আব্দুল্লাহ আফফান: বৈচিত্র্যময় পরিবেশ, রোমাঞ্চকর উৎসব, প্রাচীন ইতিহাস ও অপূর্ব সব খাবারের সমারোহ যে কোন দেশের থেকে তুরস্ককে আলাদা করে রাখে। তুরস্ককে বলা হয় ‘এশিয়ার প্রবেশদ্বার’। অটোম্যান সাম্রাজ্যসহ ইউরোপ আর এশিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা এই তুরস্ক পর্যটকদের কাছেও বেশ আকর্ষণীয় জায়গা। তুরস্ককে উপভোগ করার আগেই কিছু বিষয় আপনার জানা প্রয়োজন।
ভিসার আবেদন: তুরস্কের ভিসা আবেদনের জন্য মূল ধাপ তিনটি। প্রথম ধাপটি হল ‘প্রি-অ্যাপ্লিকেশন’। এ ধাপে www.visa.gov.tr লিংকে গিয়ে একটি আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
এই ধাপে আবেদনকারীর জাতীয়তা, পাসপোর্ট নম্বর, তুরস্ক ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং কোন দেশের তুরস্ক দূতাবাসে ভিসা আবেদন ফরম জমা দেবেন আবেদনকারী তা জানতে চাওয়া হয়।
তথ্যগুলো পূরণ হলে একটি চুক্তিনামা আসবে। এর সাথে ‘সম্মত’ হলে ভিসা আবেদনের পরবর্তী ধাপে যাওয়া যাবে। এই জায়গাটায় এসে ভিসা আবেদনের সাথে যেসব দলিল বা ডকুমেট প্রয়োজন তার একটি তালিকাও পাওয়া যাবে।
এগুলো হল: ছবি, আয় সম্পর্কিত দলিল, বিমান বুকিং এর টিকেট, হোটেল বুকিং অথবা আমন্ত্রণ পত্রের দলিল, আবেদনকারী দেশে ফিরে আসবেন এই সম্ভাবনার স্বীকৃতিস্বরুপ প্রমাণাদি যেমন ব্যাংক স্টেটমেন্ট আর, পরিচিতিমূলক চিঠি।
‘প্রি-অ্যাপ্লিকেশন’ ধাপে যারা বিবেচিত হবেন তাদেরকে পরবর্তী ধাপ ই-ভিসা’র জন্য যোগ্য ঘোষণা করা হবে। ই-ভিসার জন্য যোগ্য ঘোষিত হলে www.evisa.gov.tr এ লিংকে গিয়ে মূল ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ এ ধাপে আবেদনকারীকে তার পাসপোর্টও ভিসা অফিসে জমা দিতে হবে।
তৃতীয় আর শেষ ধাপটি হল সরাসরি সাক্ষাৎকার পর্ব। এ ধাপে আবেদনকারী যে ভিসা অফিসে ভিসার জন্য আবেদন করেছেন সেই অফিসের একজন কর্মকর্তার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করবেন। এসময় দুই পক্ষের কথোপকথনে নির্ধারিত হবে আবেদনকারী ভিসা পাবেন কী পাবেন না।
সাধারণ তথ্যাবলী: ১. বিভিন্ন দেশ থেকে তুরস্ক ভ্রমণের জন্য যেসব ক্যাটেগরিতে ভিসা দেয়া হয় তা হল- ভ্রমণ/ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে, অফিসিয়াল ভিসা, শিক্ষার্থী বা শিক্ষা উদ্দেশ্যে ভিসা, কর্মী ভিসা, অন্যান্য ভিসা (যেমন: ট্রানজিট, চিকিৎসা ইত্যাদি)।
২. যে তারিখ পর্যন্ত একজন আবেদনকারী তুরস্কে অবস্থান করতে চান তার থেকে পরবর্তী ৬০ দিন পর্যন্ত আবেদনকারীর পাসপোর্টের মেয়াদ থাকা বাধ্যতামূলক।
৩. ভিসা পাওয়া একজন ব্যক্তি প্রতি ১৮০ দিনের মধ্যে ৯০ দিনের বেশি তুরস্কে অবস্থান করতে পারবে না। এর থেকে বেশি সময় তুরস্কে অবস্থান করতে হলে অই ব্যক্তিকে ‘স্বল্প মেয়াদে বসবাসের অনুমতি’ নিতে হবে।
৪. ভিসা পাওয়া ব্যক্তিকে তুরস্ক ভ্রমণের সময় ইন্সুরেন্স করিয়ে নিতে হবে। ৫. কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী অথবা অফিসিয়াল পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি নাগরিকদের তুরস্ক ভ্রমণের জন্য ভিসার প্রয়োজন নেই। তবে সাধারণ পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিদের তুরস্ক ভ্রমণে ভিসার প্রয়োজন হবে।
তবে কারও যদি সেনজেন ভিসা থাকে আর সেই ভিসার যদি মেয়াদ থাকে তাহলে সেই ভিসা দিয়েও তুরস্ক ভ্রমণ করতে পারবেন একজন বাংলাদেশি। কিন্তু যদি সেনজেন ভিসা না থাকলে তাহলে আবেদনকারীকে এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অথবা আয়ারল্যান্ডে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
শর্তগুলো পূরণ সাপেক্ষে একজন আবেদনকারীকে প্রাথমিক পর্যায়ে এক মাস মেয়াদী ‘সিঙ্গেল-এন্ট্রি’ ভিসা দেয়া হবে। বিস্তারিত জানতে- www.konsolosluk.gov.tr
তুরস্কের সিগনেচার ট্যুরিস্ট স্পট, যেগুলোতে না গেলেই নয়:
১. হাজিয়া সোফিয়া: এটি সম্ভবত তুরস্কের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটক আকর্ষণীয় স্থান এবং বিশ্বের প্রাচীনতম ভবনগুলোর একটি। ষষ্ঠ শতকে বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান এ ভবনটি মূলত অর্থডক্স গীর্জা হিসেবে নির্মাণ করেন, যা পরবর্তীকালে মসজিদে রুপান্তর করা হয়।
বর্তমানে এটি একটি মিউজিয়াম হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এর অসাধারণ স্থাপত্য এবং বাইজেন্টাইন ও মুসলিম অলংকরণের সাজসজ্জা দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে। মধ্যযুগের বিস্ময়ে তুরস্কের হাজিয়া-সোফিয়া মসজিদ এই বৃহত্তম শহর ইস্তানবুলেই অবস্থিত।
২. ব্লু মস্ক (সুলতান আহমেদ মস্ক): হাজিয়া সোফিয়া থেকে হেটেই চলে আসতে পারবেন তুরস্কের আরেকটি মন ভুলানো স্থাপত্য- ব্লু মস্কে। ইস্তাম্বুল শহরের চমৎকার স্থাপত্যশৈলী ও ৬টি মিনারের সুলতান আহমেদ মসজিদ বা নীল মসজিদটি বাইরে থেকেই মুগ্ধতার সৃষ্টি করে। এটি তুরস্কের আরেকটি পর্যটক আকর্ষণের স্থান।
মসজিদের অভ্যন্তরের দেয়াল নীল রঙের টাইলস দিয়ে সুসজ্জিত বলে মসজিদটি ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদ নামে পরিচিত।
৩. ইফেসাস: তুরস্কের জনপ্রিয় স্থানগুলোর একটি ইফেসাস যা সেলকাকের নিকট অবস্থিত। ইস্তানবুল বা আনকারা, যেখানেই থাকেন না কেন, আপনার লোকেশন থেকে এটি বেশ দূরে। তাই সরাসরি ফ্লাই করে আসাই ভালো।
বিশ্বের সেরা গ্রীক ও রোমান ধ্বংসাবশেষের কিছু অংশ এখানে সংরক্ষিত আছে। প্রাচীন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি এই ইফেসাস শহরটি। ইফেসাসের কিছু আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে লাইব্রেরী অফ সেলসিয়াস এবং ট্যাম্পল অফ হেড্রিয়ান এবং প্রাচীন থিয়েটার।
এখানে আরও রয়েছে প্রাচীন মন্দির আর্টেমিসের মন্দির, পাহাড়ের ওপর ঈসা বে মসজিদ, অটোমান এস্টেট, গ্রান্ড দুর্গ, ভার্জিন মেরির ভবন, আরো অনেক পুরনো ঐতিহাসিক ভবন।
৪. কাপাদ্দোসিয়া: মোসেন সময়কালে ভলকানোর অগ্ন্যোৎপাতে জন্ম নেয়া প্রাকৃতিক শিলা এবং অনন্য ঐতিহাসিক শিল্পকর্মের জন্য বিখ্যাত। এ ভূগর্ভস্থ শহরটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে বেশ আগেই। কাপাদ্দোসিয়ায় সবচেয়ে বড় পর্যটক আকর্ষণ হলো বেলুন ট্যুর। ভূপৃষ্ঠ থেকে হাজার ফুট ওপরে এক-দেড় ঘন্টার জন্য ভেসে বেড়ানো যায় এখানে।
কাপাদ্দোসিয়ার বেলুন ভ্রমণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে দেশ বিদেশের পর্যটকেরা
এছাড়াও তুরস্কের আরো কিছু আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে – নমরুদের পাহাড়, ট্রয়, বোদ্রাম ক্যাসেল, পামুকালে, পাতারা বীচ, এস্পেন্ডোস থিয়েটার, অলোডেনিজ, বেসিলিকা সিস্টারন ইত্যাদি।
আরএম/