মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
মক্কা থেকে
জান্নাতুল মুয়াল্লা। সৌদি আরবের পবিত্র মক্কায় অবস্থিত একটি বিখ্যাত কবরস্থান। এটি ইসলাম পূর্ব যুগে স্থাপিত একটি প্রাচীন কবরস্থান। মুয়াল্লা শব্দের অর্থ হচ্ছে উঁচু। এই কবরস্থানটি পবিত্র মক্কার উঁচুদিকে অবস্থিত বলে একে মুয়াল্লা বলা হয়। এটি মসজিদুল হারামের অল্প দূরে অবস্থিত। মসজিদুল হারামের মারওয়া গেট সংলগ্ন পাহাড় থেকে বের হয়ে যে সড়কটি মিনার দিকে গেছে সে সড়কের বাম পাশে এটি অবস্থিত। জান্নাতুল মুয়াল্লার প্রবেশপথ মারওয়া গেট থেকে প্রায় ১ কি.মি. দূরে অবস্থিত।
মুয়াল্লা কবরস্থানের ওপর দিয়ে বর্তমানে হুজন ওভার ব্রিজ তৈরি করাতে বাহ্যিকভাবে কবরস্থানটি দু’ভাগে বিভক্ত দেখা যায়। অবশ্য ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে দু’দিকে পারাপারের ব্যবস্থা আছে। ওভারব্রিজের ওপর থেকে হজরত খাদিজা রা.-এর কবর স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এই দর্শনীয় স্থানটি যেহেতু হারাম থেকে খুবই কাছে সেহেতু স্থানটিতে ভিড় একটু বেশি হয়।
মক্কা সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন
গত মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, হাজি সাহেবগণ কবরস্থানটি ঘুরে ঘুরে দেখছেন। প্রবেশমুখ পার হলেই অপেক্ষা করার জায়গা আছে। এখানে দর্শনার্থীদের পান করার জন্য ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা আছে। নারীদের কবরস্থানে প্রবেশ নিষেধ, তাই কবরস্থানের ফটকের বাইরে অনেক নারীকেই বসে দোয়া করতে দেখা গেছে।
হিজরতের পূর্বে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক আত্মীয়কে এখানে দাফন করা হয়েছে। বিখ্যাত কবরগুলোর উপর বিভিন্ন সময় গম্বুজ ও স্থাপনা নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীতে সৌদি আরবের সরকার তা ধ্বংস করে দেয়। এখন এখানে কোনো কবর বাঁধানো নেই, কবরে কোন নামফলকও নেই।
এখানে সমাহিত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ব্যক্তিগণের মধ্যে রয়েছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচা এবং হজরত আলি রা.-এর পিতা আবু তালিব ইবনে আবদুল মুত্তালিব, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রপ্রপিতামহ আবদে মানাফ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রপিতামহ হাশিম ইবনে আবদে মানাফ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাদা আবদুল মুত্তালিব, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রথম স্ত্রী উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ রা., রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বড় ছেলে কাসিম, হজরত আসমা বিনতে আবি বকর রা., হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রা., হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রা.-এর মা ও ইসলামের প্রথম শহীদ হজরত সুমাইয়া রা., হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. প্রমুখ।
সময়ের পরিবর্তনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কবরস্থানটি কয়েকটি স্তরে বিন্যাস করা হয়েছে। পুরাতন কিছু বিখ্যাত ব্যক্তির কবরকে অক্ষত রেখে পরবর্তী কবরগুলো নতুন মাটি দ্বারা ভরাট করে ফেলা হয়েছে।
হজ করতে এসে কেউ মারা গেলে আগে এখানে কবর দেওয়া হতো। স্থান সংকুলান না হওয়ায় এখন নতুন নির্মিত শারায়া কবরস্থানে (হাজিদের কবরস্থান) দাফন করা হয়ে থাকে।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
আরএম/