আওয়ার ইসলাম: শয়তান কিয়ামত পর্যন্ত মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে। মানুষের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শয়তান চেষ্টা করে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে।
হাদিসে এসেছে, জান কবজের সময় শয়তান মৃত্যুর পদযাত্রীকে সম্বোধন করে বলে, ”হে বান্দা! তুমি যদি এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাও, তবে ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে দুইজন খোদার অস্তিত্ব স্বীকার করে নাও।”
মৃত্যুর কষ্ট এবং যন্ত্রণা অনেক ভয়ানক। এই ভয়ানক এবং সংকটময় মুহূর্তে ঈমান রক্ষা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বেশী কঠিন হয়ে পড়ে দুনিয়ার জীবনে যারা কম নেকী অর্জন করেছে।
হাদিসে এসেছে, জান কবজের সময় মুমূর্ষু ব্যক্তি পিপাসায় ও হৃৎপিণ্ডের যন্ত্রণায় কাতর ও অস্থির হয়ে যায়। তখন সে পানির তৃষ্ণায় কাতর হয়ে যায়।
এমন সময় বান্দা যখন পিপাসায় কাতর হয়ে যায়, তখন শয়তান এক পেয়ালা বরফ পানি নিয়ে বান্দার সামনে উপস্থিত হয় এবং পেয়ালাটি আন্দোলিত করতে থাকে। অধিকাংশ সময় তখন কাতর বান্দা ভুল বশত: শয়তানের নিকট পানি চায়।
শয়তানের কৌশল।
উত্তরে শয়তান বলে, “হে বান্দা! তুমি যদি এই কথা বল যে, এই বিশ্ব জগতের কোন প্রতিপালক নাই, তাহলে তোমাকে আমি এই পানি পান করতে দিব।” এতে বান্দা যদি কোন উত্তর না দেয়, তবে শয়তান পুনরায় তার নিকট বসিয়া পানির পেয়ালা নাড়াচাড়া করতে থাকে।
তখন অনেক বান্দা বলে, “আমাকে কিছু পানি দাও।” উত্তরে শয়তান বলে, “হে বান্দা! তুমি যদি বলতে পার যে, রসূলগণ মিথ্যা কথা প্রচার করে গেছে, তাহলে তোমাকে পানি পান করতে দিব। এমতাবস্থায় যাদের ভাগ্য খারাপ এবং দুনিয়ার জীবনে ঠিকমত ইসলাম পালন করেনি তারা পিপাসার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে শয়তানের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করে বেঈমান হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
অপর দিকে ধর্ম-ভীরু ও আল্লাহ ভক্ত ব্যক্তি ঈমানী শক্তির প্রভাবে শয়তানের কূটকৌশল থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয় এবং ঈমানের সহিত মৃত্যুবরণ করার সৌভাগ্য হয়।
বিখ্যাত সুফি আবু জাকারিয়া রহ. এর জান কবজের সময় তার এক প্রিয়তম বন্ধু তাকে কালেমায় শাহাদাত পড়তে বলেন; কিন্তু আবু জাকারিয়া রহ. কিছু বললেন না এবং মুখ অন্যদিকে ফিরেয়ে নিলেন। দ্বিতীয়বারও তিনি একই কাজ করলেন। তৃতীয়বারের সময় বললেন, “আমি এটা বলবো না।”
ফলে তার বন্ধু কিছুটা বিচলিত ও চিন্তিত হয়ে গেলেন। এইভাবে কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর আবু জাকারিয়া রহ. এর যন্ত্রণার তীব্রতা কিছুটা কম অনুভব করার পর চোখ খুলে বললেন,”হ্যাঁ বন্ধু!
তুমি কি আমাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করেছিলে?” তার বন্ধু বললেন,”হ্যাঁ আমরা আপনাকে তিনবার কালিমায় শাহাদাত পড়তে বলেছিলাম আপনি দুইবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এবং তৃতীয়বারের সময় বলেছিলেন, আমি এটা বলবো না।”
তখন সুফি জাকারিয়া রহ. বললেন,”বিতাড়িত ইবলিশ শয়তান এক পেয়ালা পানিসহ আমার ডানদিকে দাঁড়িয়ে পানির পাত্রটি নাড়াচাড়া করে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো,”হে বান্দা! তুমি কি পানি পান করবে?”
আমি উত্তর দিলাম,”হ্যাঁ পান করবো।” তখন শয়তান বলল,”যদি তুমি বল যে, হযরত ঈসা আ. আল্লাহর পুত্র ছিলেন, তাহলে আমি তোমাকে পানি পান করতে দিব।”
একথা শোনার পর আমি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। তারপর শয়তান পায়ের নিকট এসে সেই একই কথা বলল, তখনও আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম।
তৃতীয়বার যখন শয়তান এসে আমাকে বলিল-”তুমি অন্তত বল, লা-ইলাহা অর্থাৎ কোন উপাস্য নেই।” এর উত্তরে আমি বললাম, আমি কখনও এই কথা বলবো না।
এই কথা শুনে শয়তান পানির পাত্র মাটিতে নিক্ষেপ করে চলে গেল। আমি শয়তানের কথার উত্তর দিয়েছি মাত্র। আমি তোমাদের কথার উত্তর দেই নাই। আমি এখন সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, “আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল।
শয়তানের চক্রান্ত থেকে মুক্তির উপায়: মৃত্যুর সময় শয়তানের চক্রান্ত থেকে মুক্তির উপায় হলো দুনিয়ার জীবনে মুমিন থাকা। আল্লাহর নিকট অধিক পরিমাণে অশ্রু বর্ষণ এবং রাত্রি জাগরণ করে আল্লাহর নিকট রুকু সিজদায় মশগুল থাকা জরুরি।
আল্লাহর হুকুম সূমহ সঠিকভাবে পালন করা। হযরত ইমাম আবু হানিফা রহ. কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, “হুজুর! কোন কাজে ঈমান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশী?” প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, ঈমানের শুকরিয়া আদায় না করলে।
জীবনের শেষ মুহূর্তকে ভয় না করলে। আল্লাহ তায়ালার বান্দাদের উপর জুলুম ও অত্যাচার করলে। এসব কাজের দ্বারা ঈমান নষ্টের সম্ভাবনা থাকে। যাদের মধ্যে এই তিনটি দোষ বিদ্যমান, ইমাম আবু হানিফা রহ. মতে তারা সকলেই বেঈমান হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা যদি কারও ভাগ্যবলে ঈমান নষ্ট না করে তবে সে ঠিক থাকবে।
ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করাই একজন মুমিনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। মৃত্যুকালে মানুষের অবস্থা অনেক গুলো ভাগে বিভক্ত।
হযরত মানসুর ইবনে আম্মার রাঃ বলেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির অবস্থাকে মোটামুটি ৫ ভাগে ভাগ করা যায়, ১. তার ধন সম্পদ উত্তরাধিকারের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়, ২. মালাকাল মউত রূহ নিয়ে নেয়।
৩. দেহের মাংস কীট পতঙ্গে খেয়ে ফেলে, ৪. হাড় অস্থি মাটির সাথে মিশে যায় এবং ৫. সৎ কাজ গুলো তার হকদাররা নিয়ে যায়। কেউ ধন সম্পদ হারালে কোন ক্ষতি নেই বরং ক্ষতি নিজের দামী ঈমান হারালে।
-এটি