সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

দেশে হাজারো খতিব আছেন, কিন্তু সেই খতিব সাহেব নেই

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মনজুরুল হাসান ।।

১৯৯২ সালে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বলেছিলেন, ‘ঢাকা শহরে নিয়ম লঙ্ঘন করে একের পর এক মসজিদ গজিয়ে উঠছে…।’

এই নিন্দনীয় বক্তব্যের প্রতিবাদে খতিব উবায়দুল হক জালালাবাদী রহ. বায়তুল মোকাররমে জুমার খুতবাপূর্ব বয়ানে জ্বলে উঠলেন। জোরালো প্রতিবাদ জানালেন। মসজিদ প্রকম্পিত হলো।

তিনি কবির চৌধুরীকে উদ্দেশ করে বললেন, বাদুড় যেমন সূর্য চোখে দেখে না আপনার অবস্থাও তাই। ঢাকা মসজিদের শহর, মসজিদ আল্লাহর ঘর। এ জমিনের মালিক আল্লাহ। মসজিদ নিয়ে কবির চৌধুরী যে বেয়াদবী ও কটূক্তি করেছে তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। নতুবা যে দেশে মসজিদ নেই সে দেশে চলে যান। এই মসজিদের শহরে পাশ্চাত্যের দালালি করে থাকা যাবে না।

‘পাকিস্তান আমলের ঘটনা। আজম খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হয়ে ঢাকায় এলেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের একটি সম্মেলন ডাকলেন। মাওলানা উবায়দুল হক রহ. যুবক আলেম ছিলেন। নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি, হাকিমুল উম্মত থানভী রহ.-এর খলিফা মাওলানা আতহার আলী রহ.-এর সাথে তিনিও সে সম্মেলনে উপস্থিত হলেন।

গভর্নর আজম খান ওলামায়ে কেরামের সামনে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখলেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি আলেমগদের উদ্দেশে বললেন, আপনারা মদ-জুয়া বর্জন করার জন্য জনগণকে বোঝাবেন। জুমায় বয়ান করবেন, ওয়াজ-নসিহত করবেন।

উপস্থিত সকলেই নিশ্চুপ রইলেন। সবাই নীরবে গভর্নরের বক্তব্য শুনে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ নীরবতা ভঙ্গ করে বক্তব্যের মাঝখানে মাওলানা উবায়দুল হক দাঁড়িয়ে গেলেন। প্রতিবাদের সুরে গভর্নরকে লক্ষ্য করে উচ্চকণ্ঠে বললেন, ‘আপনারা মদের লাইসেন্স দিবেন আর আমাদের বলবেন, ওয়াজ করতে। আগে আপনারা লাইসেন্স বন্ধ করুন তারপর আমরা ওয়াজ-নসিহত করে জনগণকে বোঝাব।

১৯৯৩ সালে খতমে নবুওয়ত আন্দোলন যখন তুঙ্গে। তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর সাথে খতমে নবুওয়ত বিষয়ে আলোচনার জন্য ওলামায়ে কেরামের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে খতিব সাহেব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান।

মন্ত্রীর সাথে দীর্ঘ আলোচনার এক পর্যায়ে খতিব সাহেব তার সিলেটি টোনে বললেন, ‘মন্ত্রী সাব! আপনি আল্লাহ এক, মুহাম্মদ সা. শেষ নবী এবং তারপর অন্য কোনো নবী আসবেন না— এ কথা বিশ্বাস এবং ঘোষণা করেন কি না?

মন্ত্রী বললেন, জী হাঁ! খতিব সাহেব আবার প্রশ্ন করলেন, এ বিশ্বাস যারা করে না, তারা মুসলমান কি না? মন্ত্রী বললেন, ‘না! তারা মুসলমান নয়।’ আমরা তো ভিন্ন কিছু চাই না। শুধু এটুকু রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করে দিন।

আরও অনেক কথা হলো। অবশেষে মন্ত্রী কাদিয়ানীদের অপব্যাখ্যা সম্বলিত কুরআনের তাফসিরসহ বিভিন্ন প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষণার ওয়াদা করেছিলেন এবং তা আংশিক বাস্তবায়নও হয়েছে।

২০০৭ সালে প্রথম আলো পত্রিকার আলপিন ম্যাগাজিনে রাসূল সা. ও হযরত আবু হুরায়রাকে নিয়ে বেয়াদবীমূলক কার্টুন প্রকাশ করে। এর প্রতিবাদে খতিব সাহেবের নেতৃত্বে সারাদেশে দুর্বার আন্দোলন ও বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠে। কয়েকজন সাংবাদিক বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য খতিব সাহেবের বাসায় হাজির হন। তাদের দেখে খতিব সাহেব বললেন, অপরাধ করলেন, এত বড় আর ক্ষমা চাইলেন দেড় ইঞ্চি। আলেম সমাজ এমন ক্ষমা মানে না।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ধর্ম উপদেষ্টা ড. মতিউর রহমানসহ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকার সম্পাদককে নিয়ে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বায়তুল মোকাররম ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বৈঠকে বসেন।

বৈঠকের শুরুতেই খতিব সাহেব প্রথম আলোর সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার পত্রিকা শুরু থেকেই ইসলাম ও ইসলামি মূল্যবোধের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে আসছে। দেশে নব্বই ভাগ মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অধিকার আপনাকে কেউ দেয়নি। আপনাদের অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য।

পরে সকলের অনুরোধ ও সমঝোতায় প্রথম আলোর সম্পাদক ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না— মর্মে অঙ্গীকার করে খতিব সাহেবের হাতে তওবা করেন।

সমকালীন বাংলার মুসলমানদের জন্য মাওলানা উবায়দুল হক একটি স্মরণীয় নাম, সত্যোচ্চারণে একটি অপরিমেয় সাহসী কণ্ঠ। দীনের উপর কোনো আঘাত এলে এই সহজ-সরল মানুষটি বজ্রকঠোর হয়ে দাঁড়াতেন।

বায়তুল মোকাররমের খতিব হয়ে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠিত সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের সভাপতি এবং জাতীয় শরীয়াহ্ কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের মতো গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন।

আজকের এই দিনে তিনি আল্লাহর কাছে পাড়ি জমান। কে জানে আরেকজন সাহসী খতিবের জন্য জাতিকে আরো কতোটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। আজ দেশে অসংখ্য খতিব আছেন। কিন্তু একজন স্পষ্টভাষী মিম্বরের সিপাহসালার নেই। নেই খতিব সাহেবের মতো একজন মানুষ।

আল্লাহপাক তার জীবনের সকল নেক আমলগুলো কবুল করুন। তাকে জান্নাতুল ফেরদাউসের আ’লা মাকাম নসীব করুন। তার মতো রাহবারে মিল্লাহ আল্লাহপাক এ জাতিকে উপহার দিন।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ