শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা

ওয়াজ মাহফিলে কেমন বক্তাকে দাওয়াত দিবেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মদ ।।

ওয়াজ মাহফিল মানুষকে সদুপোদেশ দেয়া। তাদের কল্যাণের পথে ডাকার পথ এ মাধ্যম। নবী-রাসুল আ. সাধারণ মানুষকে সত্যের পথে যে আহবান জানাতেন তারই প্রচলিত রূপ। আলেমগণ সে পদ্ধতিকে অবলম্বন করে সাধারণ মানুষকে অপরাধমুক্ত রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন যুগের পর যুগ।

মফস্বল এবং শহরের মসজিদ-মাদরাসা কিংবা গ্রামবাসীর যৌথ উদ্যোগে বছরে অন্তত একবার হলেও ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এলাকাবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে মাহফিলের প্রচার, প্যান্ডেল, ওয়ায়েজীনদের দাওয়াত দেওয়ার কাজ আঞ্জাম দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য থাকে একটাই- মানুষের হেদায়াত।

একটি ওয়াজ মাহফিলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মাহফিল পরিচালনা কমিটি এবং ওয়ায়েজগণ। আয়োজকদের সুন্দর ব্যবস্থাপনা ও বক্তার জ্ঞানগর্ভ আলোচনার মাধ্যমে একটি মাহফিল ‘হেদায়াতের মঞ্চ’ হয়ে উঠে।

সবশেষে মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকতে দু’একজন শ্রোতার দীনের পথে উঠে আসার মাধ্যমে একটি মাহফিল পূর্ণতা লাভ করে। তবে বর্তমানে ওয়াজ মাহফিল নিয়ে শ্রোতা মহলের অভিযোগ অনেক। প্রথমেই তারা অভিযোগের তীর ছুঁড়ছেন বক্তার দিকে তারপর আয়োজকের দিকে। বক্তা এবং আয়োজকদের নানা অসঙ্গতির কথা উঠে আসছে তাদের অভিযোগে।

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম সেইসব অসঙ্গতি তুলে ধরে তা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করার ক্ষুদ্র প্রয়াস চালিয়েছে। এই প্রতিবেদনে পাঠকদের জন্য ওয়াজ মাহফিলের বক্তা কেমন হওয়া উচিৎ-তাি নিয়ে আলোচনা করেছেন রাজধানী মিরপুরের আকবর কমপ্লেক্স এর মহাপরিচালক ও প্রখ্যাত ওয়ায়েজ মুফতি দেলোয়ার হুসাইন এবং আলোচিত বক্তা ‘রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন বাংলাদেশ’র সভাপতি মাওলানা আব্দুল বাসেত খান।

একজন বক্তা বা দাঈর গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে দেশের ৬৪ জেলায় ওয়াজের মাঠ চষে বেড়ানো দাঈ মাওলানা আব্দুল বাসেত খান বলেন, “সর্বপ্রথম বলব- ইলম বা জ্ঞান অন্বেষণের কথা। একজন আলোচক যে বিষয়ে আলোচনা করবেন সে বিষয়ের পরিপূর্ণ ইলম তাকে অর্জন করতে হবে। সাথেসাথে সেই ইলম অনুযায়ী আমলও থাকতে হবে। ইখলাছ থাকতে হবে এবং লিল্লাহিয়াতের উদ্দেশ্যে বয়ান পেশ করতে হবে।

“সবচেয়ে জরুরি বিষটি হলো- কুরআন-হাদিসে বর্ণিত দাওয়াতের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহর রাসুল সা. উম্মতদের যেভাবে দনের পথে আহ্বান করতেন, সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে দাওয়াত দিতে হবে।”

দাওযাত প্রদানের পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “দাওয়াত দানের পদ্ধতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দর পন্থায়’। (নাহল ১৬/১২৫)।

এ আয়াতে দাওয়াতের তিনটি পদ্ধতি উল্লিখিত হয়েছে। যথা- (১) হিকমত তথা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক দাওয়াত দেওয়া। (২) উত্তম উপদেশ দেওয়া। (৩) উত্তম পন্থায় বিতর্ক করা।

প্রথমত এই তিন পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রতিজন দাঈর ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক বলে মনে করি।দীনের দাওয়াত দিতে হবে পবিত্র কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসের আলোকে। প্রথমে তাওহীদের প্রতি মানুষকে আহবান করতে হবে। কেননা ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে তাওহীদ। পরে ইসলামের যাবতীয় বিধান সম্পর্কে ছহীহ সুন্নাহর আলোকে মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে।”

ওয়াজের সঙ্গা টেনে মুফতি দেলোয়ার হোসাইন বলেন, “ওয়াজ বলা হয় এমন আলোচনাকে যার মাধ্যমে মানুষের অন্তর নরম হয়, চোখে পানি আসে এবং শ্রোতামহল আল্লাহমুখী হয়। ইলম তো থাকতেই হবে, সেইসঙ্গে ইলম অনুযায়ী আমল থাকাটাও জরুরি। আমার আব্বাজান রহ. বলতেন, ওয়ায়েজের ইলম ও আমল দেখে তাকে দাও।”

মনগড়া ওয়াজ ইসলামের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একজন দাঈর ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে জিনিশটা দরকার সেটা হলো কুরআন হাদিসের পাশাপাশি বিশুদ্ধ জ্ঞান থাকা। ইতিহাস থেকে উদাহারণ দিতে ইতিহাসের বিশুদ্ধ জ্ঞান জানতে হবে। ফিকাহ শাস্ত্রে পারদর্শী হতে হবে।

প্রচলিত ওয়াজ মাহফিলের রীতি ভেঙে কুরআন হাদিসের বিশুদ্ধ জ্ঞান সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মুফতি দেলোয়ার হোসাইন বলেন, এখন মানুষ আর সুর চায় না, বিশেষ করে শিক্ষিত মহল।

আমি তখন মারকাযুদ দাওয়াতে খেদমত করি। ১৯৯৬ অথবা ৯৭ এর ঘটনা সেটা। প্রেসক্লাবে এক ওয়াজ মাহফিলে আমাকে দ্বিতীয় বক্তা হিসেবে দাওয়াত দেওয়া হয়।

আমি আলোচনা করছিলাম এমন সময়ে প্রধান বক্তা মাওলানা হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী চলে আসলেন। এদিকে, সঞ্চালক তার নাম ঘোষণা করতে আমার কাছ থেকে মাইক নিলেন কিন্তু শ্রোতামহল দাঁড়িয়ে বললনে, আগে হুজুরের বক্তব্য শেষ হবে, তারপর প্রধান বক্তা ওয়াজ করবে। দেখেন, আমি সাধারণত সুর দিয়ে ওয়াজ করি না।

তিনি আরেকটি উদাহারণ দেন। বলেন, আরেকটা ঘটনা বলি, আমি একটি মসজিদে মাসের একটি সপ্তাহ জুমা পড়াই। মসজিদ কমিটি আমাকে বরলেন, বাকি সপ্তাহগুলোর জন্য আপনি একজন খতিব নির্ধারণ করে দেন।

আমি একজনকে পাঠালাম, সে সুর করে আলোচনা করত। মসজিদ কমিটি আমাকে বলল, তাকে নিষেধ করবেন সে যেন সুর ব্যবহার না করে।

এখান থেকে বুঝুন, শিক্ষিত শ্রোতা মহল সুরের পাগল নয়, তারা কুরআন হাদিসের জ্ঞান চায়। সবশেষে আমি বলব, ওযায়েজ যিনি হবেন তিনি লিল্লাহিয়াতের উদ্দেশ্যে ওয়াজ করবেন।”

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ