বেলায়েত হুসাইন: মাহমুদুর রহমান। সাবেক বাংলাদেশি ক্রিকেটার। ১৮৮২ সালে তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের হয়ে একটিমাত্র টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। যেটা বাংলাদেশেরও প্রথম বা অভিষেক টেস্ট ম্যাচ ছিল। তবে তিনি যখন জাতীয় দলে খেলেছেন তখন তার নাম মাহমুদুর রহমান ছিল না। হিন্দু পরিবারের সন্তান হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই তিনিও হিন্দুই ছিলেন। তখন তার নাম ছিল বিকাশ রঞ্জন দাস।
তবে পরবর্তী জীবনে ইসলাম গ্রহণ করার কল্যাণে বিকাশ রঞ্জন দাসের বদলে তিনি নিজের নাম দেন মাহমুদুর রহমান। বাংলায় এই নামের অর্থ হয়, আল্লাহর প্রশংসিত ব্যক্তি। মাহমুদুর রহমানের ইসলামধর্ম গ্রহণের পিছনে মুসলিম রমনীকে বিয়ে করার কারণটিই অধিক প্রসিদ্ধ।
ধর্মীয় বিশ্বাস বদলে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট দলের সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটারটি বেছে নিয়েছেন ইসলাম ধর্ম। এ জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে যথেষ্ট। একটা পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এই পেসারের সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
কঠিন সেই সময়টায় জীবনসংগ্রামে টিকে থেকেছেন টিউশনি করে। তবে পড়াশোনায় ভালো ছিলেন সব সময়। এ জন্য সহজে পেয়ে গেছেন ইস্টার্ন ব্যাংকের চাকরিটা। তাতে সংসারে এসেছে স্বাচ্ছন্দ্য। অভিমান ভুলে সম্পর্ক পুনর্স্থাপন হয়েছে মা-বাবার সঙ্গেও। তাঁর জীবনসঙ্গিনীও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।
তৎকালীন সময়ের সম্ভাবনাময় এই খেলোয়াড় ক্রীড়াজগতে থিতু হতে পারেননি বেশিদিন। বর্তমানে তিনি ব্যাংকিং পেশায় মনোনিবেশ ঘটিয়েছেন। একইসঙ্গে কিশোরগঞ্জভিত্তিক একটি ক্রিকেট একাডেমির সাথে সম্পৃক্ত তিনি; যাতে মেহরাব হোসেন অপি ও হাসিবুল হোসেন কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে পুরোপুরি ক্রিকেটটা ছাড়তে পারেননি মাহমুদুল। এখনও নিয়মিতই খেলে থাকেন ব্যাংকের কর্পোরেট ক্রিকেট লিগগুলোতে। আর এবার সুযোগ মিলবে পুরোপুরি জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দেয়ার।
তবে অতি অবশ্যই ক্রিকেটার হিসেবে নয়। বরং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলির আমন্ত্রণে অতিথি হিসেবে ইডেন গার্ডেনসে বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক দিবারাত্রির টেস্টে উপস্থিত থাকবেন তিনি। ২০০০ সালে বাংলাদেশের সেই প্রথম টেস্টের দলে থাকা সবাইকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলি।
সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আগামী ২১ তারিখ ভারতের বিমানে উঠছেন মাহমুদুল হাসান। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, ‘আমি ২১ তারিখ ভারতের বিমানে উঠছি। ২২ তারিখ ইডেন গার্ডেনসে দেখা হবে দাদার সঙ্গে। ১৯ বছর আগে সৌরভের বিরুদ্ধে শেষবার খেলেছি। তার পরে আর দেখা হয়নি ওর সঙ্গে। এবার আবার দেখা হবে। দাদা দারুণ একটা উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের কথা যে ভুলে যাননি, তাতেই প্রমাণিত সৌরভ অনেক বড় মাপের মানুষ।’
এসময় তিনি ফিরে যান ১৯ বছর আগে সেই ম্যাচে। বলেন, ‘সেই মধুর স্মৃতি কী করে ভুলব বলুন তো! শান্ত (হাসিবুল হোসেন) ভাই প্রথম ওভার করেছিল। আর এক প্রান্ত থেকে আমি শুরু করেছিলাম। প্রথম বলটা করেছিলাম সদাগোপান রমেশকে।’
পরে এই রমেশকে বোল্ড করে টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের একমাত্র উইকেট নেন বিকাশ রঞ্জন। সে উইকেটের কথা মনে করে তিনি বলেন, ‘একটু জোরের উপরেই বলটা রেখেছিলাম। বাড়তি বাউন্সে বল রমেশের ব্যাটে লেগে স্টাম্পে লাগে। একটু পরেই আম্পায়ার স্টিভ বাকনার এগিয়ে এসে আমার হাতে বেলটা তুলে দিয়ে বলেন, এটা যত্ন করে রেখে দিও। এটা তোমার প্রথম টেস্ট উইকেটের স্মৃতি। বেলটা হাতে নিয়ে দেখলাম ভেঙে গিয়েছে।’
সূত্র : ইন্টারনেট