সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মুসলিমদের কাছে ইসলামের প্রত্যাশা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ড. আহমদ কামাল আবুল মাজদ

বর্তমানে যুদ্ধবিগ্রহ সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। বেড়ে গিয়েছে আধিপত্য ও শক্তিপ্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। মুসলমানদের জন্য এখন তাদের ভিশন স্পষ্ট করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের লক্ষ্য নির্ধারণ, তারা কি চায় এবং তাদের থেকে কি চাওয়া হয়- এসব বিষয়েও নতুন করে আলোচনার দাবি জানাচ্ছে।

মুসলমান জাতি ইসলামের পতাকা তলে পদার্পণ করেছে ১৫ তম শতাব্দী হয়ে গেলো। এখন এসে এই প্রশ্ন উত্থাপন করা যদিও বিস্ময়কর; কিন্তু প্রশ্নটা করতেই হবে।

আমরা আমাদের আশপাশে মুসলিম তরুণদের অস্থির চিত্র দেখতে পাচ্ছি। জীবনের প্রতি তারা বিতৃষ্ণ। হাজার হাজার মুসলিম যুবক দুনিয়া থেকে বিযুক্ত। তাদের অনেকেই নিঃসঙ্গতার আশ্রয় গ্রহণ করেছে, যা তাদের মধ্যে এবং তাদের জীবনস্রোতের মধ্যে আড়াল সৃষ্টি করে রেখেছে। বিষণ্ণতা, নিঃসঙ্গতা ও প্রত্যাখ্যানের দেয়ালের পেছনে তারা জড়ো হচ্ছে।

তারা ধরেই নিয়েছে-- চিন্তাচেতনা, আদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে মানুষ যা-কিছু গ্রহণ করছে; ইসলাম তার বিপরীত! তাদের এ কলুষিত চিন্তাভাবনা দূরীভূত করার দায়িত্ব নিতে পারে ইসলামি জাগরণের স্প্রিহা ও দূরদর্শী কর্মযজ্ঞ।

নতুন প্রজন্ম, যারা আগামি সভ্যতা নির্মাণ করবে তাদের বুঝতে হবে যে, মুসলমানরাও অন্যদের মতই মানুষ। এবং পৃথিবী নামক এই গ্রহে তাদের-ও বিনির্মাণের দায়িত্ব রয়েছে। তাদেরকে সে দায়িত্ব নিতে হবে। বৈরাগ্যের জীবন কখনোই কালচার হিসেবে ইসলামে গ্রহণীয় হতে পারে না।

অনুরূপ, দুনিয়া বর্জন, পৃথিবী থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়া; মুসলমানদেরকে কেবল পশ্চাদপদতার দিকেই নিয়ে যাবে। সমগ্র বিশ্ববাসীর সামনে তাদেরকে লাঞ্ছিতই করবে। এক্ষেত্রে মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি, সম্মানের প্রতিশ্রুতি এবং পৃথিবীতে তাদের প্রতিনিধি হবার অঙ্গীকার একটুও বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, যদিও মুসলমানরা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি।

আমরা জানি, আল্লাহর বিধানে কোন পরাবর্তন নেই এবং কেউ তার বিধান থেকে ছাড় পাবে না। তদ্রুপ আল্লাহর নুসরত ও পৃথিবীতে খেলাফত প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি শর্তসাপক্ষ বিষয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

يأيها الذين ءامنو إن تنصروا الله ينصركم ويثبت أقدامكم.

[ হে ঈমানদারগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, তবে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের কদম দৃঢ় করে দিবেন। সূরা মুহাম্মদ -৭ ]

যাবুর কিতাবে আল্লাহপাক বলেছেন, পৃথিবীর উত্তারাধীকারী হবে তাঁর সৎ বান্দাগণ ।

মুসলমানগণ কোন কাজে অক্ষম হবে এটা হতে পারে না। তারা গোটাজীবন অতীত সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ও পূর্বসূরিদের গর্বে গর্বিত হয়ে অলসতা করবে, তা-ও যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ তারা জানে-- 'কর্ম যাকে পিছিয়ে দেয় বংশ তাকে এগিয়ে দিতে পারে না'।

যুগের ভাষায় এ-সবের অর্থ হলো-- সামান্য পরিশ্রম ও কথার বাহুল্য থেকে মুসলমানরা তওবা না করলে ভবিষ্যৎ মানচিত্রে তাদের কোন জায়গায়ই থাকবে না।

তাদের প্রত্যেকেই যদি কোমর বেঁধে নামে এবং রাতদিন অধিক পরিমাণে আল্লাহর ইবাদতে কাটায়, ছোটখাটো বিষয়ে সমালোচনা পরিত্যাগ করে কাজ করতে থাকে, তাহলেই কেবল ক্ষতিপূরণ হয়ে সমৃদ্ধির পথে এগোতে পারবে।

জাতি আজ শত-সমস্যায় জর্জরিত। ভারি ভারি বোঝা তাদের মাথার উপর। প্রতিনিয়ত জুলুমের দণ্ডবাড়ি। অন্যায়। অবিচার। এতসব সমস্যাকে উপেক্ষা করে তরুণ-যুবকেরা মজে আছে অবৈধ রিলেশন, পশ্চিমা স্টাইলের অন্ধঅনুকরণ ও ফ্যাশন জগতে। তারা জীবনের বড় একটা সময় নষ্ট দিচ্ছে এর-ওর দোষচর্চায়। অহেতুক সমালোচনা করে।

যে-সব তর্কবিতর্কের কোন অন্ত নেই, তারা যদি সেসবে লিপ্ত হয়ে পড়ে তাহলে এ জাতির কী হবে? অথচ তাদের প্রত্যেকের কাঁধেই রয়েছে বিরাট বিরাট দায়িত্ব।

হ্যাঁ, মানুষকে হিদায়াতের পথ নির্দেশ, সমাজে ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা এবং আল্লাহর নির্দেশের উপর অবিচল থাকা ছাড়া প্রতিটি মুসলমানের কাঁধে রয়েছে আরো কিছু গুরু দায়িত্ব। সে সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।

কিন্তু কথা হলো, আহব্বানকারী যদি দুর্বল হয় তাহলে মানুষ তার কোন কথাই গ্রাহ্য করে না। কথায় কাজে মিল না থাকলেও মানুষ তাকে বর্জন করে। আমরা যদি জ্ঞানেগুণে ক্ষমতা ও অর্থে সমৃদ্ধ না হতে পারি, তাহলে আমাদের আওয়াজ বাতাসের সঙ্গেই উড়ে যাবে।

তাই তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার আবেদন হলো-- এসো, আমরা আমাদের দুই-কান থেকে আঙুল সরিয়ে ফেলি। চোখের আবরণ ফেলে নিজেদের প্রস্তুত করি বড় বড় কাজের জন্য! অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাই! আমরা বিশ্বাস করি, এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবো।

আর যদি এসব প্রচেষ্টা থেকে উদাসীন থাকি, তাহলে ইসলামি চেতনা ও সংস্কৃতি উন্নয়নের আওয়াজ কেবল ফাঁকা বুলিই রয়ে যাবে। এই বুলি দিয়ে ধর্ম ও জীবন সংশোধন হবে না কখনো।

বাংলা রুপান্তর : আবদুল্লাহ মারুফ

আরএম/

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ