আবদুল্লাহ তামিম ♦
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চলা অযোধ্যার বাবরি মসজিদ মামলার রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আজ শনিবার দেশের শীর্ষ আদালতের এ রায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা বিশ্ব।
সব কল্পনা জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বাবরি মসজিদের ওই ২.৭৭ একর জমির উপর তৈরি হবে রাম মন্দির। অন্যদিকে অযোধ্যাতেই মসজিদ তৈরির জন্য অন্যত্র ৫ একর জমি দেওয়া হবে মুসলিম সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে।
অযোধ্যার বাবরি মসজিদের এ রায়কে ভারতের কোনো কোনো আলেম ঐতিহাসিক রায় বলে অভিহিত করেছেন। কেউ পক্ষে বলেছেন কেউ আবার বিপক্ষে। ভারতের প্রখ্যাত আলেমরা কে কীভাবে দেখেছেন এ রায়?
ভারতের জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ (একাংশের) আমির, দারুল উলুম দেওবন্দের প্রবীণ মুহাদ্দিস মাওলানা সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী বাবরি মসজিদ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা চূড়ান্তভাবে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছি, করবো। আমাদের বিশ্বাস ছিলো আমাদের পক্ষ্যে বাবরি মসজিদ মামলার রায় আসবে। কারণ আমরা মজুবত দলিল প্রমাণ পেশ করেছি।
তিনি ভারতের মুসলিমদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আরো বলেন, এ রায়কে পরাজয় ও বিজয় হিসেবে না দেখে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও মুসলিমদের নিরাপত্তার বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে।
ভারতের বিশিষ্ট আলেম, বিহার ওড়িষ্যা ও ঝাড়খণ্ডের ইসলামি শরীয়াহ বোর্ডের প্রধান মাওলানা মুহাম্মদ ওয়ালি রাহমানি বাবরি মসজিদ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ের পর এক বিবৃতিতে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় বেদনাদায়ক তবে আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা স্বীকার করা নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্য।
তিনি আরো বলেন, পুরো দেশ সুপ্রিম কোর্টকে সম্মান করে। যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে এবং আমাদের দেশের সর্বাধিক সম্মানিত আদালত এটি, তাই আমরা এ সিদ্ধান্তটি মেনে নিচ্ছি। তবে সুপ্রিম কোর্ট এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমরা অত্যন্ত দুঃখিত, মর্মাহত।
তিনি আরো বলেন, এএসআই (প্রত্নতাত্ত্বিক) প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ রায় তৈরি করা হয়েছে, অথচ প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বিশ্বাস করেন, তাদের প্রত্নতাত্ত্বিক রিপোর্ট অনুমানের ভিত্তিতে করা হয়েছে। তার মানে এ মামলার রায়ও অনুমানের ভিত্তিতে হয়েছে। আমরা এর সুরাহা চাই।
এদিকে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের আইনি সহায়তা কমিটির প্রধান মাওলানা গুলজার আহমদ আজমি বাবরি মসজিদ ও রাম জন্মভূমি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর মুম্বইয়ে তার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে বলেছেন, অনেক কিছুই আমরা অপছন্দ হলেও মেনে নেই। বাবরি মসজিদ রায়ও আমাদের তেমনিভাবে মেনে নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, মুসলমানদের জন্য পাঁচ একর জমি ভিক্ষা দেয়ার প্রয়োজন নেই।মুসলমান প্রমাণ ও দলিলের আলোকে আদালতে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করেছিল যা পূরণ করতে পারেনি আদালত।
তিনি আরও যোগ করেন, আমরা সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি, তবে সিদ্ধান্তের মধ্যে অনেকগুলি ত্রুটি রয়েছে। যেগুলো নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই।
এ বিষয়ে আমাদের কুরআনের আদেশের দিকে নজর দেওয়া উচিত, কুরআন বলে, যা তুসি অপছন্দ কর বা ঘৃণা কর, হয়ত তাতে আল্লাহ তায়ালা মঙ্গল রেখেছেন।
ভারতের লেখক, গবেষক, সাহিত্যিক মাওলানা সালমান নদভী বাবরি মসজিদ মামলার বিষয়ে বলেন, আমি এমন একটি রায়ের জন্যই চেষ্টা করে আসছি একবছর আগ থেকে। জনাব রবি শঙ্কর সঙ্গে মিলে আমি দেশকে মুসলিম হিন্দু সংঘাত থেকে বাঁচাতে এমন একটি রায়ের চেষ্টা করছিলাম।
এ মামলার জন্য উভয় পক্ষ থেকে মধ্যস্থতা কমিটি করা হয়েছিলো। তাতে আমি ছিলাম। চেষ্টা করেছি এমন একটি ফায়সালার জন্য যেনো ভারতে বাবরি মসজিদ নিয়ে বহু বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার অবসান হয়।
আলহামদুলিল্লাহ ঐতিহাসিক এ রায় ওমর রা. এর জমানার একটি মসজিদ স্থানান্তরের ঘটনার সঙ্গে যায়। যেখানে মসজিদ স্থানান্তর করে খেজুর বাজার নির্মাণ করা হয়েছিলো বৃহত্তম স্বার্থ রক্ষার জন্য।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মুখপাত্র ও সেক্রেটারি ফকিহুল আসর মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানী রায়ের পর বলেনম বাবরি মসজিদ বিষয়ে কোর্টের ফায়সালা মেনে নিবো। কিন্তু আমাদের ন্যায় বিচার হয়নি এটাও আমরা বলছি।
তিনি আরো বলেনম এ মামলাটি শুরু হয়েছিল নিপীড়ন এবং প্রতারণার মাধ্যমে। আজ আবারো আমাদের থেকে প্রতারণায় ছিনিয়ে নিলো। তাপরও আমরা ন্যাবিচার প্রত্যাশী।
দিল্লি জামে মসজিদের শাহী ইমাম মাওলানা সৈয়দ আহমেদ বুখারি বলেছেন, ‘ভারতের মুসলমানরা শান্তি চায়। এরই মধ্যে তারা বলেছে সর্বোচ্চ আদালতের যে রায় হবে তা মেনে নেবে’। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রায় মেনে নিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে হিন্দু-মুসলিম বিরোধ দীর্ঘদিনের, এর অবসান হওয়া উচিত’।
রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশনের সম্ভাবনার বিষয়ে দিল্লি জামে মসজিদের ইমাম বলেন, বিষয়টি আর দীর্ঘায়িত করা উচিত না।
সূত্র: ফিকরু খবর, আসরে হাজেরি, জারবে দেওবন্দ
-এটি