আওয়ার ইসলাম: লক্ষ্মীপুরে রোগমুক্তি, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল ও চাকরিসহ বিভিন্ন নিয়ত পূরণ হওয়ার আশায় মসজিদ ধুয়ে পানি পান করতে আসছেন দূর দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ। অনেকে মনের আশা পূরণের জন্য বোতলে করে পানি নিয়ে যান বাড়িতে।
গত ২০ দিন ধরে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ছেরাজ আমিন জামে মসজিদ ধুয়ে দিতে ভিড় জমান নারীরা। আধপাকা মসজিদটি ধোয়ার জন্য এখন পুরুষদেরও দেখা মিলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফজরের নামাজ শুরুর আগেই বিভিন্ন বয়সী কয়েকজন নারী-পুরুষ মসজিদ ঘরের পাশে পুকুর থেকে জগ ও ছোট কলসিতে পানি নিয়ে নেমে পড়েন মসজিদ ধোয়ার কাজে। পুকুর ও নলকূপ থেকে হিসেব করে তিন জগ কিংবা তিন কলসি পানি নিয়ে এসে ঢেলে দেন মসজিদের দরজা, বারান্দা এবং মেহরাবে। মসজিদ থেকে গড়িয়ে পড়া কিছু পানি বোতলে নিয়ে নেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বহু বছর (আনুমানিক ১৯৫০ সাল) আগে মেঘনা নদী ভাঙতে ভাঙতে বর্তমান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ এলাকায় পৌঁছায়। তখন ভবানীগঞ্জ এলাকার করিম বক্স জামে মসজিদটি নদী ভাঙনের কবলে পড়ে।
পরবর্তীতে কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নতুনভাবে স্থাপন করা হয়। মসজিদের নতুন স্থানটি জনৈক ছেরাজ আমিনের দখলে ছিল। তাই এর নামকরণ করা হয় ছেরাজ আমিন মসজিদ। মসজিদটি প্রথমে খড়ের ছাউনির থাকলেও পরে টিনের ছাউনি দেয়া হয়। অন্যান্য মসজিদের ন্যায় সাধারণ মসজিদ ছিল এটি।
কমলনগরের হাজিরহাট থেকে ছুটে আসা মধ্যবয়সী নারী জেবুন্নেছা জানান, তিনি মসজিদ ধোয়া কিছু পানি বোতলে ভরে নিয়েছেন। রোগ মুক্তির লক্ষ্যে বাড়িতে গিয়ে সেগুলো পান করবেন।
আব্দুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, তার এসএসসি পরীক্ষা চলছে। মা-বাবার কথা মতো সে পরীক্ষার ভালো করার নিয়তে মসজিদ ধুয়েছে।
মসজিদ এলাকার বাসিন্দা সালেহা বেগম জানান, তরুণী থেকে বৃদ্ধা সকল বয়সের নারী বিভিন্ন নিয়তে এখানে আসছে। তবে এখন নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও আসা শুরু হয়েছে।
বর্তমানে প্রতি শুক্রবার পূর্বের তুলনায় লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে মসজিদ ধোয়া পানি বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন খাওয়ার নিয়তে।
গ্রামের শাহে আলম জানান, তিনি শুনেছেন প্রায় ২০ বছর আগে বর্তমান ইমামের বাবা নাকি স্বপ্ন দেখেন, যেসব নারী শুক্রবার এ মসজিদ ধুয়ে দেবেন বিনিময়ে তার মনের আশা পূরণসহ রোগমুক্তি হবে। এ কথাটি কোনও এক নারীর কান হয়ে এখন হাজার হাজার নারীর কানে পৌঁছে গেছে। এখন প্রতি শুক্রবারই শতশত নারী ছুটে আসছেন মনের আশা পূরণের জন্য।
লক্ষ্মীপুর তিতাঁখা জামে মসজিদের খতিব মো. হারুনুর রশিদ জানান, বায়তুল্লাহ শরীফ, মসজিদে নববী ও বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ ছাড়া পৃথিবীর সকল মসজিদ একরকম। এছাড়াও মসজিদ ধুয়ে রোগমুক্তি কামনা নেহাত একটি কুসংস্কার। এটিকে বিদা’ত হিসেবে ধরা হয়।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল গফফার বলেন, মসজিদ ধোয়া পানি পানে রোগমুক্তি সম্ভব নয়। বরং ময়লা পানি পান করলে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য গুজবে কান না দিয়ে ময়লা পানি পান করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে নিয়ত করে মসজিদ ধোয়াকে ধর্মীয় কুসংস্কার ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ আখ্যা দিয়ে তা বন্ধ করতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয় মুসল্লিরা।
আরএম/