মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার ১ম দিনের বাদ ফজর বয়ান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালের ইজতেমায় ১ম দিন শুক্রবার বাদ ফজর আগত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেন পাকিস্তান তাবলিগ জামাতের শূরা সদস্য মাওলানা খুরশিদ আলম। আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য হুবহু বয়ানটি অনুবাদ করেছেন আবদুল্লাহ তামিম।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ। রাসুল সা. বলেন قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ।
মুহতারাম প্রিয় ভায়েরা আমারা, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার মহান অনুগ্রহ ও নবি সা. এর মেহনতের কারণে আজ এ বিশাল ময়দানে একত্রিত হওয়ার তাওফিক দিয়েছেন। আজ এ মহান মজলিসে আসমান থেকে ফেরেশতারা নেমে এসেছে। আর তারা দোয়া করছে যেনো আল্লাহ তায়ালা পুরা জামাতের সব মানুষকে হেদায়েত দান করেন।
আমাদের এখানে একত্রিত হওয়ার সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হলো আল্লাহকে রাজিখুশি করা। আল্লাহর হেদায়াতের পথে চলা। আল্লাহ যেনো আমাদের উপর রাজিখুশি হয়ে যান। আল্লাহর হেদায়াত পাওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা আমাদের এ মজলিসে আসার তাওফিক দিয়েছেন এটা আল্লাহ তায়ালার একান্ত অনুগ্রহ। আল্লাহ আমাদেরকে এ মাঠে শুধু তাকে রাজি খুশি করার জন্যই অবস্থান করার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমাকে যারা ভালোবাসে আমি তাদের উপর আমার রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করতে থাকি। যারা আল্লাহর পথে এক দাপ এগিয়ে আসে আল্লাহ তার দিকে দশ দাপ এগিয়ে আসে। আজ এ বিশাল বড় মজমায় একত্রিত হওয়ার উদ্দেশ্য যদি হয় আল্লাহকে রাজি করা। তাহলে আল্লাহ আমাদের উপর আল্লাহর বিশেষ রহমত নাজিল করবেন।
আল্লাহ তায়ালা মানুষের আমল ও ইবাদতের প্রতি খুবই যত্নবান। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দার আমলে সবচেয়ে বেশি খুশি হোন। রাসূল সা.একবার মসজিদে আসলেন এসে দেখলেন মসজিদে বেশ কয়েকজন সাহাবি বসে আছেন, আল্লাহর রাসূল জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা এখানে কেনো বসে আছো, তোমারা কি করছো।
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি পবিত্রতা বর্ণনা করছি। কারণ আল্লাহ আমাদের ঈমানের মত মহামূল্যবান সম্পদ দিয়েছেন। ইসলাম দিয়েছেন মুসলিম বানিয়েছেন।
আল্লাহর রাসুল সা. বললেন আল্লাহর কসম তোমরা কি শুধু একারণেই এখানে একত্রিত হয়েছো? এখানে বসে আছো? সাহাবায়ে কেরাম বললেন জি রাসুলুল্লাহ আমরা এখানেই এখানে বসে আছি।
রাসুল সা. বললেন, তোমাদের এ মজমা আল্লাহর কাছে অনেক অনেক দামি। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের এ মজমায় আল্লাহর রহমত নাজিল করছেন। আর আল্লাহ তোমাদের এ কাজে সন্তুষ্ট হয়ে ফেরেশতাদের কাছে খুশি প্রকাশ করছেন।
আজ আমরা এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জণের জন্য এখানে একত্রিত হয়েছি এটাও আল্লাহকে রাজিখুশি করারই জন্য। আমাদের এ মজমার উসিলায় সা পৃথিবীর হেদায়াতের মাধ্যম বানান।
সাহাবায়ে কেরাম একবার রাসুল সা. এর দরবারে উপস্থিত হলেন, তখন রাত ছিলো, সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে রাসুল সা. আপনি কি ঘরে যাবেন না? তখন তিনি মসজিদে ছিলেন, রাসুল সা. বললেন তোমরা কি এমন কোনো রাত অতিবাহিত করতে পারো যে রাত্রিটা শুধু আল্লাহর জন্য হবে। তখন সাহাবায়ে কেরাম বুঝলেন, তারা মদিনা থেকে অনেক দূরে গিয়ে রাত্রি যাপন করলেন। ইবাদত বন্দিগিতে রাত্রি শেষ করলেন। আর আমরাও এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ শুধু আল্লাহর জন্য রাত্রি যাপন করতে এসেছি। সুতরাং এটাও নাবি ওয়ালা ও সাহাবা ওয়ালা কাজ।
হাদিসে আসছে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি রহম করেন যারা মানুষের প্রতি রহম করেন। তাই আজ এ মাঠে আমরা একে অপরের সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো। একরাম করবো। মানুষ তার সাধ্যমত মানুষের উপর রহম করলে আল্লাহ আমাদের উপর তার মহানুভবতার মত রহম করবেন। আখেরাতে এরজন্য আল্লাহ আমাদেরকে সফলতা দান করবেন। আর এ রহমের দ্বারা আল্লাহ তায়ালা আমাদের রিজিকের দরজা খুলে দিবেন। আর সমস্ত মাখলুককে আপনার পেছনে আপনার খেদমতে লাগিয়ে দিবেন।
আল্লাহ আমাদের হেদায়াতে পথে পরিচালিত করেছেন। এটা আমাদের উপর অনেক বড় ইহসান। আর তাই এ বিশাল বড় মজমায় আল্লাহ আসার তাওফিক দান করেছেন। এজন্য শুকরিয়া আদায়া করতে হবে। আর এখান থেকে হেদায়াতি বয়ান ও আল্লাহর রাস্তায় জীবন অতিবাহিত করার সবক নিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।
-এটি