আওয়ার ইসলাম: বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারায় তাদেরকে ভয়ানক স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পরিবেশ থেকে মানসিক চাপ ও স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবই এর মূল কারণ বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহা. জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার বিভিন্ন দিক যাচাই করা। ২০১৬-২০১৭ সালে গবেষণাটি পরিচালিত হয় ও সম্প্রতি এ নিয়ে দুটি গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি), সিলেট, এর রিসার্চ সেন্টারের সহযোগিতায় পরিচালিত এ গবেষণায় পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহা. নজরুল ইসলাম ও তৎকালীন শিক্ষার্থী মাহমুদা মোহাম্মাদও যুক্ত ছিলেন।
সিলেট শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের উপর পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে অধিকাংশ (৬১ শতাংশ) শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব। তাদের অনেকের মধ্যে (৭৫ শতাংশ) শরীরচর্চার প্রচলন নেই বললেই চলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পর নতুন পরিবেশে নিজের অজান্তে তারা কিছু অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারায় অভ্যস্থ হয়ে পড়ে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
একদিকে যেমন সুষম খাদ্য তালিকা বিষয়ে তাদের সঠিক ধারণা নেই অপরদিকে পরিমিত খাদ্য গ্রহণের প্রচেষ্টার বিষয়ে তারা উদাসীন। অনেকে (৫৮ শতাংশ) কখনই তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তনের উদ্যোগ নেননি।
উল্লেখ্য, স্ট্রাটিফাইড রেনডম সেমপ্লিং (Stratified Random Sampling) এর মাধ্যমে সিলেটের দুইটি পাবলিক এবং চারটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১,১৪৩ জন শিক্ষার্থীর ৩৫ শতাংশ ছাত্রী ও ৬৫ শতাংশ ছাত্রের আর্থসামাজিক অবস্থা, নৃতাত্ত্বিক পরিমাপ, জীবনধারা এবং সুস্থ জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতনতা নিয়ে এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়।
গবেষণাটি থেকে দুইটি পেপার ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এডোলিসেন্ট মেডিসিন এন্ড হেলথ এবং জার্নাল অফ পাবলিক হেলথ এ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণার ফলাফল আরো দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী (৫৫ শতাংশ) নিয়মিত সকালের নাস্তা করেন না। এই অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এর কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীরা (৫০ শতাংশ) ক্লাসের চাপকে দায়ী করছেন।
অপরদিকে নিয়মিত শরীরচর্চা করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম (২৫ শতাংশ) এবং শুধুমাত্র ৫৬ শতাংশ ছাত্রছাত্রী বলছেন যে তারা শুধুমাত্র দৈনন্দিন কাজকর্মের সাথে যুক্ত। অনুসন্ধান বলছে প্রায় অর্ধেকের বেশী (৫৫ শতাংশ) শিক্ষার্থী দৈনিক চার ঘণ্টার বেশী সময় কম্পিউটারের সামনে অতিবাহিত করছেন।
গবেষণায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা এবং তাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রায় ৮৪ শতাংশ ছাত্রছাত্রী বলছেন একাকিত্বের সময় তাদের মধ্যে খাদ্যগ্রহণে অনিহা দেখা দিচ্ছে।
-এএ