রকিব মুহাম্মদ
যুগ্ম বার্তা সম্পাদক
ফারেগীন শিক্ষার্থীরাও নতুনভাবে দাওরায়ে হাদীসের পরীক্ষা দিয়ে সরকারি সনদ নিতে পারবে বলে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। নতুন এ নিয়মে ২০১৭ সালের পূর্বে দাওরায়ে হাদীস ফারেগ যে কেউ আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত সুযোগটি গ্রহণ করতে পারবে।
এই সিদ্ধান্তের পর থেকে নবীন-প্রবীনদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অফলাইন-অনলাইনে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে মৃদু বিতর্ক, থেমে নেই সমালোচনাও। এর মাধ্যমে কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে শুধুমাত্র সনদ বা সার্টিফিকেট নির্ভর হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি সমালোচকদের। আবার নতুন করে পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
নতুনভাবে দাওরায়ে হাদীসের পরীক্ষা দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন চট্টগ্রামের ওসমান গনি এমইএস কলেজের সাবেক অধ্যাপক দেশের খ্যাতিমান ইসলামিক স্কলার ও লেখক ড. আ ফ ম খালেদ হোসাইন।
তিনি বলেন, “২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্স সমমান স্বীকৃতি প্রদান করেছে কিন্তু আজ অবধি সিলেবাসের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসেনি। তাহলে আগে যারা পাশ করেছে তাদের নতুনভাবে পরীক্ষা দেওয়ার প্রশ্ন আসছে কেন? কারণ, সিলেবাস, পরীক্ষা এবং প্রশ্ন পদ্ধতি তো একই রয়েছে।”
মাওলানা খালিদের যুক্তি হলো- এখনো পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে বেফাক বা অন্যান্য বোর্ডের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে, আগেও তাই করতে হয়েছে, এমন নয় যে এখন সরকারিভাবে ভিন্ন পদ্ধতি ও ভিন্ন সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। সুতরাং পরীক্ষা দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই বলে অভিমত দেন তিনি।
তবে সরকারি স্বীকৃতির সুযোগ গ্রহণে ইচ্ছুক সকলকে নতুনভাবে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুবিধা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন আলেম সাংবাদিক ও শিক্ষক মাদরাসায়ে দারুর রাশাদের শিক্ষা সচিব মাওলানা লিয়াকাত আলী ।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালের পূর্বে যে সকল শিক্ষার্থীরা কওমি মাদরাসা থেকে ফারেগ হয়েছেন তাদের নতুন করে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে হাইয়াতুল উলইয়া। আমার ধারণা, অনেক ফারেগীন এই সুযোগটা চেয়েছেন, এ কারণেই কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই সিদ্ধান্তের পক্ষে।
পরীক্ষা না দিয়ে বিকল্প কোন পদ্ধতিতে সরকারি সনদের উপকার হাসিল করা যায় কিনা-এমন প্রশ্নে মাওলানা আ ফ ম খালেদ হুসাইন বলেন, যারা ২০১৭ সালের পূর্বে দাওরায়ে হাদীস পাশ করেছে তারা সার্টিফিকেট দাখিল করা স্বাপেক্ষ সরকারি সনদের জন্য আবেদন করতে পারেন। এভাবে তাদেরকে মাস্টার্স সমমান নতুন সনদ উত্তোলন করার সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।
তবে এই বিকল্প পদ্ধিতিকে সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনত কতটুকু সহায়তা পাওয়া যেতে পারে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সাবেক এ অধ্যাপক।
“যখন কোন আইন প্রণীত হয় তখন থেকেই সেই আইনের কার্যকারিতা হয় অর্থাৎ আইনের প্রণয়ের পর পূর্বে সংগঠিত কোন ঘটনার ওপর নতুন আইন কার্যকর হয় না। তবে অতীতের ওপর আইন প্রয়োগ করা যায় কিনা- এ ক্ষেত্রে হাইয়াতুল উলইয়া কর্তৃপক্ষকে আইন বিষেশজ্ঞদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন।” বলেন আ ফ ম খালেদ হোসাইন।
পরীক্ষা না দিয়ে বিকল্প কোন পদ্ধতিতে সরকারি সনদ হাসিলের সুযোগ নেই বলে মনে করেন আলেম সাংবাদিক মাওলানা লিয়াকত আলী। তার মতে, আইন এই সুযোগটা দেবে না।
তবে মাওলানা আ ফ ম খালিদ সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাইয়াতুল উলইয়া কর্তৃপক্ষক কথা বলে এ বিষয়ে একটি সুষ্ঠু পদ্ধতি প্রণয়ের পরামর্শ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ‘আল হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ কর্তৃক প্রকাশিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আল-হাইআতুল উলয়া বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পূর্বে আল-হাইআতুল উলয়া বাংলাদেশ-এর অধিভুক্ত ৬ (ছয়) বোর্ডের কোনটির অধীনে কিংবা উল্লেখযোগ্য কোন দাওরায়ে হাদীস মাদরাসা হতে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এমন ব্যক্তিগণ ১৪৪১ হতে ১৪৪৫ হিজরী মোতাবেক ২০২০ হতে ২০২৪ ঈসাব্দের মধ্যে অর্থাৎ আগামী ৫ (পাঁচ) বছর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে আল হাইআতুল উলয়ার অধীনে দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
‘এজন্য যে কোন দাওরায়ে হাদীস মাদরাসা হতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিবন্ধন করতে হবে।’ উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
আরএম/