নুরুল্লাহ্ আশরাফী
দেওবন্দ থেকে
সিএএ এবং এনআরসির বিরুদ্ধে দিল্লির শাহীনবাগ, দেওবন্দের ঈদগাহ্ এবং ভারতের অন্যান্য স্থানে অনশনরত মুসলিম নারীদের এক ভিডিও বার্তায় অনশন শেষ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মুফতি আবুল কাসেম নোমানী।
সেই বক্তব্যের জেরে মুহুর্তেই পুরো ভারতজুড়ে মুসলমানদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি দিনভর বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন, ইমেইল আসতে শুরু করে দারুল উলুমের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে।
দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্রদের মাঝেও গুঞ্জন শুরু হয়। এমনকি মুহতামিম মাওলানা আবুল কাসেম নোমানীর এই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এ দিন বাদ মাগরিব দাওরায়ে হাদিসের ছাত্ররা পুরাতন দারুল হাদিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
বিভিন্ন জায়গা থেকে সেই বক্তব্যের উপরে আপত্তি আসার পরে দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মুফতি আবুল কাসেম নোমানী এক বিবৃতিতে সেই বক্তব্য থেকে ফিরে আসেন।
তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ইতিমধ্যে আমার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওর বক্তব্য ছিলো সাহারানপুর জেলা প্রশাসনের অনুরোধে দেওবন্দের শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য।
তিনি বলেন, আমার বক্তব্যের উদ্দেশ্য এটা ছিলো না যে, দারুল উলুম দেওবন্দ সম্মানিতা মা-বোনদের এই অনশন বন্ধ করুক। আমার বক্তব্যকে ভারতীয় মিডিয়া ভুলভাবে উপস্থাপন করে মুসলমানদেরকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলেছে। আমি মিডিয়ার এমন কর্মকান্ডের নিন্দা জানাই।
তিনি আরও বলেন, শেষ কথা হলো, যে কাজটা করার প্রয়োজন আমাদের পুরুষদের, সেটা করছে আমাদের মা-বোনেরা। দারুল উলুম দেওবন্দ সমস্ত বিক্ষোভকারীদের সফলতা কামনা করছে!
এদিকে এনআরসি বাতিলের জন্য চলমান আন্দোলনকে জারি রাখার আহ্বান জানিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো অন্য এক বিবৃতিতে মাওলানা আবুল কাসেম নোমানী বলেন, “এখনও পর্যন্ত এনআরসি সমগ্র ভারতে জারি করার কোনও ফায়সালা করা হয়নি” তে আশ্বস্ত নয়। সিএএ এবং এনআরসি জাতীয় পর্যায়ের একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। এটাকে হালকাভাবে কখনই নেওয়া যেতে পারে না।
সিএএ প্রত্যাহার এবং এনআরসি আগামীতে কখনই জারি না করার পরিপূর্ণ বিশ্বাস হাসিল না হওয়া পর্যন্ত সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার প্রয়োগ করতঃ তার বিরুদ্ধে আমাদের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া উচিত।
দারুল উলূম দেওবন্দ রাষ্ট্রপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে পূর্বেই সিএএ প্রত্যাহার করার বিষয়ে স্মারকলিপি পেশ করেছে। জাতীয় পর্যায়ের এই আন্দোলন ভারতবর্ষের সংবিধান এবং তার প্রাণ বাঁচানোর আন্দোলন।
সাথেসাথে আমি (আচার্য) ব্যক্তিগতভাবে এটাকেও একপর্যায়ের সফলতা মনে করছি যে, সরকার এই বিষয়ে কিছুদিন আগ পর্যন্ত এক ইঞ্চি সরে আসার জন্য প্রস্তুত ছিল না, অথচ এখন এনআরসির বিষয়ে সুর নরম করতে বাধ্য হয়েছে।
নিঃসন্দেহে পুরোপুরি আশ্বস্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন এবং অবস্থান বিক্ষোভ সমাপ্ত করার কোনও আবেদন করা যেতে পারে না। আমার যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, দেওবন্দের উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারদের সাথে দেওবন্দ শহরে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার বিষয়ে একটি আলোচনা সভা পর্যন্ত তার ব্যাপ্তি।
যেখানে নিজস্ব আলাপচারিতায় বলা আমার কথাকে এই বার্তায় পরিণত করা যে, দারুল উলুম দেওবন্দ মহিলাদের আন্দোলনকে সমাপ্ত করে দেওয়ার আবেদন করেছে, সম্পূর্ণ ভুল এবং এর কোনও ভিত্তি নেই। আমার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
এখানে এটা স্পষ্ট করা হচ্ছে যে, দারুল উলূম দেওবন্দ আন্দোলন এবং প্রদর্শন শেষ করার কোনওরকম আবেদন করেনি। আমরা সমস্ত আন্দোলনকারীদের জন্য প্রার্থনা করি এবং তাদের সফলতার প্রত্যাশা রাখি।
আরএম/