সুফিয়ান ফারাবী
বিশেষ প্রতিবেদক
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ‘সহজ’ করতে সব মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সরকারি বেতন কাঠামোর আওতায় আনার প্রস্তাব করেছেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমদ। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলেন তিনি বলেন, অনেক চেষ্টার পরও সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে সাধারণ বিবৃতি দিতে বাংলাদেশের ইসলামী নেতাদেরকে এক জায়গায় আনা যায়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, সব ইমামকে সরকারি চাকরির আওতায় আনা উচিত। তাহলে এটা সহজ হবে। তাহলে আমরা অনেক কিছুই করতে পারব।
র্যাবের মহাপরিচালকের এ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা। মসজিদের ইমাম, খতিব ও খাদেমদের সরকারি বেতনের আওতায় আনা সকল আলেমদের দাবি হলেও নিয়ন্ত্রণের জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ তারা মেনে নিতে পারছেন না। কেউ কেউ এ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন-র্যাব মহাপরিচালকের এ বিষয়ে মন্তব্য করার অধিকার আছে কিনা? তারা মনে করেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আসতে পারে। এ ধরনের বক্তব্য দেয়া র্যাব মহাপরিচালকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।’ এ বিষয়ে মতামত দিয়েছেন দেশের তিন গুনীব্যক্তি!
নিয়ন্ত্রণের বাইরে রেখে ইমামদের সরকারি ভাতা দেওয়া যেতে পারে : আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ
সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে রেখে ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সরকারি ভাতা দেওয়ার দাবি জানালেন শোলাকিয়া ইদগাগের গ্র্যান্ড ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। তার মতে, অন্যান্য নাগরিকের মতো ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের বেতন ধার্যকরা সরকারের দায়িত্ব। দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতো তারাও সকল বিষয়ে সমান অধিকার রাখে। তবে সেটা সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে হতে হবে।
তিনি বলেন, মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা চলবেন কুরআন ও হাদিস অনুসারে। এখানে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকা চাই। সুতরাং নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সরকারিভাবে বেতনের আওতায় আনা ঠিক হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সরকারি বেতনের কথা উল্রেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলো যেভাবে সরকার থেকে খরচ নিয়ে থাকে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে, সেভাবে ইমাম -মুয়াজ্জিনদেরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখা উচিত। কুরআন ও হাদিসই হচ্ছে তাদের নিয়ন্ত্রণ রেখা।
"আমি কয়েকবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সামনে বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। প্রতিবারই তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তবে পজেটিভ বা নেগেটিভ কোনোরূপ মন্তব্য করেননি। তবে তাকে ইতিবাচকই মনে হয়েছে।" বলছিলেন আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।
সরকারি বেতনের সাথে ইমামদের বয়ানের কোনো সম্পর্ক নেই : আলহাজ মিসবাহুর রহমান চৌধুরী
সরকারি বেতনের সাথে ইমামদের বয়ানের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন ইসলামি ঐক্যজোরে চেয়ারম্যান আলহাজ মিসবাহুর রহমান চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের সকল মসজিদের ইমাম এবং খতিবগণ দীর্ঘদিন যাবৎ সন্ত্রাস মাদক ও এই জাতীয় সকল অনৈসলামিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বয়ান বিবৃতি দিয়ে আসছেন। সরকার এ বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছেনও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে মসজিদের খতিব তাদের মুসল্লীদেরকে সকল অন ইসলামিক কর্যক্রম থেকে বিরত থাকার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়টি সরকারের কাছে সুস্পষ্ট।
‘ইমামগণ তাদের বক্ক্তাতৃয় মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনারা কি জাতীয় অনৈসলামিক কার্যক্রম থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখুন, নিজের ফ্যামিলিকে বিরত রাখুন, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে প্রশাসনকে সহযোগিতা করুন।’
‘ইমামগণ বহু আগে থেকেই এসব বিষয়ে কথা বলে আসছে। নতুন করে কথা বলানোর জন্য তাদেরকে সরকারি বেতন দেওয়ার কারনটি অনর্থক। এ কাজটি তারা এমনিতেই ঈমানী দায়িত্ব থেকে পালন করে আসছেন।’
"সাথে রাতে র্যাবের মহাপরিচালক কে বিষয়টি অবহিত করতে চাই- সরকারি বেতনের সাথে তাদের কর্মসূচির কোন সম্পর্ক নেই। জনসচেতনতা মূলক বক্তব্য গুলো তারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দিয়ে থাকেন। কারণ তাদের মনের ভেতর আল্লাহর ভয় ও মানুষের জন্য ভালোবাসা থাকে।" বলছিলেন আলহাজ মিসবাহুর রহমান চৌধুরী।
র্যাব মহাপরিচালকে সাত লাখ ইমামের কাছে দুঃখ প্রকাশ করার আহ্বান জানালেন লেখক ও কলামিস্ট মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সকল মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন ও খাদেমের বেতন সরকারের দিতে হবে এটা আমাদের দাবি। এটা দেওয়ার মালিক সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ; র্যাবের ডিজি পুলিশের আইজি এটা দেওয়ার মালিক নন।’
‘টাকা দিলেই তারা আমাদের কথা মত বয়ান দেবে, নির্দেশ শুনবে, আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এ কথাটা যদি ডিজি সাহেব বলে থাকেন, তাহলে তিনি সম্মানিত ইমামদের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন এবং ভুল বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাত লক্ষ মসজিদের ইমামগণ সন্ত্রাস মাদক দুর্নীতি জুয়া অন্যায় অবিচার অশ্লীলতা পাপাচার সহ সব ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ কথা বলছেন। সরকারের চাহিদা যেমন, সন্ত্রাস গলাকাটা গুজব ডেঙ্গু ইত্যাদি প্রতিটি ইস্যুতে সরকারকে সত্যিকার ও কার্যকর সহায়তা করেছেন। এতে কোন সন্দেহ নেই।’
‘সম্ভবত উনি বলেছেন, ইমামরা বলেন না, বলানোর জন্য তিনি সরকারি বেতনের কথা বলেছেন। নতুন করে এটা বলার কোন প্রয়োজন ছিল না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সকল ইমামদের অনেক আগেই এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।, যোগ করেন মাওলানা নদভী।
আরএম/