মাহমুদুল হাসান
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভেঙ্গে যাওয়া হাতে লাগানো রড খুলতে এসে ট্রমা জেনারেল (প্রাইভেট) হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে জুয়েল মিয়া নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত জুয়েল ভৈরব শহরের চন্ডিবের গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে। তার স্বজনরা হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর করেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাতে শহরের ট্রমা জেনারেল (প্রাইভেট) হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ডা. কামরুজ্জামান আজাদ নামে এক চিকিৎসকে আটক করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, ট্রমা জেনারেল (প্রাইভেট) হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরে গৌরাঙ্গ নামে এক ওয়ার্ড বয় নিজেই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের ভূমিকা পালন করেন। হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তাররা নির্দেশ দেন আর গৌরাঙ্গ কাজ করেন। ফলে হাসপাতালের অধিকাংশ অপারেশনের সময় ওয়ার্ড বয় গৌরাঙ্গই করে থাকেন। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) জুয়েলের বেলায়ও ব্যতিক্রম হয়নি।
নিহতকে ডা. ইমরান এনেস্থিসিয়া দিয়েছেন। নিহত জুয়েলকে যে এনেস্থিসিয়া প্রয়োগ করা কথা তা দিতে ডা. ইমরান অপরাগতা জানান। কারণ ওই এনেস্থিসিয়া প্রয়োগের জন্য তিনি আনফিট ছিলেন। কিন্তু ওয়ার্ড বয় গৌরাঙ্গের চাপাচাপির মাধ্যমে তাকে এনেস্থিসিয়া দিতে বাধ্য করা হয়। ফলে জুয়েল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত দু’বছরেরও বেশি সময় আগে দুর্ঘটনায় জুয়েলের এক হাতের হাড় ভেঙে যায়। ফলে অপারেশনের সময় তার হাতের ভেতরে রড ঢুকানো হয়। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রড খুলতে তাকে শহরের ট্রমা জেনারেল (প্রাইভেট) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে হাসপাতালের ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) নিয়ে যাওয়া হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও জুয়েলের জ্ঞান ফেরেনি। এতে স্বজনদের সন্দেহ হলে ওটিতে গিয়ে জুয়েলকে মৃত অবস্থায় পান।
পরে নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে শত শত লোক হাসপাতালে ভিড় করে। এক পর্যায়ে উত্তেজিত স্বজনরা হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এসময় হাসপাতালের ভেতরে অপারেশন করা চিকিৎসক ডা. কামরুজ্জামান আজাদকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত সাদমীন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহা. আনিসুজ্জামান পরিদর্শনে যান। একই সাথে পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ডা. কামরুজ্জামান আজাদকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে জুয়েলের এই মৃত্যুকে কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার। তাদের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেনো দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেন। যাতে করে আর কাউকে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে না হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভৈরব থানার ওসি মুহা. মোখলেছুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি ডা. কামরুজ্জামান আজাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
-এএ