আমিনুল ইসলাম হুসাইনী
আলেম ও সাংবাদিক
এই যে অবাক পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে গড়ে ওঠা শত শত তিলোত্তমা নগরী। নয়নাভিরাম শহর বন্দর। তার কোনোটাতেই মন ভরে না প্রকৃত মুমিনের। শীতল হয় না নয়নযুগল। কারণ তাদের অন্তরে যে অঙ্কিত হয়ে আছে ইসলামের প্রাণকেন্দ্র পবিত্র মক্কা মদীনা।
স্বপ্নের রঙ-তুলিতে আাঁকা ছবি দু’টি যেন একাকার হয়ে আছে তাদের মানসপটে। তাই তো মুমিন মাত্রই হৃদয়ের সঞ্চিত সবটুকু ভালবাসা অর্পণ করে এই মক্কা ও মদীনায়। আর দু’হাত তুলে মনের আকুতি জানিয়ে বলে, ‘প্রভু হে দয়াময়! জীবনে অনন্ত একটি বার হলেও তোমার ঘর কাবা আর তোমার হাবিবের রওজা মদীনা মুনাওয়ারার সামনে গিয়ে নিজ চোখকে শীতল করার তাওফিক দাও।
মুমিনের এ প্রেমতৃষ্ণা ফোরাবার নয়। এ যে হৃদয়ের তীর্থ। আর এই তীর্থের মর্যদা সবার ঊর্ধ্বে।
কিন্তু সম্প্রতি ইসলামের শত্রুরা মক্কা মদীনা থেকে মুসলমানদের দূরে সরিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। অনেকে মক্কা মদীনার বর্তমান পরিস্থিতিকে কিয়ামতের পূর্বাভাস বলে অরাজকতার পায়তারা করছে। কেউ কেউ তো আবার হাদিসকেও টেনে আনার হীন চেষ্টা করছে।
প্রিয় পাঠক! তাহলে আসুন হাদীস থেকেই জেনে নিই, কেয়ামতের আগে কী রকম হবে পবিত্র মক্কা মদীনার পরিবেশ। অথবা মক্কা মদীনার বর্তমান পরিস্থিতি হাদিসের উল্লেখিত ঘটনাই কী না তা জেনে নিই।
রাসূল সা. কিয়াামতের আলামত স্বরূপ কয়েকটি ঘটার কথা উল্লেখ করে গেছেন। সেসব ঘটনার একটি হলো মদীনায় ঈমানের প্রত্যাবর্তন।
হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন,‘নিশ্চয় (কিয়ামতের পূর্বাক্ষণে) ঈমান মদীনা মুনাওয়ারার দিকে এমনভাবে প্রত্যাবর্তন করবে, যেমন সাপ তার গর্তে প্রত্যাবর্তন করে।’ (বুখারি : ১৮৭৬)
আলহামদুলিল্লাহ! উপরোক্ত হাদিসের উপসর্গ যে এখনই প্রকাশ পায়নি তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায়। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে কম বেশি সত্যিকারের মুমিন মুসলমান নেই। যেখানে কালেমার দাওয়াত অব্যাহত নেই। কম বেশি সব জায়গায় ঈমানদারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কিয়ামেেতর পূর্বাভাসে আরো যে সকল হাদিস রয়েছে তন্মধ্যে কয়েকটি হলো দাজ্জালের আবির্ভাব ও মক্কা মদীনায় প্রবেশ করতে না পারা। উপরোক্ত হাদীস অনুযায়ী যখন পৃথিবী থেকে ঈমানদারদের সংখ্যা কমে যাবে বা ঈমান মদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে, তখন আবির্ভাব হবে এক ভয়ঙ্কর কাফেরের। যার নাম হবে দাজ্জাল।
সে নিজেকে খোদা বা প্রতিপালক বলে দাবি করবে। এক চোখ বিশিষ্ট এই দাজ্জাল খোরাসান থেকে বের হয়ে মসজিদে আকসা, তুর পাহাড়সহ সারা পৃথিবী চষে বেড়ালেও পবিত্র মক্কা মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না।
হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. এর সূত্রে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরাশাদ করেন, ‘এমন কোনো শহর নেই, যেখানে দাজ্জাল প্রবেশ করবে না। তবে মক্কা মুকাররমা ও মদীনা মুনাওয়ারা ছাড়া। কেননা মক্কা ও মদীনার প্রতিটি প্রবেশদ্বারে ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে পাহারারত থাকবেন। তার পর মদীনা শরীফ তিনবার কেপে উঠবে। তখন সব কাফের ও মুনাফিক বের হয়ে যাবে।’ (বুখারি : ১৮৮১)
হেজাজ থেকে আগুন বের হওয়া : হযরত আবু হুরাইরা রা. এর সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন,‘ততোক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতোক্ষণ পর্যন্ত হেজাজের জমিন থেকে এমন ভয়াবহ আগুনের আবির্ভাব হবে না, যার ফলে বুসরার উটের গর্দানও আলোকিত হয়ে যাবে।’ (বুখারি : ৭১১৮)
কিয়ামতের আগে কাবা শরীফ ধ্বংস প্রাপ্ত হবে : হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে আরেকটি হাদিসে জানা যায়, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, ‘(কিয়ামতের পূর্বে) কাবা শরীফকে হাবশার (বর্তমানে আবিসিনিয়া) জনৈক ব্যক্তি ধ্বংস করবে। যার পা হবে চিকন।’ (বুখারি : ১৫৯১)
প্রিয় পাঠক! আশা করি এখন আর বুঝতে বাকি নেই, যে বা যারা বর্তমান সৌদি আরবের রাষ্ট্রিয় সমস্যাকে ‘কিয়ামতের পূর্বাভাস’ ডাহা মিথ্যে রটাচ্ছে তারা আর যাইহোক ইসলাম বা মুসলমানের শুভাকাঙ্খী হতে পারে না। তারা এই সকল ষড় যন্ত্র করে মুসলমানদের মন থেকে পবিত্র মক্কা মদীনার যে প্রেম রয়েছে তা উপড়ে ফেলতে চাচ্ছে।
অথচ রাসূল সা. বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ! ততোদিন পর্যন্ত কিয়ামত আসবে না, যতোদিন পর্যন্ত না এই দীনের ব্যাপ্তি (মক্কা মদীনা) দিন ও রাতের দূরত্বে পৌঁছবে।’ এখানে ‘দিন ও রাতের দূরত’ বলতে মূলত মনের দূরত্বকেই বুঝানো হয়েছে। কেন না মনের দূরত্বই বড় দূরত্ব।
এভাবে দূরত্ব হতে হতে এক সময় ঈমানের মূল স্তম্ভ হজ থেকেও মুসলমানরা দূরে সরে যাবে। তাই আসুন আমরা লোকের কথায় কান না দিয়ে নিজ ঈমানকে সুদৃঢ় করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের ঈমানের হিফাজত করুন। আমিন।
লেখক : ইমাম ও খতিব, বাইতুল আমান জামে মসজিদ। বাঙ্গরা, কুমিল্লা।
আরএম/