বেলায়েত হুসাইন: হাদীসশাস্ত্রের 'আমিরুল মু'মিনিন' খ্যাত প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম বুখারী রহ. এর স্মৃতিচারণ করলে অবধারিতভাবেই তার জন্মস্থান বুখারার কথা সামনে আসে। ঠিক তেমনি মহান এই মনীষার মৃত্যু ও মৃত্যু-পরবর্তী সময়ের আলোচনা যখন হয়, তখন আমাদের স্মরণ করতে হয় সমরখন্দের কথা। প্রচণ্ড ধীশক্তির অধিকারী মহান এ ইমামের সমাধিকার্য এখানেই সম্পন্ন হয়েছে।
প্রাচীন নগরী সমরকন্দ নানাদিক থেকে প্রসিদ্ধ। তবে এখানে ইমাম বুখারী রহ. এর সমাধি হওয়ায় প্রসিদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সবশ্রেণীর মুসলমানদের কাছে রয়েছে শহরটির আলাদা মর্যাদা। আজ পাঠকদের সামনে সমরকন্দে অবস্থিত ইমাম বুখারী রহ. এর সমাধি নিয়ে কথা বলব।
ইমাম বুখারী রহ. এর সমাধিকে সমরকন্দের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল হিসেবে শ্রেণীভূক্ত করা হয়। ইমাম বুখারী রহ. কে যেমন সবশ্রেণীর মুসলিম ভালোবাসেন, তেমনিভাবে উজবেকিস্তানের প্রাচীনতম এ নগরীতে অবস্থিত তার সমাধিকেও তারা সমানভাবে ভক্তি ও শ্রদ্ধার নজরে দেখেন। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার অসংখ্য ভক্ত-অনুরক্ত প্রিয় শায়েখের ফয়েজ ও বরকত লাভ করতে বছরের সব ঋতুতেই সমাধি-চত্বরে সমাগত হন-এটাই তার বাস্তব প্রমাণ।
ঐতিহাসিক গ্রন্থসমূহ এবং লোকমুখে বর্ণিত কথা থেকে ইমাম বুখারী রহ. এর মৃত্যু-পরবর্তী চমৎকার কিছু ঘটনা জানা যায়, তিনি মৃত্যুবরণ করলে পরিবারের লোকজন যখন তার দাফনকার্য সম্পাদন করে ফিরে আসছিলেন তখন উপস্থিত সকলে তার কবর থেকে স্বর্গীয় সুঘ্রাণ অনুভব করেন। এভাবে কয়েকদিন অনবরত এ ঘ্রাণ অব্যাহত ছিলো।
আবার এটাও বর্ণিত আছে, কিছু মানুষ ইমাম বুখারী রহ. এর কবরের উপরে আসমান থেকে নেমে আসা কি একরকমের রৌশনি দেখতে পেলো, আর তা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছিলো, যেন পুরো কবর নূরানি আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। এসব আশ্চর্যজনক ব্যাপার মুহূর্তেই মানুষের কানে পৌঁছে যায়। কৌতূহলী মানুষ তা দেখার জন্য সমাধিতেচত্বরে ভীড় জমাতে আরম্ভ করে। অবস্থা এমন হল, সমাধির উপরে আর মাটি রইলো না, অতি আবেগী ভক্তকুল ইমাম বুখারী রহ. এর বরকত লাভ করতে তার কবরের মাটি খুঁড়ে নিতে লাগলো। তাদের থেকে সমাধি সুরক্ষা করা যাচ্ছিলো না।
এদিকে কর্তৃপক্ষ দেখলেন, এভাবে চলতে থাকলে একসময় হয়তো কবরই অদৃশ্য হয়ে যাবে, এজন্য তারা কাঠের বেড়া দিয়ে কবরের চারপাশে বেষ্টনী তৈরি করে দিলেন। যাতে আবেগী ভক্তরা কবরের কাছে ভীড়তে না পারে।
ষষ্ঠদশ শতাব্দী পর্যন্ত ইমাম বুখারী রহ. এর কবর এভাবেই ছিল। একপর্যায়ে তার সমাধিকে কেন্দ্র করে মসজিদ নির্মান করা হয় এবং সমাধিকে কনক্রিট দ্বারা আবৃত করে রাখা হয়। মসজিদের আঙিনায় রোপন করা হয় ফুল ও ফলের গাছ।পরবর্তীতে স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে এবং সৌদি আরবের সহযোগিতায় সমাধির উপরে বড় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়।
মসজিদে সংযোজন করা হয় বড় একটি গম্বুজ, যার নিচে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি কয়েক হাজার হাদীসের শিক্ষার্থী সবক নিতে পারে। মসজিদ,সৌধ ও এখানের স্থাপনাসমূহে ব্যবহৃত হয়েছে মোজাইক পাথর ও রঙিন কাঁচ। তাছাড়া দারুণ কিছু আরবি শিলালিপি দিয়ে মসজিদ এবং স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়েছে। আর পুরো কমপ্লেক্স নির্মানে অনুস্মরণ করা হয়েছে প্রাচীন উজবী স্থাপত্যশৈলীর।
-এএ