সুফিয়ান ফারাবী
বিশেষ প্রতিবেদক
আমাদের এই পৃথিবীতে নানা শ্রেণী-পেষার মানুষের বসবাস। দরিদ্র, নিন্মবিত্ত, নিন্মমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও ধনী- সকল শ্রেণীর মানুষের অধিকার এক বা সব অধিকার সবার জন্য নয়। সবার জন্যই রয়েছে নির্দিষ্ট সীমা। ধনীর অধিকার একরকম, দরিদ্র মানুষের অধিকার আরেকরকম। দরিদ্র মানুষ চাইলেই সম্পদশালী মানুষের মতো অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না, আবার ধনী মানুষও দরিদ্র মানুষের মতো অধিকার দেখাতে যান না। সবার জন্যই আছে কিছু অপারগতা বা সীমাবদ্ধতা।
তবে প্রতিটি মানুষের রয়েছে কিছু মৌলিক চাহিদা ও অধিকার। যার মাঝে নেই ধর্ম, অর্থ, সামাজিক অবস্থানের দৃষ্টিকোণ। সবাই সেখানে সমান। এরকম অধিকার চারটি। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষা। তারমধ্যে তিনটি স্বল্প পরিমাণে হলেও মোটামুটি সবাই পাচ্ছেন। কেউই বাদ পড়ছেন না৷ হয়ত কম বেশি হয়ে থাকে অর্থাভাবে।
তবে এই চারটির মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। বলা হয়ে থাকে শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষাই পারে একটি জাতিকে শক্তভাবে দাঁড় করাতে, সমাজের উঁচু স্থানে নিয়ে যেতে, নানান দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে, সর্বপরি শিক্ষা একটি ইবাদাত। প্রতিটি মানুষকে জ্ঞানার্জনের প্রতি আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ আরোপ করে বলেছেন, পড়ো, পড়ো, পড়ো। রাসুলুল্লাহ সা. স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন এ বিষয়ে। তিনি বলেছেন, প্রতিটি মুসলিম নর ও নারীর উপর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।
কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, ধর্মীয় নির্দেশনা ও সামাজিক স্বীকৃতি থাকা সত্ত্বেও সকল মানুষ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে পারছে না। আর্থিক অস্বচ্ছতা এর প্রতি বড় বাঁধ সেজেছে। দরিদ্র মানুষের চোখে শিক্ষা একটি ব্যায়বহুল খরচের বিষয়। তাদের সন্তানদের নূন্যতম শিক্ষার খরচও চালাতে পারেন না তারা। দিনমজুর আর "অবিধানে অনুপস্থিত পেশা"র সঙ্গে জড়িয়ে এ দেশের লক্ষ মানুষ। যাদের ঘরে নেই শিক্ষার আলো, জ্ঞানের চর্চা, ও শুদ্ধতার পরশ।
অস্বচ্ছতা দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্য বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র মশিউর রহমান। তিনি একজন কুরআনের হাফেজ। পরনে লম্বা জামা, মাথায় টুপি থাকে সবসময়।
সেচ্ছাসেবী সংগঠন "তরী’র” ব্যনারে গত দুই বছর যাবৎ পিতার স্নেহে দরিদ্র বাচ্চাদের বিনামূল্যে পড়াচ্ছেন তিনি। সংগঠনের কোন দায়িত্বে না থেকেও মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে করছেন সমাজসচেতনতামূলক কাজ। বাচ্চাদের খাতা,কলম, কাগজ, পেন্সিলসহ শিক্ষার প্রয়োজনীয় আসবাব জোগাড় করে দিচ্ছেন সংগঠনের উদ্যোগে। এমনকি শীতের মৌসুমে কম্বল, গরম কাপড়সহ টুকিটাকি বিষয়ও দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে সেচ্ছাসেবী সংগঠন তরী'র ব্যানারে কাজ করছি। মানবতার ডাকে সাড়া দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য। সপ্তাহে তিনদিন নিয়ম করে পড়াচ্ছি, এতে মনের ভেতর একপ্রকার শান্তি অনুভব করি। শিক্ষা কার্যক্রম ছাড়াও অন্যন্য বিষয়ের প্রতিও গুরুত্ব দিচ্ছি। " আমাদের শ্লোগান "আলোর পথে"। আমরা আলোর পথেই যেতে চাই। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের বাচ্চাদের শিক্ষার অধিকার রয়েছে। কিন্তু আর্থিক স্বচ্ছতা না থাকায় তারা পড়তে পারছে না। আমরা তাদের শিক্ষা দিয়ে সমাজে আলোর বিচরণ ঘটাতে চাই।
হাফেজ মশিউর রহমানের মতো আরো কিছু ছাত্র এগিয়ে এসেছে পথশিশুদের বাচ্চাদের পড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে। বিষয়টি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও সুক্ষ্যাতি ছড়িয়ে দিচ্ছে পুরো দেশে।
আরএম/