বেলায়েত হুসাইন ।।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংরক্ষিত ঘরে সবশেষ প্রবেশ করেছিলেন বাদশাহ ফয়সাল ইবনে আব্দুল আজিজ (১৯০৬-১৯৭৫)। ঘরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তিনি যেসব বস্তু দেখেছিলেন— সে সবের বর্ণনা দিয়েছেন সৌদি আরবের বয়োবৃদ্ধ আলেম শায়েখ আয়েজ ইবনে ওমর আর রুঈস। বাদশাহর সঙ্গে তিনিও প্রবেশ করেছিলেন রাসুল সা.-এর স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র ঘরটিতে। সম্প্রতি ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে মহানবী সা.-এর ঘরে কী কী ছিল— তার বিস্তারিত জানিয়েছেন শায়েখ আয়েজ ইবনে ওমর।
“তালাবদ্ধ কয়েকটি লোহার সিন্দুক আমরা সেখানে পেয়েছি, সেগুলোতে কী কী আছে তা আমরা জানতাম না। বাদশাহ উপস্থিত লোকদের নিকট সিন্দুক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। পরে জানা গেল, এগুলো তুর্কি সালতানাতের সময়কার সিন্দুক। তারপর আরও গভীর অনুসন্ধানের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হল। কমিটির দায়িত্ব দুটি বাক্সের রহস্য উদঘাটন করা এবং এতে কী আছে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো। বাদশাহর নির্দেশক্রমে আমিই এই কমিটি গঠন করি, ধর্ম ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি পর্যবেক্ষন কমিটি।” বলছিলেন শায়েখ আয়েজ ইবনে ওমর।
তিনি বলেন, “এই কমিটির অর্থ-মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ছিলাম আমি নিজেই। বাদ ইশা আমরা মহানবী সা.-এর কক্ষে প্রবেশের প্রস্তুতি নিই। কক্ষের প্রহরীদের সহায়তায় তালাবদ্ধ দরজা ডিঙিয়ে আমরা কক্ষে প্রবেশ করি। এ সময় আমাদের সঙ্গে কয়েকজন পুরাকীর্তি ও প্রত্নতাত্ত্বিক অভিজ্ঞ লোকও ছিল—যেন বিভিন্ন নিদর্শন দেখে তারা আমাদের সঠিক ব্যখ্যা দিতে পারে। শুরুতে আমরা প্রথম বাক্সটি খুললাম—এটি ঘাটাঘাটি করে আমরা কিছু স্বর্নের বার এবং কিছু অলঙ্কারাদি পাই। আর দ্বিতীয় বাক্সটিতে পেলাম পবিত্র বাইতুল্লাহয় ব্যবহৃত সোনা ও রূপার কিছু চেইন। এছাড়াও রাসুল সা.- এর কিছু ব্যক্তিগত চিঠিপত্র।
ওই ভিডিওতে শায়েখ আয়েজ ইবনে ওমর আরও জানান, মহানবী সা.-এর কক্ষে আমরা যেসব বস্তু উদ্ধার করি, ১৫ দিন তল্লাশি শেষে তাতে তুর্কি উসমানী সুলতান আব্দুল মাজিদের কন্যার বেশকিছু অলঙ্কার আমরা পাই। ধারণা করা হয়, মদিনা সফরকালে সুলতান এগুলো মহানবী সা.- এর কক্ষে রেখে যান। আর এসব অলঙ্কার নববিবাহিতা দুলহানদের দান করে গিয়েছিলেন সুলতান। অর্থাৎ যাদেরই বিবাহ হবে এখান থেকে তাদেরকে এসব অলঙ্কার উপঢৌকন দেয়া হবে।
তিনি জানান, তল্লাশি শেষে ওই কমিটি তিনটি পরামর্শ-সুপারিশ প্রদান করে। প্রথমত, মদিনা মুনাওয়ারাহ সম্পর্কীত গহনাগাঁটি মদিনার জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকবে। দ্বিতীয়ত, সাধারণ অলঙ্কারাদি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ হেফাজত করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শেষ পরামর্শ ছিল, স্বর্ন-রূপার বার ও নির্দিষ্ট কিছু গহনা-এগুলো সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে অর্থমন্ত্রণালয়। যেন এসব সম্পদ কালের আবর্তে হারিয়ে বা চুরি না হয়ে যায়—এ কারণে কমিটির এই সুপারিশ করেছিল।
আরএম/