রকিব মুহাম্মদ: সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আর নেই। ঢাকা সিএমএইচে ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার সকাল পৌনে আটটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ছাড়েন। (ইন্না লিল্লাহি…..রাজিউন)। তার মৃত্যুর পর সন্তানরাই এখন আলোচিত এ রাজনীতিবিদের উত্তরাধিকার।
মৃত্যুকালে তিন ছেলে এক মেয়ে রেখে যান সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। তার সন্তানরা হলেন- রাহগির আল মাহি এরশাদ, এরিক, আরমান এরশাদ ও জেবিন। ‘আমার কর্ম আমার জীবন’ শীর্ষক এরশাদ তার আত্মজীবনী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এই তিন ছেলে ও এক মেয়ের কথা। তবে তার ছেলেমেয়ে নিয়ে নানা সময় বিতর্কের জন্ম নিতে দেখা গেছে।
এরশাদের প্রথম স্ত্রী রওশন এরশাদ। তবে এর আগেও তার একটি বিয়ের খবর পাওয়া যায়। ১৯৮৩ সালে সামরিক শাসক থাকার সময়ই স্ত্রী রওশন এরশাদের পুত্র জন্ম দেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে তা নিয়ে বিতর্ক ছিল। রওশনের সেই ছেলের নাম রাহগির আল মাহি এরশাদ (শাদ এরশাদ)। তরুণ বয়সে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় তাকে গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল। তারপর মালয়েশিয়ায় প্রবাস জীবন শেষে তিনি এখন ঢাকাতেই থাকেন। পেশায় ব্যবসায়ী বলা হলেও তার কী ব্যবসা তা জানা যায়নি।
এরশাদের আরেক ছেলে এরিক এরশাদ (১৮)। তিনি বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে বাবা এরশাদের সঙ্গে থাকেন। গান-বাজনায় বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে তার। এরিকের মা বিদিশার সঙ্গে এরশাদের বিয়ে টিকেছিল কয়েক বছর। ২০০৫ সালে বিচ্ছেদের পর এরিককে নিয়ে এরশাদ ও বিদিশার যুদ্ধ আদালতে গড়িয়েছিল। পরে আদালতের আদেশে এরিকের দায়িত্ব পান এরশাদ। তাকেই এরশাদ সবচে’ বেশি ভালোবাসেন।
এ ছাড়া জাপা চেয়ারম্যানের পালিত ছেলে আরমান এরশাদ (২৫) থাকেন এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে। তার একমাত্র পালিত মেয়ে জেবিনের (৩৫) বিয়ে হয়েছে এবং তিনি এখন লন্ডনে থাকেন।
কারা আছেন এরশাদের সম্পত্তির ট্রাস্ট বোর্ডে?
গত ৭ এপ্রিল একটি ট্রাস্ট গঠন করে তাতে নিজের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে ট্রাস্ট গঠন করেছিলেন এরশাদ। সে হিসেবে তার সমস্ত সম্পত্তির একমাত্র মালিকানা এখন ট্রাস্টের। সে সময় এরশাদের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছিলেন, নিজের অবর্তমানে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ নিরসনেই ট্রাস্ট গঠন করেছেন তিনি। ট্রাস্টের নামে ঢাকা ও রংপুরের যে সম্পদ তিনি দান করেছেন তার অনুমানিক মূল্য ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা।
ট্রাস্টের সদস্য হিসেবে এরশাদ ছাড়াও রয়েছেন তাঁর ছেলে এরিক এরশাদ, একান্ত সচিব ও ভাগ্নে মেজর (অব.) খালেদ আক্তার, চাচাতো ভাই মুকুল এবং তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তবে এরশাদ তার ট্রাস্ট বোর্ডে রাখেননি স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই জিএম কাদেরকে।
বিভিন্ন সূত্র মতে, এই ট্রাস্টের সমস্ত সম্পত্তি মূলত এরশাদ তার ছোট ছেলে এরিক এরশাদের জন্যই রেখেছেন। কিন্তু এরিক প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়ায় এবং অটিস্টিক হওয়ায় এরশাদের মৃত্যুর পরেও যাতে অন্য কেউ এ সম্পত্তি ভোগ বা দখল করতে না পারে, সে কারণেই এই ট্রাস্ট গঠন করে গিয়েছিলেন তিনি। এই সম্পত্তি থেকেই এরিকের ভরণ-পোষণ করা হবে।।
আরএম/