রকিব মুহাম্মদ
যুগ্ম বার্তা সম্পাদক
জর্ডানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকি। গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার চূড়ান্তপর্বে অংশগ্রহণ করেন ত্বকি। শুক্রবার ৬২ দেশ থেকে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জনকারী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়। জর্ডানের বাদশাহ তাকে পুরস্কৃত করেন।
এ বিষয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমকে হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকি বলেন, “আলহামদুল্লিাহ! আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনেক বড় একটি নেয়ামত পেয়েছি। দেশে ও দেশের বাইরে কুরআন প্রতিযোগিতায় অনেকবার অংশগ্রহণ করেছি, কিন্তু প্রথম স্থান অর্জন করতে পারিনি। এবারে আমার অর্জনটা ব্যতিক্রম, আনন্দটাও অন্যরকম। কারণ, আমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ”
কুমিল্লা মুরাদনগরের ডালপা গ্রামে ২০০০ সালে জন্মগ্রহণ করেন হাফেজ ত্বকী। বাবা মাওলানা বদিউল আলম পেশায় একজন মাদরাসা শিক্ষক। নিজের ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন তিনি। হাফেজ ত্বকী বললেন, “২০১২ সালে সাদ সুহাইল ও তানভীর ভাই যৌথভাবে সৌদি আরবে প্রথম স্থান অধিকার করেন। সেখান থেকেই আমার স্বপ্নের যাত্রা শুরু হয়। যোগ্যতা ও সামর্থ ছিল না আমার। তাছাড়া আমার বাবা-মা আমাকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতেন। আল্লাহর রহমত ও আমার উস্তাদের প্রচেষ্টায় আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ”
হাফেজ ত্বকী রাজধানীর মারকাজুত তাহফিজ ইন্টা.-এর ছাত্র। কুরআন শিখেছেন মারকাজুত তাফফিজ মাদরাসার পরিচালক হাফেজ নেছার আহমদ আন নাছিরীর কাছে। ২০১৪ সালে এনটিভিতে অনুষ্ঠিত পিএইচপি কুরআনের আলো প্রতিভার সন্ধানে প্রতিযোগিতায় ১ম, ২০১৭ সালে হুফফাজুল কুরআন ফাউণ্ডেশন আয়োজিত জাতীয় হিফজ প্রতিযোগিতায় ১ম এবং ২০১৭ সালে কুয়েতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় ৭৫টি দেশের প্রতিযোগীর মাঝে ২য় স্থান অধিকার করা বিস্ময় বালক এই ত্বকী।
“এ বছর জর্দান কুরআন প্রতিযোগিতার জন্য ইসলামী ফাউন্ডেশনের বাছাই পর্বে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে প্রতিটা মূহুর্ত আমার ভেতরে এই চিন্তাই কাজ করত যে আমাকে প্রথম স্থান অর্জন করতে হবে। তখন থেকেই আল্লাহর তাওফিকে আমি চেষ্টা করেছি। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগ পর্যন্ত নিজেকে প্রস্তুত করেছি। আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করেছি, আমার কারণে আমার উস্তাদ, পরিবার ও দেশের যেন কোন বদনাম না হয়।” বললেন হাফেজ সাইফুর রহমান।
মারকাজুত তাহফিজ ইন্টা.-এর মাদরাসার পরিচালক ও হাফেজ ত্বকীর উস্তাদ হাফেজ নেছার আহমদ আন নাছিরী তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বললেন, “জর্ডানে যখন ত্বকীর নাম ঘোষণা করা হলো, তখন কিন্তু আমার নাম বা আমার মাদরাসার নাম বলা হয়নি, বলা হয়েছে বাংলাদেশী প্রতিযোগী প্রথম স্থান করেছে। আমার একজন ছাত্র সে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। শুধু আমি কেন, গোটা দেশের সকল মানুষ খুশি।”
তিনি বলেন, “আমি দেখেছি, ত্বকী আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক কান্নাকাটি করত। সারারাত কুরআন তেলাওয়াত করত, মসজিদে নামাজ আদায় করতে রাত কাটাত। মূলত, কুরআনের প্রতি তার অঘাধ ভালোবাসা ও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা তাকে প্রথম হতে সাহায্য করেছে বলে আমি মনে করি।”
জর্ডানের এ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কারপ্রাপ্তের হাতে তুলে দেওয়া হয় কয়েক লক্ষ দিরহাম। সাইফুর রহমান বলেন, “পুরস্কারটা বড় অংকের। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পেরেছি এটাই বড় অর্জন। সর্বপ্রথম এই টাকা থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে যাব বলে নিয়ত করেছি। ”
ত্বকী বড় হয়ে কুরআনের একজন দক্ষ বিশ্লেষক ও প্রচারক হতে চান। দেশের ভালো কোন কওমি মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) শেষ করে মিশরের আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়েও উচ্চতর পড়াশোনা করতে চান বলে জানান তিনি।
বাবা-মা, উস্তাদ ও নিজের জন্য দোয়া চাইলেন হাফেজ তক্বী। তিনি বলেন, “আমার বাবা-মা এবং সকল উস্তাদ আমার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছেন সবসময়। তাদের এ ভালোবাসার প্রতিদান শোধ করার মতো কোন ক্ষমতা আমার নেই। আমি শুধু তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে পারব। আপনাদের কাছেও দোয়া চাই এবং আপনাদের জন্য দোয়া করি। আল্লাহ সবাইকে তার রহমতের ছায়ায় জায়গা দিন। আমিন।”
আরএম/