জরুরি সেবা কমিটিগুলো গঠন করে সরকারকে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
৪. যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করা: করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় করোনার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিতেই যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করানোর জন্য উৎসাহিত করতে পারেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় জেলাসহ সারাদেশে পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা রাখতে পারে। এতে কেউ আক্রান্ত হলে সাথে সাথে জানা যাবে।
৫. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক চর্চার প্রচার: অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হাঁচিকাশির সময় নাক এবং মুখ ঢাকা, চোখ অথবা মুখে হাত না দেয়া এবং যেসব জায়গা হাত দিয়ে ধরা হয় সেগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকা সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে।
৬. কর্মীদের কাজের ব্যাপারে নমনীয়তা: গত এক মাস যাবত এশিয়ার লক্ষাধিক মানুষ বাড়ি থেকে কাজ করছে বা সুবিধামত কর্মঘণ্টা নিয়ে কাজ করছে। কিছু প্রতিষ্ঠান খুব বেশি প্রয়োজনীয় নয় এমন কর্মীদের বাড়ি পাঠিয়েছেন। আবার অনেকে কর্মীদের গ্রুপ করে আসার সময় ভাগ করে দিয়েছে। এতে করোনা মহামারি ঠেকাতে সাহায্য করেছে বলে জানিয়েছেন আক্রান্ত দেশগুলো।
৭. ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কেনাকাটা না করা: হংকংয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কেনাকাটা করে দোকান খালি করার হিড়িক পড়েছিল। এতে অহেতুক বিশৃঙ্খলা ও ভীতি সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে ভীতসন্ত্রস্ত না হয়ে সতর্ক থেকে করোনা মোকাবিলা করতে হবে।
৮. পোষা প্রাণীদের ভয় না পাওয়া: পোষা প্রাণীদের মাস্ক পরিয়ে রাখুন অথবা ছেড়ে দিন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মূল বিষয়গুলো মেনে চলুন। পোষা প্রাণী ধরার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন। বাইরে থেকে ফেরার পর এদের পায়ের নিচের অংশ অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ধুয়ে দিন।
৯. রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ না করা: বিশেষজ্ঞরা রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। এই রোগ প্রতিরোধে কোয়ারেন্টাইন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এটি করতে গিয়ে রোগীদের অসম্মান করা যাবে না।
১০. আতঙ্কিত না হওয়া: ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রস্তুতির পাশাপাশি আতঙ্কিত না হওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বর্তমান তথ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার প্রায় ৩.৪ শতাংশ যা ইনফ্লুয়েঞ্জার চেয়ে বেশি কিন্তু সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটোরি সিনড্রোম) এবং মার্স (মিডিল ইস্ট রেসপিরেটোরি সিনড্রোম) এর চেয়ে অনেক কম। এগুলোর মৃত্যুহার যথাক্রমে ৯.৬ শতাংশ ও ৩৫ শতাংশ।
-এএ