হাসান ইনাম
গল্পকার
নাবিল ছেলেটার নাম। ছোটখাট ছিপছিপে গড়নের। উচ্চতা বেশি নয়। নাকটা একটু খর্বাকৃতির। চোখদুটো নিষ্প্রাণ । অবিশ্বাসী। নাবিল হাঁটছে। হাতে ব্যাগ। দ্রুত পা ফেলছে। নাবিল কী পালাচ্ছে? ফোঁস ফোঁস শব্দ হচ্ছে কোথাও .. । কোথায় ?
নাবিল নিশ্বাস ফেলছে ঘনঘন। বাতাস নেই। আলো নেই । সব নিথর। নিস্তব্ধ। নাবিল শুধু হাঁটছে। গন্তব্য নেই। নাবিলের পদছাপ বলছে নাবিল বিপর্যস্ত। এলোমেলো পদছাপ বলছে নাবিল পরাজিত। নাবিল থেমে গেলো। নাবিল বসে পড়লো রাস্তার ওপর। রাষ্ট্রের উপর। নাবিল থুথু ফেললো ময়লার স্তুপে। দুর্নীতির স্তুপ।
আমরা একটু পেছনের গল্পে যাই। নাবিল তখন বাসা থেকে বের হয়েছে। জোব্বায় মেখেছে আতর। আর-রিহ্যাবের আতর। সুঘ্রাণ বহুক্ষণ স্থায়ী হয়।
নাবিল কোরআন পড়ছিলো। আজকে পড়ার ফাঁকেই ঘড়ির দিকে নজর পড়ে। তড়িঘড়ি জোব্বা গায়ে চাপিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছে।
নাবিল হাফেজে কোরআন। আজ ওর ইন্টারভিউ। দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে এলো নাবিল। সময় স্বল্প। ঠোঁটে নাড়িয়ে কোরআন পড়তে পড়তে নাবিল ব্যাগ হাতে বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটছে। বাসার অনতিদূরে মসজিদ। মসজিদে বায়তুস সালাহ। পাঁচতলা মসজিদ। তৃতীয় তলা পর্যন্ত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। আসছে রমজানে চতুর্থ তলাও শীতের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
নাবিল গতবার তারাবি পড়িয়েছে পাশের এলাকায়। এবার একটু বাসার পাশে থাকার ইচ্ছে। মসজিদে প্রবেশ করে নাবিল। পরীক্ষার্থী প্রচুর। সাতাত্তর জন। সবাই হাফেজ। এতো হাফেজ ! নাবিলের ভালো লাগে ভাবতে। এতো এতো জান্নাতী মানুষ!
মসজিদের ইমাম সাহেব বৃদ্ধ মানুষ। অনেক বছর আছেন এখানে। সম্মান করে সবাই। শ্রদ্ধাভাজন। তিনি বসে আছেন মিম্বরের নিচে। পাশে একজন বিচারক। সামনে গোলাকৃতির বৃত্ত সৃষ্টি করে আছেন মসজিদ কমিটির সদস্যবৃন্দ।
বৃত্তের বিন্দুতে বসে আছেন একজন হাফেজ। কোরআন পড়ছেন। সুরেলা। মাধুরী। বিচারক প্রশ্ন করে চলেছেন একের পর এক। নিরলস। আজ যেন পরীক্ষার্থীকে আটকে দেবার চেষ্টা তাকে জেঁকে ধরেছে।
একে একে নাবিল চলে আসে বৃত্তের ভেতর। নাবিল বসে পড়ে বিন্দুতে। নাবিল নিঃসংশয়ে কোরআন পড়ে। বিচারক থামিয়ে দিতে চায়। নাবিল থেমে যায়। ফলাফলে নাবিল পিছিয়ে। আরো ভালো ফলাফল প্রত্যাশা ছিলো নাবিলের কাছে। অন্তত এলাকার সন্তান হিসেবে। শ্রদ্ধাভাজন ইমাম কটুবাক্যে শাসালেনও।
নাবিল লজ্জাকাতর হওয়ার চেষ্টা করে। পারে না। অনেকদিন পর গায়ে চাপানো ঢিলেঢালা জোব্বা পরে নিজেকে কেমন লাগছে মনে করে হাসি পায়। ফিক করে হেসে ফেলে নাবিল।
কোনোরকম বাবার মান্নত রক্ষার্থে হাফেজ হয়েছে নাবিল। এখন আবার বাবার ইচ্ছা তারাবি পড়াতে হবে এলাকায় । এতোদিন লুকোছাপা করে আসা নাবিল ফাঁদে পড়ে শেষ নাগাদ।
তিনদিন আগে থেকে সিগারেট খাওয়া বন্ধ রাখে। কোরআন পড়তে থাকে। তবুও আজ পরাজিত নাবিল। নাবিলের পিতা এ মসজিদ কমিটির সভাপতি। নাবিল বৃত্ত থেকে বের হয়ে বারান্দায় আসে। বারান্দা থেকে বাইরে। তারপর দ্রুত পা চালিয়ে পালাতে চেষ্টা করে। নাবিল পারবে না কাতারবন্দি মুমিনদের বিশ্বাস ঘাতকতা করতে। নাবিল দ্রুত হাঁটে ।
ওদিকে নাবিলের নাম ঘোষিত হয় মসজিদে। ঊনসত্তরজন দক্ষ হাফেজ আর একজন নাবিল। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সিগারেট খাওয়া নাবিল। নিজের শখ মেটাতে নিয়মিত সিগারেট খাওয়া নাবিল।
ইন্টারভিউতে নাবিল বিজয়ী হয়েছে। নাবিল একটি সমাজের গুরুভার কাঁধে নিয়েছে। নাবিলের এই পথচলা নতুন নয়। পুরনো এই চেনা পথে কি উঠে আসতে পারে নতুন কোনো গল্পের বীজ? নতুন কোনো গল্পের সহযাত্রী!
আরএম/