রকিব মুহাম্মদ ।।
সম্প্রতি বেসরকারি এক টেলিভিশন চ্যানেলে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-কে জঙ্গিনেতা আখ্যা দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে। উপমহাদেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই শীর্ষস্থানীয় আলেমকে হুজির প্রতিষ্ঠাতা ও নেতৃত্বদানকারী আখ্যায়িত করে প্রতিবেদন প্রচারে ফুঁসে উঠেছে আলেম-ওলামা, মাদরাসা শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা।
এ ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। গণমাধ্যমের পেশাদারিত্বও নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। টিভি চ্যানেলটি পরিকল্পিতভাবে এ দেশের ওলামায়ে কেরাম সম্পর্কে বিষোদগার করছে বলেও দাবি করেন তারা।
প্রতিবেদনে কী ছিল?
‘পুনরায় সক্রিয় হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন’ শিরোনামে বেসরকারি টিভিতে প্রচারিত ভিডিও প্রতিবেদনটির শুরুতে বলা হয়, “দেড় দশকে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ২০ জনেরও বেশি দলীয় প্রধান গ্রেপ্তার হয়েছে, কিন্তু পরবর্তী ধাপের নেতারা আবার ঠিকই সচল করেছে সংগঠন…।”
এ ভূমিকা টানার পর প্রতিবেদক বলেন, “আফগান ফেরত কথিত মুজাহিদরা দেশে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে গঠন করেন হরকতুল জিহাদ বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠাতা শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক।”
এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে দেশের শীর্ষ কয়েকজন জঙ্গি সংগঠনের তালিকা ও সংগঠনের প্রয়াত আমির ও বর্তমান নেতাদের নাম প্রকাশ করা হয়। নেওয়া হয় বিশিষ্টজনদের মন্তব্যও।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড়
এ প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতী মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ এক পোস্টে এ প্রতিবেদনের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি লেখেন, শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. গণমানুষের কাছে শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্মানিত একটি নাম। তিনি ছিলেন এদেশের ইসলামী রাজনীতির একজন অবিসংবাদিত নেতা। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ শায়খুল হাদীসের সাথেই পাঁচ দফার চুক্তি করেছিলেন। সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। এরকম একজন কিংবদন্তি প্রয়াত শীর্ষস্থানীয় আলেম নেতা মরহুম হওয়ার পরও হলুদ মিডিয়ার চরম মিথ্যাচার থেকে রেহাই পেলেন না!
মুফতী ফয়জুল্লাহ বলেন, সর্বজনশ্রদ্ধেয় শায়খুল হাদীসকে জঙ্গিনেতা আখ্যা দিয়ে মিথ্যা বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রচারের জন্য যমুনা টিভিকে অবশ্যই নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। সংশ্লিষ্ট টিভি কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, তাদের মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন দেশে বিদ্যমান গণমাধ্যম আইন ও সম্প্রচার নীতিমালাসহ প্রচলিত ফৌজদারি আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, যমুনা টিভি দেশের আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে এহেন মিথ্যা অপমানজনক, মানহানিকর, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকবে
শায়খুল হাদিস কে ছিলেন?
শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এ দেশের শীর্ষস্থানীয় একজন মনীষী আলেম ছিলেন। প্রসিদ্ধ হাদিসগ্রন্থ বুখারি শরিফের প্রথম বাংলা অনুবাদক হবার পাশাপাশি তিনি অর্ধ শতাব্দীরও বেশিকাল বুখারি শরিফের দরস দিয়েছেন। হাদিসশাস্ত্রে বিশেষ পাণ্ডিত্যের জন্য তাকে ‘শায়খুল হাদিস’ উপাধি দেওয়া হয়।
১৯৮৮ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরে সাত মসজিদের পাশে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া গড়ে তোলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ মাদরাসার প্রিন্সিপাল এবং শাইখুল হাদিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি মালিবাগ জামিয়া শারইয়্যাতেও প্রিন্সিপাল হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। শাইখুল হাদিসকে কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি আদায়ের সংগ্রামী সিপাহসালার বলা হয়।
রাষ্ট্রের প্রচলিত সকল আইন মেনে এ দেশে ‘ইসলামি হুকুমাত’ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি কাজ করেছেন আজীবন।খেলাফত মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা ও আমির ছিলেন। দলটি বাংলাদেশ সরকারের সকল নিয়ম কানুন মেনে নির্বাচন কমিশনের একটি নিবন্ধিত বৈধ ইসলামি রাজনৈতিক দল। বর্তমানে তাঁর ছেলে মাওলানা মাহফুজুর হক দলটির নেতৃৃত্বে আছেন।
শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. চারদলীয় জোটের চার নেতার একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। তিনি ইসলামী ঐক্যজোটেরও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১২ সালের৮ আগস্ট প্রায় ৯৫ বছর বয়সে শায়খুল হাদীস রহ. আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান।
বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসে প্রতিবাদ কর্মসূচি
শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করার প্রতিবাদে আজ বাদ আসর মোহাম্মাদপুরের আল্লাহ করীম জামে মসজিদে বিক্ষোভ মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস।
আজ ( ২ ডিসেম্বর) দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা আওয়ার ইসলামকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানান, সরকারি এক টেলিভিশন চ্যানেলে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-কে জঙ্গিনেতা আখ্যা দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে। উপমহাদেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই শীর্ষস্থানীয় আলেমকে হুজির প্রতিষ্ঠাতা ও নেতৃত্বদানকারী আখ্যায়িত করে প্রতিবেদন প্রচারে আমরা আজ বিক্ষোভ করব।
তারা আরও জানান, প্রতিবেদন প্রচারকারী টিভি কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় আমরা এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।
আরএম/